E-Paper

ভোট অঙ্কেই জাতগণনার পক্ষে সওয়াল সঙ্ঘেরও

তাৎপর্যপূর্ণ হল এই ভাইয়াজি জোশী-সহ আরএসএস নেতৃত্ব কিছু দিন আগে পর্যন্ত জাতগণনার বিরোধিতা করে এসেছেন। আরএসএস নেতৃত্ব গোড়া থেকেই অখণ্ড হিন্দু সমাজ নির্মাণের উপরেই জোর দিয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২৫ ০৮:৪৮

— প্রতীকী চিত্র।

বিরোধীরা তো বটেই, এনডিএ-র শরিক দলেরাও দাবি তুলেছিল জাতগণনার। ভোটমুখী বিহারে গেরুয়া শিবিরের একাধিক সমীক্ষা ইঙ্গিত দেয়, রাজ্যের মানুষ জাতগণনার পক্ষে। বিহারের নির্বাচন জাতপাতভিত্তিক। তাই ঝুঁকি না নিয়ে ভোটের আগে জাতগণনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। যাকে সমর্থন জানিয়েছেন আরএসএস নেতৃত্ব। দলের সাধারণ সম্পাদক সুরেশ ভাইয়াজি জোশীর মতে, দেশের স্বার্থে তাঁরা জনগণনার সঙ্গে জাতগণনার করার সিদ্ধান্তকে মেনে নিচ্ছেন। তবে ঘরোয়া ভাবে আরএসএস নেতৃত্বের বক্তব্য, জাতগণনাকে কোনও ভাবেই ভোট-রাজনীতির ফায়দা নেওয়ার লক্ষ্যে ব্যবহার করা উচিত নয়। অতীতে মণ্ডল রাজনীতির জবাবে কমন্ডল বা হিন্দুত্বের রাজনীতিকে আঁকড়ে ধরেছিলেন আরএসএস তথা বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু এখন ফের কমন্ডল ছেড়ে মণ্ডল রাজনীতিতে ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছে বিজেপি শিবির।

তাৎপর্যপূর্ণ হল এই ভাইয়াজি জোশী-সহ আরএসএস নেতৃত্ব কিছু দিন আগে পর্যন্ত জাতগণনার বিরোধিতা করে এসেছেন। আরএসএস নেতৃত্ব গোড়া থেকেই অখণ্ড হিন্দু সমাজ নির্মাণের উপরেই জোর দিয়েছেন। কারণ আরএসএস নেতৃত্ব মনে করেন, একমাত্র শ্রেণিবিহীন সমাজই ভারতে হিন্দুদের এক ছাতার তলায় নিয়ে আসতে পারে। সে কারণে গোড়া থেকেই জাতভিত্তিক সমাজ তথা জাতগণনার বিরোধিতা করেছে তারা। সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবতও এক সময়ে মন্তব্য করেছিলেন, জাতপাত একটি ব্যবস্থা নয়, বরং অব্যবস্থা। এ নিয়ে ভাগবত বলেছিলেন, ‘‘কোনও এক সময়ে জাতপাতভিত্তিক সমাজব্যবস্থা ছিল। যে ব্যবস্থা সঠিক হতে পারে, আবার ভুলও হতে পারে। কিন্তু আজকের দিনে এ নিয়ে ভাবনাচিন্তার কোনও কারণ নেই।’’ উল্টে সমাজ থেকে যাতে জাতপাতভিত্তিক ব্যবস্থা মুছে দেওয়া সম্ভব হয়, তার চেষ্টা করা উচিত বলে সওয়াল করেন তিনি।

রাজনীতিকদের মতে, আরএসএস তথা বিজেপি মূলত উচ্চবর্ণের দল হিসাবে পরিচিত। জাতগণনা হলে দেশের অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যা যে ওবিসি সমাজের, তা খাতায়-কলমে প্রতিষ্ঠিত হয়ে পড়বে। ফলে নতুন করে সংরক্ষণের দাবি উঠবে। যাতে সাধারণ বা জেনারেল শ্রেণির সংরক্ষণ কমার পরিস্থিতি তৈরি হবে। নীতিগত ভাবে বিজেপি যার বিপক্ষে। এই পরিস্থিতিতে ফের মণ্ডল রাজনীতির পক্ষে সরব হওয়ার পিছনে রাজনীতিকরা মনে করছেন, লোকসভা ভোটে দলিত-ওবিসি তথা পিছিয়ে পড়া সমাজের একটি বড় অংশ বিজেপির পিছন থেকে সরে যায়। ফলে উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে খারাপ ফল করে বিজেপি। দু’বছর বাদে ওই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের সমর্থন কুড়ােতে তাই এখন জাতপাতের রাজনীতিতে ভরসা রাখতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদীরা।

তাই দেরি না করে বিহার নির্বাচনের আগেই জাতগণনা করার সিদ্ধান্ত নেয় মোদী সরকার। তাৎপর্যপূর্ণ হল, মঙ্গলবার রাতে নরেন্দ্র মোদীর বাড়িতে বৈঠক করতে আসেন মোহন ভাগবত। সূত্রের মতে, বিহারে ভোটের আগে গেরুয়া শিবির যে একাধিক সমীক্ষা চালিয়েছে, তাতে ওই রাজ্যের বড় অংশের মানুষ জাতগণনার পক্ষে সায় দেন। সূত্রের মতে, মঙ্গলবার ভাগবত ও মোদীর বৈঠকেই সম্ভবত জাতগণনা প্রশ্নে ঐকমত্যে পৌঁছয় দুই শিবির। যার ভিত্তিতে পরের দিন মন্ত্রিসভার বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাজনীতিকদের মতে, এমন নয় যে, জাতগণনা নিয়ে হঠাৎ করে অবস্থান পরিবর্তন করলেন আরএসএস নেতৃত্ব। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পালাক্কাড়ে দলের কার্যসমিতির বৈঠকে প্রথম বার জাতগণনার পক্ষে সওয়াল করে আরএসএস নেতৃত্ব জানান, ওই তথ্য পিছিয়ে থাকা মানুষের উন্নয়নে ব্যবহার করা হবে। বুধবার সরকারের সিদ্ধান্ত জানার পরে ভাইয়াজি জোশী বলেন, ‘‘দেশের জন্য যা ভাল, তা করতেই হবে।’’

এ যাবৎ জাতগণনার বিরোধিতা করে আসা বিজেপির হঠাৎ করে জাতগণনার পক্ষে সওয়াল করা নিয়ে সরব হয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কংগ্রেসের হয়ে আমি ২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে জাতগণনা করার দাবি করেছিলাম। তখন সরকার সেই দাবি খারিজ করে দিয়েছিল। কিন্তু এখন মন পরিবর্তনের কারণ কি? এই সরকার অতীতে সব মঞ্চে আমাদের জাতগণনার দাবিকে খারিজ করেছিল। আমাদের বিভাজনকারী, শহুরে নকশাল বলা হয়েছিল।..জাতগণনার প্রশ্নে ‘বাঁটেঙ্গে তো কাটেঙ্গে (বিভাজনেই মৃত্যু)-র মতো স্লোগান দেওয়া হয়েছে।’’ এ যাবৎ জাতগণনা না হওয়ার জন্য আরএসএস নেতৃত্বের মনোভাবকেই দায়ী করেছেন খড়্গে। তাঁর কথায়, ‘‘আরএসএসের নির্দেশে বিজেপি এত দিন পিছিয়ে থাকলেও এখন যখন কংগ্রেস ও শরিক দলগুলি এক জোট হয়ে দাবি তুলতে শুরু করায় মোদী বুঝতে পারেন, বিষয়টি আর এড়ানো অসম্ভব। তাই জাতগণনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

RSS Caste Census

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy