Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রায়ান তদন্তে আরুষি-ছায়া

প্রদ্যুম্নের উপর যৌন নির্যাতন করে ধরা পড়ার ভয়ে অশোক এই কাজ করেছে বলে দাবি করেছিল পুলিশ।

সংবাদ সংস্থা
গুরুগ্রাম শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:১৫
Share: Save:

রাজধানীর অদূরে প্রায় সাড়ে ন’বছর আগেকার জোড়া খুনের ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দেশকে। কিন্তু রাজ্য পুলিশ আর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার করা তদন্তে ছিল আকাশ-পাতাল তফাত আর অজস্র ফাঁক-ফোঁকর। সেই আরুষি-হেমরাজ খুনের ছায়াই যেন এ বার দেখা যাচ্ছে গুরুগ্রামের রায়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পড়ুয়া প্রদ্যুম্ন ঠাকুরের হত্যাকাণ্ডে। দু’মাস পরে আচমকা আজই সিবিআই দাবি করেছে, এত দিন খুনের অভিযোগে ধৃত অশোক খুনই করেননি। খুন করেছে ওই স্কুলের সতেরো বছরের এক ছাত্র। এ ক্ষেত্রে তদন্তে মারাত্মক গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে হরিয়ানা পুলিশের বিরুদ্ধে।

প্রদ্যুম্নের উপর যৌন নির্যাতন করে ধরা পড়ার ভয়ে অশোক এই কাজ করেছে বলে দাবি করেছিল পুলিশ। আজ সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা দাবি করেছেন, অশোক নয়, প্রদ্যুম্নের গলায় ছুরি চালিয়েছিল ওই স্কুলেরই একাদশ শ্রেণির এক ছাত্র। সিবিআইয়ের দাবি, সিসিটিভি ফুটেজ পুরোটা খতিয়েই দেখেনি হরিয়ানা পুলিশ।

আর এই তথ্য সামনে আসার পরে প্রশ্ন উঠছে, এমন গুরুত্বপূর্ণ হত্যার তদন্তে নেমে এত ঢিলেঢালা ভাব হরিয়ানা পুলিশ কী করে দেখাল, কেনই বা ঘটনার দায় অন্য কারও উপর চাপানো হল, ঠিক যেমনটা হয়েছিল
নয়ডার আরুষি-হেমরাজ হত্যায়। সিবিআই আদালতে দোষী সাব্যস্ত আরুষির বাবা-মা রাজেশ ও নূপুর তলোয়ারকে কিছু দিন আগেই ইলাহাবাদ হাইকোর্ট মুক্তি দিয়েছে। কিন্তু কিশোরী আরুষি ও তার বাড়ির পরিচারক হেমরাজকে কে বা কারা খুন করেছিল, সে প্রশ্ন আজও অধরা।

আরুষি কাণ্ডে ঘটনার পর পরই গ্রেফতার করা হয়েছিল নিহত কিশোরীর বাবা রাজেশ তলোয়ারকে। নয়ডা পুলিশ জানিয়েছিল, সংবাদমাধ্যমের প্রবল চাপে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল তাদের। এ বারও সংবাদমাধ্যমে তুমুল সমালোচনা শুরু হওয়ায় ঘটনার দিন বিকেলেই অশোককে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রশ্ন উঠছে, এ ভাবে সংবাদমাধ্যমের চাপে কি যে কোনও ‘নির্দোষ’কে গ্রেফতার করা যায়?

আরুষি কাণ্ডে হাইকোর্ট বলেছে, সিবিআইয়ের পেশ করা প্রমাণ তলোয়ার দম্পতিকে দোষী সাব্যস্ত করার পক্ষে যথেষ্ট নয়। একই ভাবে এই মামলায় তথ্য প্রমাণ নিয়ে কার্যত ছেলেখেলা করার অভিযোগ উঠেছে হরিয়ানা পুলিশের বিরুদ্ধে। সিসিটিভির গোটা ফুটেজ তারা খতিয়ে তো দেখেইনি। এই হত্যায় ব্যবহৃত মূল অস্ত্রটিও শৌচাগারের কমোড থেকে খুঁজে পেয়েছে সিবিআই।

অনেকেরই বক্তব্য, তলোয়ার দম্পতি তবু সমাজে প্রতিষ্ঠিত। সমাজের একাংশের সহানুভূতি ছিল তাঁদের প্রতি। কিন্তু নিম্নবিত্ত অশোকের প্রতি কি এতদিন কোনও সমবেদনা জানিয়েছে সমাজ? খুন তো বটেই তাঁর বিরুদ্ধে শিশুর উপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগও এনেছিল পুলিশ। অথচ ময়না-তদন্তের রিপোর্টে সাফ বলা ছিল, প্রদ্যুম্নর উপর শারীরিক নির্যাতন হয়নি। তা হলে সেই রিপোর্ট দেখেও কেন অনড় থাকল পুলিশ? এর পরেই পুলিশে ভরসা হারিয়ে সিবিআই তদন্তের জন্য হরিয়ানা সরকারের দ্বারস্থ হয় প্রদ্যুম্নের পরিবার। তারা এখন ধৃতের ফাঁসির দাবিও তুলেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE