Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Digital currency

Union Budget 2022-23: ডিজিটাল মুদ্রা শুধু রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কেরই, স্পষ্ট ঘোষণা অর্থমন্ত্রীর

শুধু কর বসানোই নয়, ডিজিটাল সম্পদ সম্পদ হস্তান্তরে লোকসান হলে তা অন্য আয়ের সাপেক্ষে সরিয়ে রাখা যাবে না বলেও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:১৭
Share: Save:

ডিজিটাল মুদ্রা আনবে একমাত্র রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। বাজেটে এ কথা স্পষ্ট ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। জানালেন, আগামী অর্থবর্ষে ব্লক-চেন প্রযুক্তিতে এই মুদ্রা আনা হবে। যার নাম পরে ঘোষণা করা হবে। তার বাইরে যাবতীয় ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ডিজিটাল সম্পদকে দেখা হবে শুধুমাত্র সম্পত্তি হিসেবেই। যার লেনদেনে বসবে ৩০% কর। সঙ্গে কাটা হবে ১% উৎস করও (টিডিএস)।

এ দিন বাজেট পেশের পরে নির্মলা সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘কোনও মুদ্রাকে তখনই মুদ্রা বলা হবে, যদি তা শীর্ষ ব্যাঙ্ক বাজারে ছাড়ে। তা সে ক্রিপ্টোকারেন্সি-ই হোক না কেন। তার বাইরে যেগুলিকে আমরা মুদ্রা বলি, সেগুলি আদতে মুদ্রা নয়। আমরা মুদ্রায় কর বসাচ্ছি না। ...আরবিআই ডিজিটাল কারেন্সি আনবে। এ ছাড়া কোনও ব্যক্তির তৈরি করা যাবতীয় ডিজিটাল মুদ্রা সম্পত্তি হিসেবে পরিচিত হবে এবং তার হাতবদলে কর বসবে ৩০% হারে।’’

ডিজিটাল মুদ্রা

• আগামী অর্থবর্ষেই ব্লক-চেন প্রযুক্তির ডিজিটাল মুদ্রা আনবে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। ব্যবহার লেনদেনে।

• ক্রিপ্টোকারেন্সি-সহ বাকি সব শুধু সম্পদ। লেনদেনে ব্যবহার নয়। বরং হাতবদলে ৩০% কর।

• এ ধরনের সম্পদ থেকে আয় হিসাবের ক্ষেত্রে খরচ বা ভাতায় করছাড়ের সুবিধা নেই।

• জুলাই থেকে বছরে ১০,০০০ টাকার বেশি ডিজিটাল সম্পদ কেনা-বেচায় ১% উৎস কর (টিডিএস)। সর্বোচ্চ অঙ্ক ৫০,০০০ টাকা।

• উপহার হিসাবে এই সম্পদ দিলে, কর দিতে হবে প্রাপককে।

শুধু কর বসানোই নয়, ডিজিটাল সম্পদ সম্পদ হস্তান্তরে লোকসান হলে তা অন্য আয়ের সাপেক্ষে সরিয়ে রাখা যাবে না বলেও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বলেছেন, এ ধরনের সম্পদ থেকে আয় হিসেবের ক্ষেত্রে খরচ বা ভাতায় কোনও কর ছাড়ের সুবিধা মিলবে না। উপহার হিসেবে পেলেও দিতে হবে কর। পাশাপাশি তিনি বলেন, ক্রিপ্টোকারেন্সি-সহ ডিজিটাল সম্পদকে নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনতে বিল তৈরির জন্য সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু তাঁর বক্তব্য, ‘‘তার জন্য অপেক্ষা করব কেন?’’

ক্রিপ্টোকারেন্সি কী

• অনলাইন লেনদেনে ব্যবহারের জন্য এক ধরনের মুদ্রা। নেটের বাইরে যার অস্তিত্ব নেই।

• এতে লেনদেনকারীর পরিচয় জানা যায় না। বদলে ব্লক-চেন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি হয় সঙ্কেতলিপি।

• ব্যবহার করা যায় মোবাইল, ট্যাবলেট, কম্পিউটার মারফত।

• ওয়ালেটের আইডি এবং পাসওয়ার্ড থাকে, যা ব্যবহার করে তা খুলতে হয়।

• নির্দিষ্ট এক্সচেঞ্জে ডিজিটাল ওয়ালেট মারফত এই মুদ্রা কিনতে হয়, সেখানেই তা জমা থাকে।

• বাজারে লেনদেন (ট্রেডিং) করতে চাইলে পরিচয় গোপন রাখা শক্ত।

গত কয়েক বছরে ভারত-সহ বিশ্ব জুড়ে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে বিটকয়েন, ইথারিয়ামের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ডিজিটাল ছবি, স্থায়ী সম্পদ, এমনকি নেটের ডোমেন নাম, বিখ্যাত ব্যক্তির টুইট-এর মতো ডিজিটাল সম্পদের লেনদেন। যার জেরে সেগুলিকে নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা এবং তাতে কর বসানোর দাবি উঠছে। এমনকি নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বলেছিলেন, ‘‘(ডিজিটাল মুদ্রা) যাতে ভুল লোকের হাতে না পড়ে এবং যুবসমাজকে ভুল পথে না নিয়ে যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।’’ এর পরেই আশা ছিল সংসদের শীতকালীন বা বাজেট অধিবেশনে হয়তো ক্রিপ্টো বিল আনবে কেন্দ্র। কিন্তু সেই পথে না-হেঁটে মঙ্গলবার বাজেটে অর্থ বিলের মাধ্যমে সরাসরি ডিজিটাল সম্পদে কর বসানোর কথা জানাল মোদী সরকার।

ডিজিটাল সম্পদ কী

• সোজায় কথায় ডিজিটাল মাধ্যমে থাকা যে কোনও সম্পদ। পোশাকি নাম নন ফানজেবল টোকেন।

• এটি হতে পারে ডিজিটাল ছবি, কোনও স্পোর্টস কার্ড ইত্যাদি।

• ব্লক-চেন প্রযুক্তিতে রাখা থাকে। করা যায় লেনদেন।

• একটি কোডের মাধ্যমে একটি মাত্র সম্পদই থাকতে পারে। অর্থাৎ, ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো তার প্রতিলিপি তৈরি করা যায় না।

সংক্ষেপে ব্লক-চেন

• নির্দিষ্ট সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের কম্পিউটার থেকে হওয়া ডিজিটাল মুদ্রা বা সম্পদ লেনদেন নিয়ে তৈরি হয় এক একটি ব্লক।

• এই ব্লকগুলির হিসাব যে ‘নেট-খাতায়’ (লেজ়ার) লেখা থাকে, তাকেই বলে ‘ব্লক-চেন’।

• লেনদেনের যে কোনও সময়ে ব্লক-চেনই বলে দেয় কোথা থেকে মুদ্রা বা সম্পদ কোন অ্যাকাউন্টে গিয়েছে।

• তা বদলানো হলেও, ধরা পড়বে সঙ্গে সঙ্গেই। এ ভাবে লেনদেনের হিসেব রাখার এই পুরো প্রক্রিয়াকে বলে ‘মাইনিং’।

সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জগুলি। উপদেষ্টা সংস্থা অ্যাককুইল’-এর এগ্‌জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর রাজর্ষি দাশগুপ্তের মতে, বাজেট ঘোষণার হাত ধরে সম্পত্তি হিসেবে ডিজিটাল সম্পদকে মান্যতা দেওয়ার পথে এক ধাপ এগোল মোদী সরকার। টিডিএসের সিদ্ধান্তে ভারতে লেনদেন কিছুটা ধাক্কা খেতে পারে ঠিকই। কিন্তু এ দিনের ঘোষণায় করের বিষয়টিতে স্বচ্ছতা আসবে। তবে কোন খাতে এই কর হিসাব হবে, তা নিয়ে এখনও প্রশ্ন থাকছে বলে মনে করছেন অনেকে। তাঁদের মতে, আগামী দিনে বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE