Advertisement
০২ মে ২০২৪

১৫ দিনের মধ্যে শুরু কাছাড়ের রাস্তা সারাই

এক পক্ষ কালের মধ্যেই কাছাড়ের সব রাস্তায় সারাইয়ের কাজ শুরু হবে। ৫০ কোটি টাকার মঞ্জুরি এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। বর্ষা আসার আগেই ঝকঝকে হয়ে উঠবে গোটা কাছাড়। এমনটাই দাবি পূর্ত বিভাগের এগিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মৃন্ময় নাথের।

উত্তম সাহা
শিলচর শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৩১
Share: Save:

এক পক্ষ কালের মধ্যেই কাছাড়ের সব রাস্তায় সারাইয়ের কাজ শুরু হবে। ৫০ কোটি টাকার মঞ্জুরি এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। বর্ষা আসার আগেই ঝকঝকে হয়ে উঠবে গোটা কাছাড়। এমনটাই দাবি পূর্ত বিভাগের এগিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মৃন্ময় নাথের।

শপথ নিয়েই নিজের জেলার রাস্তাঘাট নিয়ে চাপের মুখে পূর্তমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য। মন্ত্রিসভা রদবদলে তাঁকে এই দফতরে রাখা হবে কিনা, তা নিয়েও চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। পরিমলবাবুর কাজকর্ম নিয়ে অসন্তোষ চেপে রাখতে পারেননি প্রবীণ বিজেপি নেতা, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থও। জল্পনা চলছে, শিলচরের বিধায়ক দিলীপকুমার পালকে চাপে রাখতেই শহরের রাস্তাঘাট সংস্কারে গড়িমসি করছেন পরিমলবাবু।

ওই সব জল্পনা-কল্পনায় ইতি টেনে পূর্ত বিভাগ আজ জানিয়ে দিয়েছে, আগামী ৩ মাস পুরোমাত্রায় কাজ হবে। এ বারের প্রলম্বিত বর্ষার কারণে তাঁদের হাতে সময় বড় কম। তবে এই সময়টুকুকেই একশো শতাংশ কাজে লাগাতে চান পূর্ত দফতরের পরিমল-ব্রিগেড। মৃন্ময়বাবু আশাবাদী, কিছু দিনের মধ্যেই তাঁদের মন্ত্রীর উপর আসা যাবতীয় অপবাদ মুছে যাবে। তাঁর কথায়, ‘‘অসমের মতো বৃহৎ রাজ্যে পূর্ত দফতরের কাজকর্ম বুঝে নেওয়া সহজ কথা নয়। ফলে ৬-৭ মাস কেটে গেল বলেই রিপোর্ট কার্ডে লাল দাগ পড়ে যাবে, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। অন্তত কাছাড়ের মানুষের সমস্ত অভিযোগ শীঘ্রই মিটে যাবে।’’ মৃন্ময়বাবু বলেন, বর্তমানে বিধানসভার ভারপ্রাপ্ত, ডেপুটি স্পিকার তথা শিলচরের বিধায়ক দিলীপকুমার পালও বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। জেলাশাসক এস বিশ্বনাথনের তৎপরতার কথাও উল্লেখ করেন মৃণ্ময়বাবু। জানান, ‘‘বকেয়ার একাংশ মিটিয়ে দেওয়ায় ঠিকাদারদের কাছ থেকেও ভালো সাড়া মিলছে।’’ কোথায় কী ভাবে কাজ হতে চলেছে, তার একটি পরিকল্পনাও তিনি

সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। অ্যাসিস্ট্যান্ট এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার, জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ারদের পাশে বসিয়ে মৃন্ময়বাবু বলেন, অসম রোড মেনটেনান্স ফান্ড থেকে ১৮ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকার মঞ্জুরি মিলেছে। ১৫ দিনের মধ্যে ওই টাকার সব ক’টি কাজ শুরু হবে। এর মধ্যে রয়েছে কলেজ রোডের কাজও। হসপিটাল রোড ও বিবেকানন্দ রোডের মধ্যবর্তী এই ১.৩ কিলোমিটার রাস্তায় ১ কোটি ৪ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা খরচ করা হবে। শিলচর শহরে পরিমলবাবু, দিলীপবাবুদের সব চেয়ে বেশি সমালোচনার মুখে পড়তে হয় কলেজ রোড এবং বৃহত্তর মালুগ্রামের বেহাল রাস্তাঘাটের জন্য। কলেজ রোডের মঞ্জুরি চলে এলেও মালুগ্রাম-ঘনিয়ালা-ইটখলার রাস্তার জন্য কোনও প্রস্তাবই এ পর্যন্ত সরকারের কাছে যায়নি। এলাকাবাসী আন্দোলনে নামায় জেলাশাসকের নির্দেশে ২ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকার প্রোজেক্ট রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। জেলাশাসক বিশ্বনাথন এই রাস্তার জন্য পূর্ত বিভাগের কমিশনার তথা সচিব মোহন বড়োর সঙ্গে কথা বলেছেন। দু’-একদিনের মধ্যেই প্রোজেক্ট রিপোর্টটি পূর্ত সচিবের কাছে পৌঁছে যাবে। পরিমল শুক্লবৈদ্য, দিলীপকুমার পালও এই রাস্তা দ্রুত সংস্কারে আগ্রহী বলে মৃন্ময়বাবু জানান।

কলেজ রোড এবং বৃহত্তর মালুগ্রাম—দুই রাস্তাতেই সামান্য তিন অংশে কাজ হয়েছে। কংক্রিটের ব্লক বসেছে। এর মধ্যে ভোটের ঠিক আগে মালুগ্রাম, ঘনিয়ালার রাস্তায় যে দু’টি অংশে কাজ হয়েছে, সেগুলির কোনও সরকারি নির্দেশ নেই। কলেজ রোডের একাংশের কাজে মঞ্জুরি থাকলেও সরকার বদলের ফলে ‘ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ পকী পথ প্রকল্প’ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে কোথাও কোনও বিল মেটানো হয়নি। ওই তিনটি আংশিক কাজের টাকা কোথা থেকে মেটানো হবে, তা নিয়ে সমস্যায় রয়েছেন মৃন্ময়বাবুরা।

পূর্ত কর্তারা জানান, প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য ২ কোটি টাকা করে মঞ্জুর হয়েছে। শিলচরের বিধায়ক তাঁর আসনের জন্য ৪টি রাস্তা তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন। সেগুলি হল: চেংকুড়ি রোডে ১.২৮ কিলোমিটার রাস্তার জন্য ৬০ লক্ষ টাকা, শিব কলোনি খাল-বাঁধের উপরের রাস্তার জন্য ৪০ লক্ষ টাকা, গোপাল আখড়া রোডে ৬০ লক্ষ টাকা এবং বিলপারের ইউ এস দত্ত রোডের জন্য ৩০ লক্ষ টাকা।

কিছু দিন আগে আরও দেড় কোটি টাকা করে প্রতিটি বিধানসভা আসনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ওই টাকায়ও কাছাড়ের ৭টি আসনে সাড়ে ১০ কোটি টাকার এস্টিমেট পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়াও মন্ত্রীর জেলা বলে আরও ২১ কোটি টাকা বাড়তি চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৪ কোটি টাকা শিলচর আসনের রাস্তাঘাটের জন্য। মৃন্ময়বাবু আশা করছেন, বাকি টাকা আসতে কিছু দিন সময় লাগলেও শিলচরের অতিরিক্ত অর্থের মঞ্জুরি আদায়ে বেশি সময় লাগবে না।

সমস্যা রয়েছে শিলচরের কাঠাল রোডেও। পূর্তকর্তারা বলেন, সেখানে প্রথম ১.৩ কিলোমিটার অংশে শিলচর ব্লকের একটি তহবিল থেকে সংস্কার করা হচ্ছে। পরের ২.৪ কিলোমিটার কাজ করাচ্ছে নাবার্ড। বাকিটা পরবর্তী সময়ে পূর্ত বিভাগ করবে।

শুধু কি আর শিলচর! পূর্তমন্ত্রীর নিজের আসন ধলাইয়ের বিভিন্ন রাস্তাও চলাচলের যোগ্য ছিল না। মৃন্ময়বাবুরা সেগুলিতেও যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করে চলেছেন। কাবুগঞ্জ-মতিনগর সংযোগকারী ঝুলন সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। মঞ্জুরি মিলেছে নতুনবাজার-আঠারোটিলা রাস্তাতেও। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে ভাগাবাজার-বিদ্যারতনপুর-চাটাইপুর সড়কেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cachar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE