Advertisement
২৪ মে ২০২৪

বাজারের সড়ক গড়ল স্কুলপড়ুয়ারা

প্রতি বছরই বর্ষায় বালিপাড়ার খেলমাটি সাপ্তাহিক বাজারে জমে হাঁটুজল, কাদার স্তূপ। নাজেহাল হন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

বাজারে পাকা সড়ক গড়ছে স্কুলপড়ুয়ারা। শোণিতপুরের বালিপাড়ায়। — নিজস্ব চিত্র

বাজারে পাকা সড়ক গড়ছে স্কুলপড়ুয়ারা। শোণিতপুরের বালিপাড়ায়। — নিজস্ব চিত্র

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৪৯
Share: Save:

প্রতি বছরই বর্ষায় বালিপাড়ার খেলমাটি সাপ্তাহিক বাজারে জমে হাঁটুজল, কাদার স্তূপ। নাজেহাল হন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

হাটের কাছেই অসম ভ্যালি স্কুল। ছাত্রছাত্রীরা দেখেছিল হাটের দুর্দশার ছবি। সমাজসেবা রয়েছে স্কুলের পাঠ্যক্রমে। একাদশ শ্রেণির সুকন্যা হাজরিকা, রোহিত অগ্রবাল, আয়ুষি জৈন ও শ্রেয়াংশ অগ্রবালরা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে দরবার করে— হাতেকলমে সমাজসেবা করতে চায় তারা। গড়তে চায় হাটে যাওয়ার পাকা সড়ক। কিন্তু সরকারের কাজে নাক গলালে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কায় নিমরাজি ছিল স্কুল। পরে আরও ছাত্রছাত্রীকে জড়ো করে ‘চারমূর্তি’। সকলের চাপেই রাজি হন শিক্ষকরা। কাজ শুরু করে স্কুলের ‘সোশ্যাল সার্ভিস লিগ’। কিন্তু টাকার জোগান কে দেবে? সেই ভারও ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের কাঁধে তুলে নেয়। শুরু হয় চাঁদা তোলা।

শোণিতপুর জেলার বালিপাড়ায় চা বাগানে প্রায় ৯৫ একর নিয়ে ছড়ানো অসম ভ্যালি স্কুল। ১৯৯৫ সালে তৈরি ওই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার পাশাপাশি আশপাশের চা বাগানের ছাত্রছাত্রীদেরও পড়াতে হয়। প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে অন্তত এক জন নিরক্ষরকে সাক্ষর করতে হয়। নিয়ম করে যেতে হয় অনাথালয় বা হাসপাতালে। অন্যের দুঃখ ভাগ করে নিতে। তখন তারা দেখেছিল, এলাকায় মেয়েদের জন্য শৌচালয়ের অভাবও।

রাস্তা তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনার মধ্যেই ঠিক হয়, টাকা যখন তোলা হচ্ছে, তখন মেয়েদের শৌচালয় গড়ার টাকাও জোগাড় করা যাক। টিচার ইন-চার্জ দেবযানী শর্মা বোরা জানান, যে যতটা পেরেছে টাকা জোগাড় করেছে। সব মিলিয়ে সাড়ে আটশো ছাত্রছাত্রীর জোগাড় করে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা। তার কিছুটা দিয়ে খেলমাটি হাটের ৯০ মিটার রাস্তা সিমেন্টে বাঁধানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ছাত্রছাত্রীরা দাবি তোলে, তারা নিজের হাতে রাস্তা তৈরি করে দেবে। শ্রমিকদের তত্ত্বাবধানে ছাত্রছাত্রীরাই সিমেন্টের ব্লক হাতে হাতে বয়ে নিয়ে রাস্তা তৈরি শুরু করে। গত শনিবার পর্যন্ত ৪২ মিটার রাস্তা তৈরির কাজ শেষ। রবিবার ছুটি নিয়ে গত কাল থেকে ফের কাজ শুরু করেছে তারা। সরকারকে বার বার বলেও যে রাস্তায় নজর পড়েনি, রাতারাতি স্কুলের পোশাক পরা বাচ্চাদের হাত ছুঁয়ে সেই রাস্তাই পাকা হয়ে উঠতে দেখে অবাক ও বেজায় খুশি স্থানীয় মানুষ।

স্কুলের অধ্যক্ষ সোনিয়া গাঁধী মেহতা বলেন, ‘‘শুধু কেরিয়ার গড়াই নয়, মানুষ গড়ার চেষ্টাই করে স্কুল। পুঁথিগত জ্ঞানের পাশাপাশি এই যে মানুষের জন্য নিজেদের হাতে রাস্তা তৈরি করছে ছেলেমেয়েরা, সেই শিক্ষা তাঁদের ভবিষ্যৎ জীবনে অনেক এগিয়ে দেবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

School Students
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE