Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

তামিলনাড়ুতে সক্রিয়ই রইল মান্নারগুড়ি চক্র

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শশিকলা জেলে গেলেও তামিলনাড়ুর রাজ্যপাটে রীতিমতো জাঁকিয়ে বসেছে তাঁর ঘনিষ্ঠ ‘মান্নারগুড়ি মাফিয়া’।জয়ার মৃত্যুর পরে যে কয়েকটি চাল দিয়েছেন শশিকলা, ভাইপো টি টি ভি দিনকরন এবং এস বেঙ্কটেশকে দলে ফেরানো তার মধ্যে অন্যতম।

টি টি ভি দিনকরন

টি টি ভি দিনকরন

সংবাদ সংস্থা
চেন্নাই ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৩
Share: Save:

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শশিকলা জেলে গেলেও তামিলনাড়ুর রাজ্যপাটে রীতিমতো জাঁকিয়ে বসেছে তাঁর ঘনিষ্ঠ ‘মান্নারগুড়ি মাফিয়া’।

জয়ার মৃত্যুর পরে যে কয়েকটি চাল দিয়েছেন শশিকলা, ভাইপো টি টি ভি দিনকরন এবং এস বেঙ্কটেশকে দলে ফেরানো তার মধ্যে অন্যতম। দলের সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থাকছেন শশিকলাই। সহসাধারণ সম্পাদক হয়েছে‌ন দিনকরন। তামিলনাড়ুর রাজনীতিকদের মতে, এটাই মান্নারগুড়ি মাফিয়ার প্রতাপের যথেষ্ট প্রমাণ।

কিন্তু কী এই মান্নারগুড়ি মাফিয়া?

তামিল রাজনীতিকরা জানাচ্ছেন, শশিকলা ও তাঁর স্বামী এম নটরাজন আদতে তিরুভুর জেলার মান্নারগুড়ি শহরের বাসিন্দা। এক সময়ে সেখানে ভিডিও পার্লারের ব্যবসা করতেন শশিকলা। জয়ললিতার সংস্পর্শে আসার পরে দ্রুত চেন্নাইয়ের ক্ষমতার অলিন্দে স্থান করে নেন শশিকলা ও তাঁর স্বামী। সেই সঙ্গে ফুলে ফেঁপে ওঠেন শশিকলার নিকটাত্মীয়রা। টেলিভিশন, নির্মাণ ব্যবসা থেকে রাজনীতি-সব ক্ষেত্রেই দাপিয়ে বেড়াতে শুরু করেন শশির বোনপো সুধাকরন, ভাইপো দিনকরন, বৌদি এলাভরসির মতো চরিত্ররা। সেইসঙ্গে তাঁদের বিরুদ্ধে উঠতে থাকে দুর্নীতির অভিযোগ। এই পারিবারিক চক্র ও তাদের সহযোগী দুষ্কৃতীরা তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে ‘মান্নারগুড়ি মাফিয়া’ হিসেবে কুখ্যাত হয়ে ওঠে।

শেষে ২০১১ সালে শশিকলা, তাঁর স্বামী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের দল থেকে বহিষ্কার করতে বাধ্য হন জয়ললিতা। প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে শশিকলা দলে ফিরলেও মান্নারগুড়ি চক্রের বাকিরা জয়ার কাছাকাছি আসার অনুমতি পাননি। কিন্তু জয়া অসুস্থ হয়ে পড়ার পরে ফের বদলে যায় ছবিটা। হাসপাতালে জয়ললিতার আশপাশে শশিকলার সঙ্গে মান্নারগুড়ি মাফিয়ার পরিচিত মুখগুলি ফের দেখা যায়। তাতেই পনীরসেলভম-সহ দলের অনেকে ক্ষুব্ধ হন বলে দলীয় সূত্রে খবর।

দুর্নীতি মামলায় শশিকলার সঙ্গেই জেলে যাচ্ছেন তাঁর বৌদি এলাভরসি ও বোনপো সুধাকরন। কিন্তু ভাইপো দিনকরনের হাতে দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় মান্নারগুড়ি চক্রের প্রভাব কমার কোনও লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন না রাজনীতিকরা।

শশিকলা, এলাভরসি ও সুধাকরন ছাড়াও মান্নারগুড়ি চক্রের বেশ কয়েক জন সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। বিদেশি মুদ্রা আইন ভাঙার অভিযোগে ২৫ কোটি টাকা জরিমানা দিতে হয়েছে দিনকরনকে। এলাভরসির ছেলে বিবেক জয়রামন ছিলেন জয়ললিতার ব্যবসা ও সম্পত্তির অডিটর। এখন তিনি সিনেমায় মান্নারগুড়ি চক্রের লগ্নি দেখাশ‌োনা করেন। জয়রামনের বিরুদ্ধে সরাসরি দুর্নীতির অভিযোগ নেই। তবে রাজনীতিকদের মতে, তামিল সিনেমায় লগ্নি দেখাশোনা করলে রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগানো ছাড়া পথ নেই।

তবে শশিকলার অন্য ভাই ভি কে দিবাহরনের সঙ্গে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে সরাসরি যোগ বেশি বলেই দাবি অনেকের। মান্নারগুড়িতে ‘বস’ হিসেবে পরিচিত দিবাহরনকে জমি দখলের মামলায় ২০১৩-য় গ্রেফতার করেছিল তামিলনাড়ু পুলিশ।

আরও পড়ুন:

ট্রাম্প-চাপ! ভারতের প্রশংসায় পাক সেনাপ্রধান

পনীরসেলভমের সঙ্গে দ্বন্দ্বের সময়ে মহাবলীপুরমের গোল্ডেন বে রিসর্টে প্রায় ১৩০ জন বিধায়ককে কড়া নজরদারিতে রেখেছিল শশিকলা শিবির। তখন মান্নারগুড়ির এক মাফিয়া ওই বিধায়কদের ক্রমাগত হুমকি দিত বলেও জানতে পেরেছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা ব্যুরোর দাবি, জাল্লিকাট্টু নিয়ে হিংসার পিছনেও মান্নারগুড়ি মাফিয়ার মদত ছিল।

দক্ষিণ ভারতের বালি ও খনি মাফিয়ার সঙ্গেও মান্নারগুড়ি চক্রের ঘনিষ্ঠ যোগ আছে বলে মনে করেন গোয়েন্দারা। তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যসচিব পি রামমোহন রাওয়ের বাড়িতে আয়কর হানার পিছনেও কেন্দ্রের বিশেষ পরিকল্পনা ছিল বলে ধারণা অনেকের। কারণ, রামমোহন শশিকলার বিশেষ ঘনিষ্ঠ।

মান্নারগুড়ি চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করা নয়া মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে বলেই ধারণা রাজনীতিকদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

T. T. V. Dhinakaran Mannargudi Sasikala
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE