যাদব পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন লালুকন্যা রোহিণী আচার্য। ছাড়লেন রাজনীতির সংস্রবও। শনিবার নিজের এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। শুক্রবারই বিহারে বিধানসভা নির্বাচনের ফলঘোষণা হয়েছে। তেজস্বীর নেতৃত্বে শোচনীয় ভাবে পরাস্ত হয়েছে লালুপ্রসাদের দল আরজেডি। আসনসংখ্যা আগের চেয়ে আরও কমেছে। আরজেডি ধরাশায়ী হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এ বার পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন রোহিণী।
লালু অসুস্থ থাকাকালীন তাঁকে কিডনি দিয়েছিলেন রোহিণীই। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের ঘটনা। ওই সময়ে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে লালুর কিডনি প্রতিস্থাপিত হয়। দাবি করা হয়, রোহিণীই সেই কিডনি দেন। তার পর দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে কন্যা রোহিণীর প্রশংসা করতে দেখা গিয়েছে লালুকে। গত লোকসভা নির্বাচনে মেয়েকে টিকিটও দিয়েছিলেন লালু। বিহারের সারন লোকসভা কেন্দ্র থেকে আরজেডির টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জিততে পারেননি। সেই রোহিণীই এ বার ত্যাগ করলেন যাদব পরিবারকে।
শনিবার সমাজমাধ্যম পোস্টে রোহিণী লেখেন, ‘‘আমি রাজনীতি ছেড়ে দিচ্ছি। আমার (যাদব) পরিবারকেও অস্বীকার করছি। সঞ্জয় যাদব এবং রামিজ় আমাকে এটাই করতে বলেছিলেন। সব দায় আমি মাথা পেতে নিচ্ছি।’’ এ ক্ষেত্রে জনৈক সঞ্জয় যাদব এবং রামিজ় বলতে রোহিণী কাদের বোঝাতে চেয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে অনেকের মনেই। তবে রাজনৈতিক কারবারিদের একাংশ মনে করছেন, ‘সঞ্জয় যাদব’ বলতে তেজস্বী-ঘনিষ্ঠ আরজেডি নেতা এবং ‘রামিজ়’ বলতে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন তেজস্বী-ঘনিষ্ঠ অপর এক জনকে। সংবাদসংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, ‘রামিজ়’ উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা এবং তিনি তেজস্বীর এক পুরনো বন্ধু। যদিও সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’ জানাচ্ছে, ‘রামিজ়’ বলতে নিজের স্বামীর কথা বলতে চেয়েছেন তিনি।
বস্তুত, কয়েক মাস আগেই লালু তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র তেজপ্রতাপ যাদবকে দল এবং পরিবার থেকে ত্যাগ করেন। চলতি বছরের মে মাসে তেজপ্রতাপের প্রেমের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরেই ওই পদক্ষেপ করেন লালু। তেজপ্রতাপ এখন ভিন্ন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। এ বারের বিধানসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছেন। তবে উল্লেখযোগ্য কোনও ফল করতে পারেনি তাঁর দল। পারিবারিক এই দ্বন্দ্ব এ বার আরও প্রকট হল লালুকন্যা রোহিণীর সমাজমাধ্যম পোস্টে। যদিও রোহিণীর পোস্টের বিষয়ে যাদব পরিবারের কেউ এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করেননি।
আরও পড়ুন:
পেশায় চিকিৎসক রোহিণী যে এমন কিছু পদক্ষেপ করতে পারেন, তা একেবারে অনভিপ্রেত ছিল না। যাদব পরিবারের অন্দরে যে সব কিছু ঠিকঠাক নেই, তা গত কয়েক মাস ধরেই অনুমান করা যাচ্ছিল। আরজেডি, লালু এবং তেজস্বীকে সমাজমাধ্যমে ‘আনফলো’ করে দেন তিনি। তাঁর বিভিন্ন সমাজমাধ্যম পোস্টেও আরজেডি এবং তেজস্বীর বিরোধিতার আভাস মিলেছে অতীতে। বরং লালুর জ্যেষ্ঠপুত্র তেজপ্রতাপের প্রতিই তাঁর বেশি সহানুভূতি প্রকাশ পেয়েছে বিভিন্ন সময়ে।
রোহিণী এবং যাদব পরিবারের মাঝে এই দ্বন্দ্ব কেন, তা এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। অনেকেই মনে করেন, রোহিণী লালুকে কিডনি দিয়েছেন বলে যে দাবি করা হয়, সেটি ঘিরেই বিতর্কের সূত্রপাত। একাংশ দাবি করে, রোহিণী সেই কিডনি দেননি। রোহিণীও সেই সময় মুখ খুলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, যাঁরা এই ধরনের প্রশ্ন তুলছেন, তাঁরা যেন উপযুক্ত প্রমাণ নিয়ে কথা বলেন।
তেজস্বী-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সঞ্জয়কে ঘিরে অতীতেও বিভিন্ন সময়ে যাদব পরিবারে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। সঞ্জয়কে তেজস্বীর ‘গুরুত্ব’ দেওয়ায় যাদব পরিবারের অন্দরে এর আগেও প্রশ্ন তুলেছিলেন রোহিণী। কেন সব বিষয়ে সঞ্জয় নাক গলান, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন লালুকন্যা। এ বার পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার সময়েও সঞ্জয়ের দিকেই আঙুল তুললেন তিনি। যদিও রামিজ়ের প্রসঙ্গ কেন তিনি তুলেছেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়।