Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রকাশ্যে সেনা পোশাক বিক্রি বন্ধ পঞ্জাবে

সেনা পোশাক বিক্রির জন্যই নাম ছিল স্টেশন চত্বরের উল্টো দিকের গলিটার। জামা-প্যান্ট তো বটেই, মোজা, জুতো, ব্যাগ, টুপি এমনকী সেনা তাঁবুও ঢেলে বিকোত সেখানে। পঠানকোট হামলার জেরে লাটে উঠেছে সেই ব্যবসা।

সংবাদ সংস্থা
লুধিয়ানা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:১৬
Share: Save:

সেনা পোশাক বিক্রির জন্যই নাম ছিল স্টেশন চত্বরের উল্টো দিকের গলিটার। জামা-প্যান্ট তো বটেই, মোজা, জুতো, ব্যাগ, টুপি এমনকী সেনা তাঁবুও ঢেলে বিকোত সেখানে।

পঠানকোট হামলার জেরে লাটে উঠেছে সেই ব্যবসা। ভারতীয় সেনার তরফে সেনা পোশাক বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। দোরে দোরে ঘুরে জলপাই রঙা পোশাক কিনতে বারণ করা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

সেনা পোশাকেই পঠানকোটের বায়ুসেনা ঘাঁটিতে ২ জানুয়ারি হামলা চালিয়েছিল পাক-জঙ্গিরা। ‘ইউনিফর্ম’-এ ছিল বলেই পঠানকোট যাওয়ার পথে চেকপোস্ট গুলিতে তেমন বাধা পেতে হয়নি তাদের। আর যাতে সে ভুল না হয়, তা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ বলে দাবি করছেন কর্তৃপক্ষ। নিষেধাজ্ঞার জেরে লহমায় পাল্টে গিয়েছে স্টেশন সংলগ্ন কাবারিয়া বাজারের (স্ক্র্যাপ মার্কেট) ছবিটা। ছোট, বড়, মাঝারি সব দোকানে এত দিন শুধুই ‘ইউনিফর্ম’ বিক্রি হতো। এখন সেখানে বিকোচ্ছে রং-বেরঙের ফ্রক, শার্ট।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন শহর থেকে বিশেষত দিল্লি, লখনউ থেকে সেনা পোশাক আমদানি করতেন তাঁরা। অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীরাই মূলত পোশাক বেচে দিতেন। চাকরি থাকাকালীনও বাতিল পোশাক বেচতেন অনেকে। যে ‘ইউনিফর্ম’গুলি মোটামুটি ভাল অবস্থায় থাকে, ৩০০-৫০০ টাকায় সেগুলি কিনে ৭০০-৯০০ টাকায় বিক্রি করতেন তাঁরা। জঞ্জালকুড়ানিদের নিয়ে আসা ছেঁড়াফাটা পোশাকও জুতসই করে চালিয়ে দিতেন। পঠানকোটের জঙ্গিরা ভাতে মারল তাঁদের,
আক্ষেপ ব্যবসায়ীদের।

ফি-বছর সেনাকর্মীদের বিনামূল্যে পোশাক দেয় সরকার। তবে অনেক সময়ই গায়ে খাপ খায় না সেগুলি। অগত্যা খোলা বাজার থেকে নিজেদের ‘ইউনিফর্ম’ সেলাই করে নেন তাঁরা। সরকারের দেওয়া পোশাকের থেকে টেকসইও হয় সেগুলি। চাকরি জীবনে সব মিলিয়ে ১৫-২০টি ‘ইউনিফর্ম’ হাতে আসে কর্মীদের। চাকরি জীবনের স্মৃতি হিসেবে এক-আধটা কেউ কেউ রেখে দেন। বাকিগুলি বেচে দেন লুধিয়ানার মতো বিভিন্ন শহরে। সরকারের দেওয়া আসল ‘কস্টিউম’ বিক্রি করে চড়া দামও পান তাঁরা। পোশাক বিক্রির তালিকায় রয়েছেন সেনা কর্তারাও। তাঁদের পোশাকগুলির দর আরও বেশি। ব্যবসায়ীরাই জানাচ্ছেন, স্টেশনের উল্টো দিকে স্ক্র্যাপ মার্কেটই শুধু নয়, সেনা পোশাক এ ভাবে ঢালাও বিকোয় পঠানকোট, অম্বালা, জালন্ধর, ফিরোজপুরের ক্যান্টনমেন্টের আশপাশেও।

কড়াকড়ি শুরু হয়েছে খোলা বাজারে সেনা পোশাক সেলাই করা নিয়েও। অনুমোদিত দর্জি ছাড়া অন্য কোথাও পোশাক বুননে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। কেউ পোশাক সেলাই করাতে এলে পরিচয়পত্র যাচাই করে নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দর্জিদেরও।

এত বিধিনিষেধ আদৌ কী কাজে আসবে? ‘এক্স-সার্ভিসমেন ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’-র সাধারণ সম্পাদক মেজর এসএস অওলাখের জবাব, ‘‘সরকারের দেওয়া ইউনিফর্ম বিক্রি অপরাধ। বিক্রির পর সেটি কার হাতে গিয়ে পড়ছে তা কেউ বলতে পারে না। চাকরির শর্ত অনুযায়ী সরকার আমাদের ইউনিফর্ম ফেরত নেয় না। কিন্তু এখন নিয়ম বদলের সময় এসেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE