Advertisement
E-Paper

পাঁচিলে আঁকা ব্ল্যাকবোর্ড, মাথায় মেট্রো

২০০৬ থেকে স্কুল চালাচ্ছেন রাজেশ কুমার শর্মা। মুদির দোকান আছে। নিজে পড়াশোনা বেশি করতে পারেননি বলে দুঃখ ছিল। যমুনা পাড়ের বস্তির ছেলেমেয়েদের পড়ানো শুরু করেন। ২০১০ থেকে আস্তানা এই মেট্রো সেতুর নীচে। পড়ুয়ারাই রং করে, ছবি এঁকে, স্কুলের নাম লিখেছে।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৮ ০৩:৩৯
পঠনপাঠন: উড়ালপুলের নিচে সেই অবৈতনিক স্কুল। —নিজস্ব চিত্র

পঠনপাঠন: উড়ালপুলের নিচে সেই অবৈতনিক স্কুল। —নিজস্ব চিত্র

যমুনা ব্যাঙ্ক মেট্রো রেললাইনের ৫ নম্বর স্তম্ভ থেকে ৬ নম্বর স্তম্ভ। এটাই ঠিকানা। স্টেশনের পাঁচিলের গায়ে খোপ কেটে কালো রং। ব্ল্যাকবোর্ড। মাথার উপর মেট্রো রেলের মস্ত সেতু। কয়েক মিনিট পরপরই গুম-গুম আওয়াজ তুলে ট্রেন ছুটছে। সার্থকনামা বিদ্যাঙ্গন— ‘ফ্রি স্কুল আন্ডার দ্য ব্রিজ’।

ক্লাস সেভেনের শ্রেয়াঙ্কা কুমারী কোন রাজ্যের কী রাজধানী মুখস্থ করছিল। বাড়ি কোথায়? জবাব মিলল, ‘‘ওই যে যমুনা নদীর ধারে।’’ বাবা কী করেন? ‘‘রিসকা পুলার।’’ শ্রেয়াঙ্কারা চার বোন, এক ভাই। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। বাকি তিন বোন সকালে চলে আসে মেট্রো সেতুর নীচের স্কুলে। শকরপুরের সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে নাম লেখানো রয়েছে। দুপুরে সেখানে যাওয়ার আগে পড়াশোনা ঝালিয়ে নেওয়া।

২০০৬ থেকে স্কুল চালাচ্ছেন রাজেশ কুমার শর্মা। মুদির দোকান আছে। নিজে পড়াশোনা বেশি করতে পারেননি বলে দুঃখ ছিল। যমুনা পাড়ের বস্তির ছেলেমেয়েদের পড়ানো শুরু করেন। ২০১০ থেকে আস্তানা এই মেট্রো সেতুর নীচে। পড়ুয়ারাই রং করে, ছবি এঁকে, স্কুলের নাম লিখেছে। পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়তে বাড়তে ২৭০ ছাড়িয়েছে। সকলেই আশপাশের বস্তির বাসিন্দা। ভিন রাজ্য থেকে দিল্লিতে কাজ করতে আসা শ্রমিক-মজুরদের সন্তান।

মুখে-মুখে রাজেশ শর্মার স্কুলের নাম ছড়িয়েছে গোটা দিল্লিতে। এপ্রিলে নরেন্দ্র মোদী রেডিওর ‘মন কি বাত’-এ
এই স্কুলের কথা বলেন। তার পর ফেসবুক-টুইটারে আরও খ্যাতি বেড়েছে। কেউ বই-পেন-পেনসিল, কেউ টুপি-ইউনিফর্ম পাঠান। চাঁদা তুলে তৈরি হয়েছে শৌচালয়। শনিবার যেমন কাঠফাটা গরমে হাজির হল নরম পানীয় আর আইসক্রিম।

রাজেশ বলেন, ‘‘এই স্কুলে পড়ে ছেলেমেয়েরা সিবিএসই-তে ৭০-৭৫ শতাংশ নম্বর আনছে। আসল সাফল্য এটাই। পড়ানোর ইচ্ছায় অনেকে চলে আসেন।’’ গোরক্ষপুরের রাহুল গুপ্ত যেমন। দিল্লি এসে সিভিল সার্ভিসের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পড়ার ফাঁকে হাতে ম্যাপ নিয়ে হাজির। ‘‘এক দিন রাতে মেট্রো স্টেশন থেকে বেরিয়ে ঝড়-বৃষ্টিতে এখানে আটকে পড়ে দেখি, দেওয়ালে স্কুলের নাম লেখা। পরদিন সকালে এসে দেখি, স্কুল বসে গিয়েছে। ছেলেমেয়েগুলো খুব বুদ্ধিমান। একটু সময় নিয়ে পড়ালেই ধরে ফেলে।’’

শকরপুরের সরকারি স্কুলের বান্টি মহম্মদ যেমন। ক্লাস নাইনের চৌকস বান্টি বলে, ‘‘আমার দাদা এই স্কুলে পড়েই বারো ক্লাস পাশ করেছে। আমিও মন দিয়ে পড়ছি।’’ পাশ করে কী করবে? স্কুলের ছাদ, মেট্রো রেলের সেতুর দিকে আঙুল দেখিয়ে বান্টি বলে, ‘‘ওই মেট্রো ট্রেন চালাব।’’

Free School Delhi Metro Bridge Rajesh Sharma Underpriviledged Children Students Education
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy