Advertisement
E-Paper

শিশু অপরাধ নিয়ে রিপোর্ট অসমে

গৃহহীন বা নিরক্ষর নয়, পরিবারের সঙ্গে থাকা ও স্কুলপড়ুয়া নাবালকরাই অপরাধে বেশি জড়াচ্ছে— অসমে শিশু অপরাধ নিয়ে এক রিপোর্টে এমনই তথ্য সামনে এসেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৬ ০৩:৪৬

গৃহহীন বা নিরক্ষর নয়, পরিবারের সঙ্গে থাকা ও স্কুলপড়ুয়া নাবালকরাই অপরাধে বেশি জড়াচ্ছে— অসমে শিশু অপরাধ নিয়ে এক রিপোর্টে এমনই তথ্য সামনে এসেছে।

গৌহাটি হাইকোর্ট, ইউনিসেফ, রাজ্য শিশু অধিকার সোসাইটি, রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের যৌথ উদ্যোগে ‘জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট (কেয়ার অ্যান্ড প্রোটেকশন), ২০১৫’ নিয়ে দু’দিনের আলোচনাসভা বসেছিল গুয়াহাটিতে। সেখানেই ওই তথ্য প্রকাশিত হয়। আইন বিভাগের তরফে জানানো হয়, জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড ও চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির কাছে এখনও ২ হাজারের বেশি মামলা ঝুলছে। ওই আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মদন বি লাকুর।

২০১৪ সাল পর্যন্ত হওয়া সমীক্ষা জানিয়েছে, ৫৫৩টি শিশু-অপরাধীর মধ্যে ১৬৩ জন নিরক্ষর। ২৪০ জনের প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ রয়েছে। আটক শিশু অপরাধীদের মধ্যে ৮৯ শতাংশই বাবা-মা বা অভিভাবকদের সঙ্গে থাকে। তাদের মধ্যে ৭৬ শতাংশ দরিদ্র পরিবারের। যাদের বার্ষিক আয় ২৫ হাজারের কম। ধরা পড়া শিশুদের মধ্যে ৯৭ শতাংশই প্রথম বার অপরাধ করেছে।

পুলিশ-বিচারক ও সমাজবিদদের মতে, পরিবারের সঙ্গে থাকা শিশুদেরও অপরাধপ্রবণতা চিন্তার বিষয়। তা থেকে বোঝা যাচ্ছে, বাচ্চাদের যে মানসিক, দৈহিক ও পারিবারিক সহায়তা পরিবার থেকে মেলে, তা ওই সব ক্ষেত্রে পাওয়া যায়নি। দারিদ্র্যের কারণে পরিবারগুলিতে নীতিবোধের অভাব ও নিরাপত্তাহীনতা জন্ম নিচ্ছে। যা ছড়িয়ে যাচ্ছে শিশুদের মধ্যেও।

সমীক্ষক শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে, বাচ্চাদের প্রথম ও লঘু অপরাধগুলিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না পরিবারগুলি। তাদের সঠিক পথ দেখানোর মতো মানুষেরও অভাব রয়েছে পরিবার ও প্রতিবেশীদের মধ্যে। ফলে দ্রুত বাচ্চারা খারাপ সংশ্রবে পড়ছে। নেশার কবলে পড়ছে। তারা নিজেদের মতো করে ভাল-মন্দের মানদণ্ড তৈরি করে নিচ্ছে। গ্রেফতার হওয়া ও সংশোধনাগারে থাকা শিশুদের পুনর্বাসন ও সামাজিকীকরণ নিয়ে আইনে বলা থাকলেও বাস্তব ক্ষেত্রে জেলফেরত শিশুদের সমাজে ভাল চোখে দেখা হয় না। তাদের সহানুভূতির সঙ্গে গ্রহণ করা হয় না। ফলে ঘরে ফিরেও তারা অন্ধকার জীবনের সঙ্গ কাটাতে পারে না।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, অসমের জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে ১ হাজার ৬৩২টি ও চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটিতে ৪৯৪টি মামলা ঝুলছে। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি বকেয়া মামলা রয়েছে নগাঁও (২৪৪), কোকরাঝাড় (১৬২), বরপেটা (১০৭), গোয়ালপাড়া (১০৪) ও ধুবুরি (৯৭) জেলায়।

বিচারপতি লাকুর বলেন, “বিচারপ্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ার ফলে নাবালকদেরও অনেক বেশি দিন সংশোধনাগারে থাকতে হয়। যা তাদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।” তিনি বোর্ড ও কমিটির সদস্যদের আরও বেশি সংবেদনশীল ও শিশুপ্রেমী হওয়ার আবেদন জানান। বিচারপতির কথায়, ‘‘শিশুদের ভাল পথে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সমাজের সব শ্রেণির মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।’’

গৌহাটি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অজিত সিংহ বলেন, “বকেয়া মামলার সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত না হলেও, আমাদের যত দ্রুত সম্ভব মামলাগুলি মিটিয়ে ফেলতে হবে।”

রাজ্যের মুখ্যসচিব ভি কে পিপারসেনিয়া, শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন রুনুমি গগৈ, ইউনিসেফের প্রধান ফিল্ড অফিসার তুষার রাণে, অসমের বিভিন্ন জেলার দায়রা বিচারপতি, জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের প্রধান ম্যাজিস্ট্রেট এবং নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, অরুণাচলপ্রদেশের আইন বিভাগের কর্তা এবং পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা এই আলোচনায় অংশ নেন।

child labor child crime
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy