কানহাইয়া কুমার।—ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটে সমঝোতা হয়নি। তার পূর্ণ ফায়দা তুলেছিল বিজেপি তথা এনডিএ। অতীত থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়ে বিহারের বিধানসভা ভোটের আগে মহাজোটের জমি তৈরি করে ফেলল আরজেডি, কংগ্রেস ও বামেরা। এর পরে শুরু হবে আসন ভাগের আলোচনা।
বিহারে বিরোধী শিবিরের তিন পক্ষের নেতাদেরই বক্তব্য, নীতীশ কুমারের দীর্ঘ শাসনের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ জমা হয়ে আছে। প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার ফায়দা নিতে এবং গোটা দেশেই বিজেপি-বিরোধিতার পথ সুগম করতে তাঁরা একসঙ্গে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। লোকসভা ভোটের অভিজ্ঞতা কাঁটাছেড়া করে বিরোধের বিষয়গুলি আপসেই সরিয়ে রাখা হয়েছে। আসন বণ্টন নিয়ে বড় কোনও সমস্যা হবে না বলেই তাঁদের দাবি।
মহাজোটের বল গড়াতে প্রথম কৌশলী চাল দিতে হয়েছে সিপিআইকে। তাদের তরুণ নেতা কানহাইয়া কুমার লোকসভা ভোটে বেগুসরাই থেকে শোচনীয় পরাজয়ের মুখে পড়লেও কয়েক মাস আগে বিহার জুড়ে তাঁর সিএএ-বিরোধী ‘জন-গণ-মন যাত্রা’য় ঝড় তুলে দিয়েছিলেন। কানহাইয়ার এমন প্রবল উপস্থিতি লালুপ্রসাদের পুত্র এবং আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবের কাছে আবার বেজায় অস্বস্তিদায়ক। কারণ, তেজস্বী নিজে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। এই সমীকরণ বুঝেই সিপিআইয়ের জাতীয় পরিষদ কানহাইয়াকে পরামর্শ দিয়েছে, তাঁর সামনে দীর্ঘ রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ পড়ে। তিনি জাতীয় স্তরের নেতা হতে পারেন, বিহারের গদি নিয়ে মাথা ঘামিয়ে কী লাভ! কানহাইয়া বরং বামেদের ‘তারকা প্রচারক’ হয়ে ভোটের আগে বিহার চষে বেড়াতে পারবেন। সিপিআইয়ের রাজ্য নেতৃত্বও আরজেডি-কে আশ্বস্ত করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর কোনও দাবি তাঁরা করছেন না। তার পরেই আলোচনা গড়িয়েছে। যাতে শামিল হয়েছে কংগ্রেস এবং সিপিএম।
সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক রামনরেশ পাণ্ডে বলছেন, ‘‘মহাজোটের প্রথম পর্বের কাজ সমাপ্ত। বিহারের ২৪৩টি আসনেই আমরা একসঙ্গে লড়াই করব। বিজেপি-কে হারানোর বার্তা বিহার থেকে গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ুক, এটাই আমাদের লক্ষ্য।’’ আরজেডি-র রাজ্য সভাপতি জগদানন্দ সিংহের বক্তব্য, ‘‘নীতীশের কু-শাসনের বিরুদ্ধে মহাজোট বেঁধেই লড়াই হবে।’’ কংগ্রেস সাংসদ ও বিহার প্রদেশ কংগ্রেসের প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান অখিলেশ প্রসাদ সিংহেরও একই সুর। তাঁর মতে, ‘‘এই মুহূর্তে করোনা ও বন্যায় বিহারের মানুষ নাজেহাল। জেডিইউ-বিজেপি সরকার চূড়ান্ত ব্যর্থ! বিহারের জনতা সরকারের জবাব পায়নি। তারাই সরকারকে জবাব দিতে তৈরি হচ্ছে, আমরাও সেই লক্ষ্যে এগোচ্ছি।’’
রামনরেশ মনে করাচ্ছেন, ১৯৯৫ সালে বামেদের সমর্থনেই মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন লালুপ্রসাদ যাদব। লালু সরে দাঁড়ানোর পরে সেই সরকারেরই মুখ্যমন্ত্রী হন রাবড়ি দেবী। আরজেডি ও বামেদের সমঝোতার ক্ষেত্র অনেকটাই ‘স্বাভাবিক ও অভিন্ন’। পাশাপাশি, বিহারে সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের তিন বিধায়ক আছেন। তারা অবশ্য এখনও মহাজোটের বন্ধনীতে আসেনি। তবে লিবারেশন সূত্রে বলা হচ্ছে, দরজা বন্ধ হয়নি। বাম ভোট এক জায়গায় এলে এবং আরজেডি-কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা থাকলে নীতীশ কড়া পরীক্ষার মুখে পড়বেন বলেই বাম নেতৃত্বের মত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy