কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বেতন বাড়ায় অর্থনীতির বিপদ দেখছে রেটিং সংস্থা। কর্মী নেতাদের আবার ক্ষোভ, এত কম পরিমাণে বেতন কেন বাড়বে!
সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ জমা পড়ার পরের দিন থেকেই তা কার্যকর করার কাজ শুরু করে দিল অরুণ জেটলির অর্থ মন্ত্রক। অর্থসচিব তথা ব্যয় বিভাগের সচিব রতন ওয়াটালের নেতৃত্বে পৃথক একটি বিভাগ খোলা হয়েছে। বেতন কমিশনের সুপারিশের ক্ষেত্রে কারও কোনও অভিযোগ থাকলে, সেটাও খতিয়ে দেখবে এই বিভাগ।
সঙ্ঘ-পরিবারের শ্রমিক সংগঠন বিএমএস সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ নিয়ে প্রবল আপত্তি তুলেছে। বিএমএসের সাধারণ সম্পাদক ব্রিজেশ উপাধ্যায়ের যুক্তি, ‘‘মাত্র ১৬% বেতন বাড়ছে। তা ছাড়া সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতনের মধ্যেও বিস্তর ফারাক।’’ সপ্তম বেতন কমিশন মূল বেতন ১৪.২৭% বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে। সর্বনিম্ন বেতন যেখানে ১৮,০০০ টাকা, সেখানে সর্বোচ্চ স্তরে, সচিব পদের বেতন ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা করার সুপারিশ করা হয়েছে। গ্র্যাচুইটির ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানোর সুফলও উচ্চপদস্থ অফিসাররা পাবেন বলে ব্রিজেশের যুক্তি। তাঁর মতে, এর ফলে সরকারি চাকরির বদলে শিক্ষিত যুবক-যুবতীরা অন্য চাকরির দিকে ঝুঁকবেন। এআইটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক গুরুদাস দাশগুপ্তেরও অভিযোগ, সাম্প্রতিক অতীতে এত কম হারে বেতন কখনও বাড়েনি।
কর্মচারী সংগঠনগুলি যখন কম হারে বেতন বৃদ্ধির অভিযোগ তুলছে, তখন রেটিং এজেন্সি ‘ফিচ’ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে— বেতন, ভাতা ও পেনশন বাবদ মোদী সরকারের খরচ এক ধাক্কায় ২৩% বেড়ে গেলে রাজকোষ ঘাটতি লাগামছাড়া হতে পারে। যদি না সরকার ব্যয় ছাঁটাই অথবা রাজস্ব আয় বাড়ানোর পথে হাঁটে, তা হলে আগামী অর্থবর্ষে রাজকোষ ঘাটতি ৩.৫%-এ কমিয়ে আনার লক্ষ্যপূরণও কঠিন হবে। কারণ ১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি আর্থিক বোঝা সরকারের মাথায় চাপবে। ‘ফিচ’ ভারতের অর্থনীতিকে ‘বিবিবি-মাইনাস’ রেটিং দেয়। ওই সংস্থার যুক্তি, যে সব দেশ এই রেটিং পায়, তার মধ্যে ভারত সরকারের ঋণের হার সব থেকে বেশি।
রেটিং এজেন্সিগুলির আশঙ্কা দূর করতে আজ আসরে নেমেছেন অর্থ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী জয়ন্ত সিন্হা। তাঁর যুক্তি, রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা কঠিন হবে না। কারণ সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করার বিষয়টি হিসেব করেই আগামী অর্থবর্ষে রাজকোষ ঘাটতি কমিয়ে আনার রূপরেখা তৈরি হয়েছিল। জয়ন্তর দাবি, এ জন্য কোনও ব্যয় ছাঁটাই বা করের হার বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না। অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা আবার বলছেন, বেতন বাড়ার ফলে এমনিতেই পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতে খরচ বাড়বে। কিন্তু পরিকল্পনা খাতে ব্যয়, এমনকী মূলধনী ব্যয়ও কমানো কঠিন হবে। কারণ তেমন বেসরকারি বিনিয়োগ না-আসায় আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়াতে সরকারি বিনিয়োগই ভরসা। ওই খাতে ব্যয় ছাঁটাই হলে অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy