Advertisement
E-Paper

রেল কি সংস্কারের পথে, উত্তর আজ

কর-নীতি আগেই ঘোষণা হয়ে গেলে বাজেট ঘিরে আগ্রহ যেমন থিতিয়ে যাওয়ার কথা, ভাড়া বদলের কথা জানিয়ে দেওয়ার পর রেল বাজেট নিয়েও তা-ই। যে কারণে রেল সদ্য যাত্রী-ভাড়া আর পণ্য মাসুল বাড়ানোর কথা ঘোষণা করার পর উত্তেজনার তেমন আঁচ থাকা উচিত নয় মঙ্গলবারের বাজেট ঘিরে। কিন্তু বিপুল প্রত্যাশা কাঁধে নিয়ে আসা মোদী-সরকারের প্রথম রেল বাজেট বলেই হয়তো তা নিয়ে প্রশ্ন, জল্পনা আর আগ্রহ এখনও যথেষ্ট।

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৪ ০৩:২২
শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। রেলভবনে মন্ত্রী ডি ভি সদানন্দ গৌড়া। নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই

শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। রেলভবনে মন্ত্রী ডি ভি সদানন্দ গৌড়া। নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই

কর-নীতি আগেই ঘোষণা হয়ে গেলে বাজেট ঘিরে আগ্রহ যেমন থিতিয়ে যাওয়ার কথা, ভাড়া বদলের কথা জানিয়ে দেওয়ার পর রেল বাজেট নিয়েও তা-ই। যে কারণে রেল সদ্য যাত্রী-ভাড়া আর পণ্য মাসুল বাড়ানোর কথা ঘোষণা করার পর উত্তেজনার তেমন আঁচ থাকা উচিত নয় মঙ্গলবারের বাজেট ঘিরে। কিন্তু বিপুল প্রত্যাশা কাঁধে নিয়ে আসা মোদী-সরকারের প্রথম রেল বাজেট বলেই হয়তো তা নিয়ে প্রশ্ন, জল্পনা আর আগ্রহ এখনও যথেষ্ট।

মানুষ জানতে চান, রেলের স্বাস্থ্য ফেরাতে বাড়তি ভাড়া না হয় তাঁরা গুনবেন। কিন্তু পরিষেবার হাল শোধরাবে কি? আগের থেকে একটুও কি সুরক্ষিত হবে রেলযাত্রা? কমবে ছুটতে ছুটতে ছিটকে যাওয়া কামরার সংখ্যা? প্যান্ট্রির খাবার, শোওয়ার কম্বল, এগুলোও আগের থেকে একটু ভাল আর পরিষ্কার হবে কি?

বিশেষজ্ঞ আর শিল্পমহলেরও চোখ থাকবে টিভিতে। তাঁরা দেখবেন, রাজনীতির চাপে শেষমেশ পূর্বসূরিদের দেখানো জনমোহিনী পথই কি ধরতে বাধ্য হচ্ছেন মোদীর রেলমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া? নাকি সংস্কারমুখী কড়া দাওয়াই প্রয়োগের সাহস দেখাচ্ছেন তিনি? তাঁদের মতে, মোদী-সরকারের প্রথম বাজেটের আগেও এই দ্বন্দ্ব ততটাই প্রাসঙ্গিক, যতটা অতীতে ছিল।

সদ্য ভাড়া বেড়েছে রেলে। ফলে মন্ত্রকের কর্তারাও স্বীকার করছেন, বাজেটে ফের ভাড়া বাড়ানোর কথা অন্তত এখনও আলোচনা হয়নি। তাই শেষ মুহূর্তে তেমন কিছু ঘটলে, আক্ষরিক অর্থেই তা বড় চমক হবে। আগের বারের মতো এ বারও অবশ্য সুরক্ষা-তহবিলের জন্য টিকিটে ‘সেফটি-সারচার্জ’ বসানোর কথা ভাবছে মন্ত্রক। সে ক্ষেত্রে পরোক্ষে ভাড়া বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সোমবার বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিনেই সংসদে বিরোধীরা যে ভাবে মূল্যবৃদ্ধি ও রেলভাড়া বাড়ানো নিয়ে সরব হয়েছেন, তাতে সেই সাহস সরকার দেখাবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকে।

কিন্তু শুধু ভাড়া বাড়িয়েই রেলের আর্থিক স্বাস্থ্য ফিরবে না। ছাঁটতে হবে অহেতুক খরচের বোঝাও। গত এক দশকের রেল বাজেট ঘাঁটলে দেখা যাবে, কিছুটা সামাজিক দায়বদ্ধতা আর কিছুটা রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা কুড়োতে একের পর এক প্রকল্প ঘোষণা করে গিয়েছেন প্রাক্তন রেলমন্ত্রীরা। তোয়াক্কা করেননি রেলের আর্থিক স্বাস্থ্যের। ভাবেনইনি যে, টাকা আসবে কোথা থেকে। অথচ দেখা যাচ্ছে যে, ওই সব প্রকল্প শেষ করতে দু’লক্ষ কোটি টাকারও বেশি লাগবে। কমিশনের মতে, ওই প্রকল্পগুলির অধিকাংশই লাভজনক নয়। প্রশ্ন হল, সংস্কারের পথে হেঁটে ওই সব প্রকল্প বাতিলের সাহস কি দেখাতে পারবেন গৌড়া?

মন্ত্রকের ইঙ্গিত, এ বার নতুন প্রকল্প ঘোষণা কম হবে। গোটা ত্রিশেক নতুন ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত অবশ্য নেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে দিল্লি-কর্নাটক ও দিল্লি-আমদাবাদ রুট। পশ্চিমবঙ্গের কপালেও ৩-৪টি নতুন ট্রেনের শিকে ছিঁড়তে পারে। সংখ্যা বাড়তে চলেছে প্রিমিয়াম ট্রেনেরও। যেখানে চাহিদার ভিত্তিতে টিকিটের দাম ওঠা-নামা করে। লাভের হার বেশি থাকায় দিল্লি-কলকাতা, গুয়াহাটি-দিল্লি, দিল্লি-মুম্বই, দিল্লি-বেঙ্গালুরুর মধ্যে আরও বেশি ট্রেন ঘোষণা করতে পারে মন্ত্রক। রেল-কারখানা হতে পারে কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, গুজরাত ও জম্মু-কাশ্মীরে।

যাত্রী-পরিষেবা মসৃণ করতে আরও বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারে জোর দিচ্ছে মন্ত্রক। নেটে ঘেঁটে টিকিট কাটার পথ সরল করতে আইআরসিটিসি-র নয়া ওয়েবসাইট ঘোষণা করা হতে পারে। নোংরা বেড রোল-এর সমস্যা মেটাতে এক বার ব্যবহারের পরই ফেলে দেওয়ার মতো বেড-রোল দেওয়ার ভাবনা রয়েছে। জোর দেওয়া হচ্ছে নতুন লাইন ও ডাবলিংয়েও।

বাজেটে মূলত দু’টি বিষয়ে জোর দিচ্ছে মন্ত্রক। রেলের আধুনিকীকরণ ও নিরাপত্তা। এর মধ্যে আধুনিকীকরণের জন্য প্রয়োজন সাড়ে পাঁচ লক্ষ কোটি টাকা। নিরাপত্তা সুদৃঢ় করতে আরও এক লক্ষ কোটি। এই বিপুল অর্থ জোগাড়ের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ টানতে চাইছে মন্ত্রক। চাইছে আরও বেশি করে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে সামিল হতে। মন্ত্রক চায় যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা থেকে লাইন পাতা সবেই টাকা ঢালতে এগিয়ে আসুক বিদেশি লগ্নিকারীরা। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় রেল-পরিকাঠামো গড়তে বিদেশি সংস্থাকে কাজে লাগানোয় আপত্তি জানিয়েছে। তাই ওই সব ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ও সংশ্লিষ্ট রাজ্যের কাছে সাহায্য চাওয়া হতে পারে।

বিদেশি ও বেসরকারি লগ্নি স্বাগত নিরাপত্তা ক্ষেত্রেও। রেলে সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্ছিদ্র করতে গৌড়াকে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। রেল মন্ত্রকও দীর্ঘ দিন ধরে সুরক্ষা তহবিলের জন্য অর্থ মন্ত্রকের কাছে দরবার করে আসছে। নীতিগত ভাবে তাতে সম্মতি জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। সে ক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দ ২৮ হাজার কোটি থেকে বেড়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। সেই কারণেই সেফটি-সারচার্জের ভাবনা।

জোর দেওয়া হচ্ছে বুলেট ট্রেন নেটওয়ার্ক গড়ার উপরেও। ইতিমধ্যেই দিল্লি-আগ্রা রুটে পরীক্ষামূলক ভাবে ‘সেমি হাইস্পিড’ ট্রেন চালানো হয়েছে। এ বার অন্যান্য রুটেও মন্ত্রক এই ধাঁচের ট্রেন চালাতে আগ্রহী। বাজপেয়ীর জমানায় সড়ক পথে দেশকে জুড়তে সোনালি-চতুর্ভূজ গড়া হয়েছিল। মোদীর না কি ইচ্ছা, এ বার সে ভাবেই দেশের চার প্রান্তকে বুলেট ট্রেনে জোড়ার। কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগ ছাড়া তার টাকা জোগাড় করা শক্ত বলেই রেল মন্ত্রকের ধারণা।

sadanand gowda rail budget anamitra sengupta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy