Advertisement
E-Paper

অনিলের স্ত্রীর আত্মসমর্পণ, তল্লাশি চালিয়ে মিলল অস্ত্র

স্বামী গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই বেপাত্তা ছিলেন কুখ্যাত গাড়ি চোর অনিল চৌহানের স্ত্রী রীতা চৌহান। গত কাল রাতে আচমকাই তিনি হাজির হন দিসপুর থানায়। আত্মসমর্পণ করলেন পুলিশের কাছে। এবং সেই রাতেই তাঁকে জেরা করে অনিলের মির্জার ঘাঁটিতে তল্লাশি চালাল পুলিশ।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩২

স্বামী গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই বেপাত্তা ছিলেন কুখ্যাত গাড়ি চোর অনিল চৌহানের স্ত্রী রীতা চৌহান। গত কাল রাতে আচমকাই তিনি হাজির হন দিসপুর থানায়। আত্মসমর্পণ করলেন পুলিশের কাছে। এবং সেই রাতেই তাঁকে জেরা করে অনিলের মির্জার ঘাঁটিতে তল্লাশি চালাল পুলিশ। মিলল বেশ কিছু অস্ত্র ও বিভিন্ন গাড়ির বহু নম্বর প্লেট। জানা গেল, শ্বশুরবাড়ির পাড়ায় অনিল সমাজসেবী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। পাশাপাশি, অনিলকে জেরা করে গত রাতেই তেজপুরে পুলিশ গাড়িচোরদের একটি দলের উপর চড়াও হয়। পুলিশের সঙ্গে তাদের গুলির লড়াইয়ে এক গাড়িচোর জখম হয়। দেরগাঁও ও মঙ্গলদৈয়ে গ্রেফতার হয়েছে আরও আট গাড়ি চোর।

অনিল চৌহানের তৃতীয় স্ত্রী রীতা চৌহানের মাধ্যমেই অনিলের সঙ্গে তাঁর আলাপ--এমনটাই বারবার দাবি করেছেন ধৃত কংগ্রেস বিধায়ক রুমি নাথ। কংগ্রেস সদস্য এই রীতাকেই তিনি পরপর তিন বছর বিধানসভায় গাড়ির পাস দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছিলেন। অনিলের গুয়াহাটির প্রাসাদোপম বাড়িতেও অনিল-রীতার সঙ্গে রুমি ও তাঁর দ্বিতীয় স্বামী জ্যাকি জাকিরের ছবি মেলে। জাকির ও রুমি গ্রেফতার হওয়ার পরে পুলিশ স্বাভাবিক ভাবেই ‘মিসিং লিঙ্ক’ রীতার সন্ধানে নামে। পুলিশের বক্তব্য, পালিয়ে থাকা যে কার্যত অসম্ভব, তা বুঝেই গত কাল রাতে রীতা নিজে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।

পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাথমিক জেরায় পুলিশ রীতার কাছ থেকে জানতে পারে, তাঁর বাড়ি কামরূপের মির্জায়। সেখানে লক্ষ্মীনারায়ণ ভবন নামে এক বহুতলে রীতার বাবার নামে অনিল একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়। একটি চুরি যাওয়া গাড়িও সেখানে রয়েছে বলে রীতা পুলিশকে জানায়। এরপর রীতা ও অনিলকে নিয়ে রাতেই ওই ফ্ল্যাটে পুলিশ হানা দেয়। গাড়ি উদ্ধারের পাশাপাশি অনিলের ঘরগুলিতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ দু’টি পিস্তল, একটি ওয়ান শটার, একটি রাইফেল, বেশ কিছু কার্তুজ, ১১ জোড়া নম্বরপ্লেট, গাড়ির অনেক চাবি, বেশ কিছু লাইসেন্স, ব্যাঙ্কের কয়েকটি পাশবই এবং গাড়ি চুরির বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করে। অনিল একটি চিট ফান্ড সংস্থাও চালাত বলেও পুলিশ অভিযোগ পেয়েছে। আজ সন্ধ্যায় ফের ওই বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়।

এ দিকে, দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, ২০০৪ সালে দিল্লিতে গ্রেফতার হওয়া অনিল চৌহানের দ্বিতীয় স্ত্রী গীতাও সম্ভবত অসমেই রয়েছে। অনিলের সঙ্গীদের সন্ধানে পুলিশ শীঘ্রই তেজপুর-নলবাড়ি-যোরহাটেও হানা দেবে। দিল্লি পুলিশের একটি দল অনিলের বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করে ফিরে গিয়েছে। অন্য দিকে, আজ বিকেলে রীতাকে কামরূপ মহানগর সিজেএম আদালতে তোলে পুলিশ। পুলিশ পাঁচ দিনের জন্য রীতার হেফাজত চাইলেও আদালত রীতাকে আপাতত তিন দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে। রীতা ও অনিলকে মুখোমুখি বসিয়ে এখন জেরা চালাচ্ছে পুলিশ। রীতা আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমি নির্দোষ।’’ তিনি দাবি করেন, ‘‘গাড়ি চুরির ব্যবসা চালাতে পুলিশ ও রাজনৈতিক জগতের একাধিক ব্যক্তি অনিলকে সাহায্য করেছেন।’’

অনিলের গ্রেফতার হওয়ার খবরে দিল্লি থেকে যেমন পুলিশের দল গুয়াহাটি এসেছে, তেমনই এই খবরে আশান্বিত হয়ে অসমের বিভিন্ন জেলা থেকে, এমনকী পঞ্জাব থেকেও চুরি হওয়া গাড়ির খোঁজে অনেকে গুয়াহাটি পুলিশের কাছে হাজির হচ্ছেন। আজারা, জালুকবাড়ি থানায় উদ্ধার হওয়া গাড়ি ও নম্বরপ্লেট দেখতে চেয়ে অনেকেই যোগাযোগ করছেন। সবারই আশা, যদি তাঁর চুরি যাওয়া গাড়িটির কোনও হদিশ পাওয়া যায়।

এ দিকে, গাড়ি চুরি মামলায় কংগ্রেসের অস্বস্তি বাড়িয়ে রুমি নাথের পর এ বার আরও এক কংগ্রেস নেতার নাম জড়াল। তিনি আবার কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়কও। বরাকের এই প্রাক্তন বিধায়ক, কার্তিক সেনা সিংহর সম্পর্কে জানা গিয়েছে, রুমি যে চোরাই বিএমডব্লুটি জাকিরকে উপহার দেন, তার জন্য কার্তিক দু’লক্ষ টাকা রুমিকে দিয়েছিলেন। তবে পুলিশ গাড়ি চুরির ঘটনায় কার্তিককে জেরা করার আগেই, আজ কার্তিকের নামে পারিবারিক হিংসার অভিযোগ এনে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁর প্রথম স্ত্রী রীতা সিংহ। তাঁর দাবি, বিবাহ বিচ্ছেদ না করেই কার্তিক ফের বিয়ে করেছেন। তাঁদের চার সন্তানের মধ্যে কনিষ্ঠটিকে জোর করে নিয়েও গিয়েছেন কার্তিক।

গাড়ি চুরি মামলার তদন্তে পুলিশ ইতিমধ্যেই আরও অনেক জায়গায় হানা দিতে শুরু করেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অনিলকে জেরার সূত্রেই এই সব গাড়ি চোরদের সন্ধান তারা পেয়েছে। আজ ভোরে পুলিশের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে জখম হয় আরও এক কুখ্যাত গাড়িচোর, শিবশংকর তামাং। পুলিশ জানায়, দু’টি গাড়ি চুরি করে তামাং ও তার দলবল তেজপুর হয়ে পালাচ্ছিল। পুলিশ টুপিয়া এলাকায় তাদের ধাওয়া করলে, গাড়ি চোররা গুলি চালাতে থাকে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে জখম হয় তামাং। অন্য গাড়িটি নিয়ে অবশ্য বাকি চোরেরা পালায়। গুলিবিদ্ধ শিবশংকরের বাড়ি ঢেকিয়াজুলিতে। তার নামে আগেও বহু গাড়ি চুরির অভিযোগ রয়েছে। গত রাতেই গোলাঘাটের দেরগাঁও এলাকায় গাড়ি চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে এক গাড়ি চোর। ধরা পড়ার আগে গুলিও চালায় সে। মঙ্গলদৈ থেকেও পুলিশ গত কাল আরও সাত গাড়িচোরকে পাকড়াও করেছে।

Rita chauhan police arms car thief guwahati rajibaksha rakshit
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy