কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চিরাগ পাসোয়ান ‘দ্বিচারিতা’ করছেন! নীতীশ কুমারের সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়াতেই চিরাগকে আক্রমণ শানাতে শুরু করল রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)। প্রশ্ন, কেন তিনি ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ সরকারের সঙ্গে রয়েছেন?
শনিবার নীতীশ সরকারের সমালোচনা করেন প্রয়াত রামবিলাস পাসোয়ানের পুত্র চিরাগ। তাঁর দল বিহারে জোট সরকার এনডিএ-র সঙ্গে রয়েছে। তবে সেই সরকারকে বাক্যবাণে বিদ্ধ করেছেন চিরাগ। চিরাগের মতে, এমন একটি শাসনব্যবস্থাকে সমর্থন করার জন্য তিনি দুঃখিত! তাঁর কথায়, ‘‘বিহার জুড়ে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে এবং তা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ প্রশাসন!’’ চিরাগের এই মন্তব্য নিয়ে আসরে নেমেছে আরজেডি। তাদের সাংসদ মনোজ ঝা রামবিলাস-পুত্রের সমালোচনা করে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে চিরাগের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তবে কেন তিনি বিহারের জন্য একটি তথ্য অনুসন্ধানকারী দল পাঠানোর কথা বলছেন না? পশ্চিমবঙ্গে পাঠানো হলে বিহারে নয় কেন?’’
চিরাগ শনিবার জানিয়েছিলেন, তিনি আর কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে থাকতে চান না। তিনি মনে করছেন, কেন্দ্রীয় রাজনীতি নয়, তাঁর প্রয়োজন রাজ্যস্তরের রাজনীতিতে। অনেকের মতে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিয়ে চিরাগ বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে ঝাঁপাবেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে মনোজ বলেন, ‘‘আমি আপনাকে (চিরাগ) পদত্যাগ করতে বলছি না। চাইছি একটি তথ্য অনুসন্ধানকারী দলের দাবি করুন, যাতে সত্য বেরিয়ে আসে।’’ মনোজের সংযোজন, ‘‘চিরাগের উচিত এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া, তা হলেই বোঝা যাবে তিনি লোক দেখানো কথা বলছেন না।’’
শুধু মনোজ নয়, আরজেডি নেতা তথা বিহারের বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদবও আক্রমণ শানিয়েছেন চিরাগকে। তাঁর অভিযোগ, খবরে ভেসে থাকার জন্যই এই সব বলছেন চিরাগ। তাঁর ক্ষমতার লোভ রয়েছে। কিন্তু নিজেকে ক্ষমতাহীন দেখানোর চেষ্টা করছেন। লালুপ্রসাদ যাদবের পুত্র তেজস্বীর প্রশ্ন, ‘‘চিরাগ যে সরকারের কথা বলছেন, তিনিও সেই সরকারেরই অংশ। তিনি এক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তাঁর দলের পাঁচ জন সাংসদ রয়েছেন। তা হলে তিনি কেন এত অসহায় আচরণ করছেন?’’
আরও পড়ুন:
লালুপ্রসাদ যাদব-নীতীশ কুমারের সমসাময়িক হলেও বরাবরই জাতীয় রাজনীতিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছেন চিরাগের পিতা রামবিলাস। বাকি দু’জন যখন রাজ্য-রাজনীতিতে ক্ষমতা দখলের জন্য সক্রিয়, তখন রামবিলাস বার বার জোট বদলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্বেই মনোনিবেশ করেছেন। কিন্তু ২০২০ সালে রামবিলাসের প্রয়াণের পরে বিহারের বিধানসভা ভোটে চিরাগের নেতৃত্বে অখণ্ড এলজেপি আলাদা ভাবে ভোটে লড়েছিল। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, বিজেপির বিরুদ্ধে প্রার্থী দেননি তিনি। নিশানা করেছিলেন নীতীশের জেডিইউকে। মোট ১৩৪ আসনে লড়ে মাত্র একটিতে জিতলেও সাড়ে পাঁচ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল তাঁর দল। এ বার বিহারের নির্বাচনে কোন সমীকরণে হাঁটেন চিরাগ, সে দিকে নজর রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।