ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দড়ি টানাটানি এবং মস্কোর থেকে তেল কেনা নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রক্তচক্ষুর মধ্যেই এই মাসে ভারতে আসার কথা রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ-এর। কূটনৈতিক সূত্রে এ খবর জানা গিয়েছে। শেষ মুহূর্তে কোনও পরিবর্তন না হলে ডিসেম্বরে নয়াদিল্লি সফরে আসবেন রাশিয়ার প্রেসি়ডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ভারত-রাশিয়া কৌশলগত সমঝোতার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হতে চলেছে পুতিনের আসন্ন সফর, এমন বার্তাই দিচ্ছেন ভারতে নিযুক্তরাশিয়ার রাষ্ট্রদূত।
বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, লাভরভ বৈঠক করবেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে তো বটেই। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ হবে তাঁর। মূলত পুতিনের সফরের ভিত তৈরি করতে, চুক্তিগুলিকে চূড়ান্ত করতেই তাঁর আসা— এমনটাই জানাচ্ছে কূটনৈতিক সূত্র। প্রসঙ্গত সব ঠিক থাকলে ডিসেম্বরেই ভারতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল কোয়াড বৈঠক। প্রসঙ্গত, ভারত, আমেরিকা, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার এই কোয়াড অক্ষ নিয়ে অতীতে বারবার অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পুতিন। জানিয়েছেন, এই অক্ষ আসলে রাশিয়া এবং চিনকে নিশানা করতেই তৈরি। কিন্তু কোয়াড এই বছর ভারতে হওয়ার কোনও সম্ভাবনা এখনও পর্যন্ত নেই। ভারত-পাকিস্তান সংঘাত পরবর্তী সময়ে ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতীয় কর্তাদের বাগযুদ্ধ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে তার আঁচ এসে লেগেছে। এখনও পর্যন্ত দর কষাকষি চলছে। বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি ভারত এবং আমেরিকার। ঠিক সেই সময়েইরাশিয়ার প্রেসি়ডেন্টের ভারত সফর তাই যথেষ্ট তাৎপর্যপূণ বলে মনেকরা হচ্ছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের ভারত সফরের ফলে বৃহত্তর ভূকৌশলগত প্রশ্নে নয়াদিল্লির দর কষাকষির পাল্লা ভারী হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য পুতিনের সঙ্গে কথা বলে কোনও বরফ গলাতে পারেননি ট্রাম্প। এখন চিনের সঙ্গেও তিনি কথা বলছেন, যেহেতু চিনের প্রভাব রাশিয়ার উপর যথেষ্ট। কিন্তু ভারতের মাটিতে পুতিন আসার অর্থ, ভারতের প্রতিরক্ষা বাজারে রাশিয়ার বিরাট সওদা। ফলে ভারতেরও সুযোগ থাকবে কৌশলগত প্রশ্নে রাশিয়ার উপর যুদ্ধ থামানোর প্রশ্নে চাপ তৈরি করার।
নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ডেনিস আলিপভের কথায়, ‘‘আমাদের সামরিক সম্পর্ক অত্যন্ত পাকাপোক্ত, ভবিষ্যতও উজ্জ্বল। বেশ কিছু স্পর্শকাতর ক্ষেত্রে সহযোগিতার আলোচনা চলছে। কিছু চুক্তি সই হবে, কিছু ক্ষেত্রে আলোচনা চলতেই থাকবে। কিন্তু পুতিনের আসন্ন সফর একটি বড় ঘটনা হতে চলেছে। গত বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়া সফরে যেমনটা হয়েছিল।’’
প্রসঙ্গত ২০২৬ সালে ভারতে আসার কথা রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস ৪০০-এর একটি ইউনিট। আরও একটি ইউনিট আসবে ২০২৭ সালের মধ্যে। পুতিনের সফরে এই বিষয়গুলি গতি পাবে বলেই মনে করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে এস ৪০০-এর মোট পাঁচটি ইউনিট ভারতে পাঠানোর বিষয়ে সম্মত হয়েছিল রাশিয়া। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর ভারতের ১৫টি শহরকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছনোর আগেই সেই ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে ধ্বংস করে দিয়েছিল ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। রুশ এস-৪০০ ব্যবহারেই এসেছিল সেই সাফল্য।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)