Advertisement
E-Paper

‘যাদের নাম তালিকায় নেই, তারা অনুপ্রবেশকারী’

কংগ্রেস-সহ সব বিরোধী দলের মতে, বিভাজনের রাজনীতি করতে এটা মেরুকরণের তাস। কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারির প্রশ্ন, ‘‘কিসের ভিত্তিতে ৪০ লক্ষের সকলকেই অনুপ্রবেশকারী বলে চিহ্নিত করলেন বিজেপি সভাপতি?’’ এর জবাব দেওয়ার দায় নেননি অমিত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৫৯
বিজেপির সদর দফতরে অমিত শাহ।

বিজেপির সদর দফতরে অমিত শাহ।

কোনও লুকোছাপা রাখলেন না অমিত শাহ। অসমের নাগরিক পঞ্জির চূড়ান্ত খসড়া থেকে বাদ পড়া ৪০ লক্ষ মানুষকে আজ ‘বেআইনি অনুপ্রবেশকারী’ বলে দাগিয়ে দিলেন বিজেপি সভাপতি। এবং ২০১৯-এর কথা মাথায় রেখে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের’ বিরুদ্ধে মানুষকে খেপিয়ে তোলার পথে হাঁটলেন শুরু থেকেই। মন্ত্রীদের মতো চূড়ান্ত তালিকায় ‘নাম তোলার সুযোগ এখনও রয়েছে’ বলে আশ্বাস দেওয়ার ধার না-ঘেঁষে তাঁর স্পষ্ট ঘোষণা, ‘‘যাদের নাম তালিকায় নেই, তারা অনুপ্রবেশকারী।’’

কংগ্রেস-সহ সব বিরোধী দলের মতে, বিভাজনের রাজনীতি করতে এটা মেরুকরণের তাস। কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারির প্রশ্ন, ‘‘কিসের ভিত্তিতে ৪০ লক্ষের সকলকেই অনুপ্রবেশকারী বলে চিহ্নিত করলেন বিজেপি সভাপতি?’’ এর জবাব দেওয়ার দায় নেননি অমিত।

২০১৪-র লোকসভা ভোটে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী তাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েই বিজেপি ক্ষমতায় এসেছিল। গত চার বছরে অবশ্য মোদী সরকারের মুখে শব্দটা শোনা যায়নি। কিন্তু অসমে ক্ষমতায় আসতে ওই একই অস্ত্র প্রয়োগ করেছিল বিজেপি। এ বার ২০১৯-এর আগে আস্তিন থেকে পুরনো অস্ত্র বার করলেন বিজেপি সভাপতি। অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে অসমের মানুষের ক্ষোভ উস্কে দিতে অমিতের মন্তব্য, ‘‘লোকে মানবাধিকারের কথা বলে। অসমিয়াদের মানবাধিকার নেই? তাঁদের রোজগারের সুযোগ যখন অনুপ্রবেশকারীরা কেড়ে নেয়, তখন মানবাধিকারের প্রশ্ন আসে না!’’ বিজেপি সভাপতির আরও প্রশ্ন, ‘‘অনুপ্রবেশকারীদের মদত দিলে দেশের সীমান্ত ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা কী ভাবে নিশ্চিত হবে?’’

বিরোধীরা বলছেন, বিজেপি সভাপতির এই উস্কানি শুধু অসমে সীমাবদ্ধ থাকবে না। দেশের অন্য রাজ্যেও বাংলাভাষী মুসলিমদের বাংলাদেশি বলে সন্দেহ করা হবে। অন্য রাজ্যে কাজ করতে গেলে তাঁরা স্থানীয় মানুষের চাকরিতে ভাগ বসাচ্ছেন বলে আঙুল তোলা হবে। আর বিজেপি এই মেরুকরণই চাইছে।

মোদী সরকার যে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের’ মধ্যে হিন্দুদের আশ্রয় দিতে চায়, মুসলিমদের নয়, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল আগেই। শুধু মুসলিমদের বাদ দিয়ে, হিন্দু-বৌদ্ধ-শিখদের ‘শরণার্থী’ তকমা দিয়ে নাগরিকত্ব দিতে নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের বিলও এনেছে সরকার। বিজেপি মুসলিম বাদে বাকি বাংলাদেশিদের শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় দিতে চাইলেও নাগরিক পঞ্জি থেকে বাদ পড়া ৪০ লক্ষ মানুষের কত জন হিন্দু বা মুসলিম, সেই তথ্য এখনও প্রকাশ করা হয়নি। জল্পনা চলছে, এঁদের অধিকাংশ হিন্দু। কিন্তু তা নিয়ে প্রশ্ন উড়িয়ে দিয়ে অমিতের দাবি, ‘‘এমনটা নয়। তালিকা প্রকাশ হলে দেখতে পারবেন, কত জন হিন্দু।’’

মুসলিমদের যে শরণার্থী হিসেবে জায়গা দেওয়ার প্রশ্ন নেই, তা স্পষ্ট করে দিয়ে অমিত বলেন, ‘‘যাঁরা নিজের অস্তিত্ব বাঁচাতে, ধর্ম বাঁচাতে এক দেশ থেকে অন্য দেশে আসেন, তাঁরা শরণার্থী। কিন্তু যে রোজগার বা অন্য কারণে বেআইনি ভাবে ঢোকে, সে অনুপ্রবেশকারী। বিজেপির মনে এ নিয়ে কোনও দ্বিধা নেই।’’ সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিমের প্রশ্ন, ‘‘নাগরিকত্ব কি ধর্ম, ভাষার ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে? এ তো কোনও রাজ্যের নাগরিকত্ব নয়। দেশের নাগরিকত্ব।’’

কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘অমিত শাহও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতিতে ভোট কুড়োতে চাইছেন। এই রাজনীতিকে ইতিহাস ক্ষমা করবে না।’’

Amit Shah BJP Assam Draft Citizens' List
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy