Advertisement
E-Paper

করুণানিধির টানটান চিত্রনাট্যে কুর্সি রাখলেন শশীকলা

ভালবাসা, স্নেহ, বিশ্বাসঘাতকতা, ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল। যেন বলিউডের কোনও ব্লকবাস্টার! সবরকম মশলায় ভরপুর। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা আর তাঁর ঘনিষ্ঠ শশীকলার সম্পর্ক নিয়ে ওয়াকিবহাল দক্ষিণের অলিগলি

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৬ ১৮:৪১

ভালবাসা, স্নেহ, বিশ্বাসঘাতকতা, ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল। যেন বলিউডের কোনও ব্লকবাস্টার! সবরকম মশলায় ভরপুর।

তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা আর তাঁর ঘনিষ্ঠ শশীকলার সম্পর্ক নিয়ে ওয়াকিবহাল দক্ষিণের অলিগলি। কিন্তু আজ যেটি সংসদে হল, সেটিও কম রোমাঞ্চকর নয়। তবে এ শশীকলা সেই শশীকলা নন। জয়ললিতার ঘনিষ্ঠ শশীকলার পদবী নটরাজন। আর আজ সংসদে জয়ললিতার দলের যে শশীকলা কেঁদে একসা করলেন, তার পর দল থেকে বহিষ্কৃত হলেন— তিনি শশীকলা পুষ্পা।

এই চিত্রনাট্যেও রয়েছে চড়া দাগের নাটক। গলার টুঁটি চেপে ধরা, চড়থাপ্পর, প্রেম-ভালবাসা, কান্না, আবেগ।

রাজ্যসভা শুরু হতেই ভাইস চেয়ারম্যান পি জে কুরিয়নকে হিমশিম খেতে হচ্ছিল সরকারের বিরুদ্ধে দলিত-বিতর্ক নিয়ে বিরোধীদের হামলা সামলাতে। সেটিকে সবেমাত্র কাবু করেছেন, তার পরেই বিস্ফোরণ জয়ললিতার দলের সাংসদ শশীকলা পুষ্পার। উঠে বললেন, তিনি নিরাপদ নন। তাঁকে তাঁর দলের নেতা চড় মেরেছেন। কান্নায় ফেটে পড়লেন। অভিযোগ করলেন, তামিলনাড়ুতে তাঁর দলের প্রবল প্রতিপক্ষ করুণানিধির দলের সাংসদ তিরুচি শিবার সঙ্গে তাঁর প্রবল বাগবিতণ্ডার কথা।

আরও পড়ুন: চাপে টালমাটাল, ফেসবুকে ইস্তফার কথা ঘোষণা করে দিলেন আনন্দীবেন পটেল

কিন্তু জয়ললিতার দলের এই সাংসদ যখন এই কথাগুলি বলছিলেন, তোপ দাগছিলেন প্রতিপক্ষ ডিএমকের এক সাংসদের বিরুদ্ধে, তখন রাজ্যসভায় দেখা গেল খোদ ডিএমকে আর তাদের রাজনৈতিক সহযোগী কংগ্রেসকে পুরোদস্তুর সমর্থন করতে। ধোঁয়াশা কাটেনি তখনও। ধীরে ধীরে রহস্য উন্মোচন হল। মিনিটখানেকের মধ্যে খবর এল, খোদ মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য শশীকলাকে সব পদ থেকে বরখাস্ত করেছেন।

সংসদের অনেকেই তখনও তাজ্জব! কারণ, দু’দিন আগে দিল্লি বিমানবন্দরে তিরুচি শিবার গলার টুঁটি চেপে ধরে চারটি থাপ্পড় বসিয়েছেন এই শশীকলা। তাঁর অভিযোগ, এক বিমানে শশীকলার সঙ্গে সফর করবেন না বলে শিবা ‘আম্মা’র সম্পর্কে না কি কুকথা বলেছেন। তা সহ্য করতে না পেরে শশীকলা চড় মেরেছেন শিবাকে। কোনও রকমে বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফ কর্মীরা তাঁদের আলাদা করেন। শশীকলা চেন্নাই ফিরে গেলেও শিবা বিমানে না চেপে দিল্লিতেই থেকে যান। তার পরেও এমন শাস্তি?

রহস্যের কুয়াশা কাটতেই বোঝা গেল, আসলে গোটাটাই করুণানিধির চিত্রনাট্য। ক্ষমতায় আসার পর জয়ললিতা ডিএমকে এবং কংগ্রেস ভাঙিয়ে লোকজন নিজের দলে নিয়ে আসছেন। তার বদলা নিতে করুণানিধিও জয়ললিতার দলে ভাঙন ধরাতে চাইছেন। দু’বছর আগে স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকে তিরুচি শিবার সঙ্গে এআইএডিএমকে সাংসদ শশীকলার ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় উভয়ের ঘনিষ্ঠতার ছবি ভাইরালও হয়। করুণানিধি-কন্যা কানিমোঝির সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়ে শশীকলার। কানিমোঝির জন্মদিনে শুভেচ্ছাও জানান। এগুলি জয়ললিতার কানে আসতেই সতর্ক করা হয় শশীকলাকে। তাঁকে পদত্যাগ করার চাপও বাড়ানো হয়।

কিন্তু শশীকলা চাইছিলেন, পদত্যাগ না করে তাঁকে বহিষ্কার করা হোক। তাতে তাঁর রাজ্যসভার পদটি টিকে থাকে। সে সূত্র ধরে করুণানিধি একটি চিত্রনাট্য তৈরি করেন। বিমানবন্দরের সকলের সামনে শিবাকে থাপ্পড় মারাও না কি সেই চিত্রনাট্যের অঙ্গ। কাল রাতে জয়ললিতা ফোন করে শশীকলাকে ইস্তফা দিতে বলেন। তার পরেই সংসদে এসে আজ কান্নাকাটি জুড়ে বসেন শশীকলা। দল থেকে বহিষ্কারের পর তিনি অনেকটা স্বস্তিতে। তার পরে যেটি বললেন, সেটি আরও বিস্ফোরক। বললেন, ‘‘দলের জন্য এত মেহনত করেছি। তার পরেও জয়ললিতা আমাকে চড় মেরেছিলেন। আজ বহিষ্কার করেছেন, আমি স্বস্তিতে।’’ এরপরেই শশীকলা ধন্যবাদ জানান সনিয়া গাঁধী ও রাহুল গাঁধীকে, আজ সংসদে কংগ্রেস তাঁকে সমর্থন করায়। ধন্যবাদ জানান ডিএমকে নেতাদেরও।

তা হলে কি দল থেকে বহিষ্কারের পর এ বারে কংগ্রেস বা ডিএমকে-তে যাচ্ছেন শশীকলা? তাঁর জবাব, ‘‘আগে তো ঠিক করে দেখি আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তারপর ভেবে দেখব।’’

Sasikala Pushpa Parliament Slapping
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy