মাস তিনেক আগে পহেলগামে যে জঙ্গি হামলা গোটা দেশকে নাড়া দিয়েছিল, যার জেরে পাকিস্তানে ‘অপারেশন সিঁদুর’ হানল নরেন্দ্র মোদী সরকার, তার পর বিভিন্ন দেশে দূত পাঠিয়ে ভারতের অবস্থান ব্যাখ্যা করল, গত কাল সেই হামলার অন্যতম তিন ষড়যন্ত্রীকে প্রায় নীরবেই নিকেশ করল সেনাবাহিনী। সোমবার সংসদের অধিবেশনে বিরোধীদের হইচইয়ের মুখে হঠাৎই সে কথা জানালেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। তিনি জানান, শ্রীনগরের কাছে হারওয়ান এলাকায় ৪ নম্বর প্যারা-রেজিমেন্টের সেনা সুলেমান শাহ ওরফে হাশিম মুসা, জিবরান ও হামজ়া আফগানি নামে লস্কর-ই-তইবার তিন জঙ্গিকে হত্যা করেছে। পাকিস্তানি সেনার প্রাক্তন কমান্ডো সুলেমানই পহেলগামে হামলার মূল চক্রী। প্রশ্ন উঠছে এখানেই। এত বড় একটা অভিযান ঘিরে কেন এত নীরবতা, এত গোপনীয়তা? হামলার পরে এত দিন কেন সময় লাগল দুষ্কৃতীদের নিকেশ করতে? এটা কি তা হলে কেন্দ্রীয় সরকারের নজরদারিতে ব্যর্থতা ছিল না কি এটি বিশেষ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত?
প্রশ্ন উঠছে, হামলার পরের এই ৩ মাস নিয়ে। গোয়েন্দাদের কাছে যথাযথ তথ্য থাকলেও আগে অভিযান চালানো হয়নি কেন? এর ফলে জঙ্গিরা হাতে অনেকটা সময় পেয়ে গিয়েছে। ওই সময়ে তারা সংগঠন আরও জোরদার করেছে। আরও অস্ত্র জোগাড় করেছে। সরকারি একটি সূত্রের খবর, হারওয়ানে জঙ্গি সমাবেশের খবর খুব সম্প্রতি গোয়েন্দাদের হাতেআসে। তার ভিত্তিতেই অভিযান চালানো হয়। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে গোয়েন্দারা কি কিছুই জানতেন না? এটা কি গোয়েন্দাদের ব্যর্থতা?
শুধু সময় নয়, প্রশ্ন উঠছে অভিযানের ধরন নিয়েও। ‘অপারেশন মহাদেব’ নামে এই জঙ্গিদমন অভিযান চালিয়েছে ৪ নম্বর প্যারা-রেজিমেন্টের বিশেষ বাহিনী। অথচ ওই এলাকাতেই মোতায়েন রয়েছে কাশ্মীরের রাষ্ট্রীয় রাইফেলস অথবা সেনার অন্য শাখাও। জম্মু-কাশ্মীরে এই ধরনের যে কোনও অভিযানে সাধারণত সেনার সঙ্গে অংশ নেয় স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন ও গোয়েন্দা বাহিনী। সেখানে এই অভিযানে স্থানীয় গোয়েন্দা সূত্র বা প্রশাসনকে এক রকম অন্ধকারে রাখা হয়েছিল। ফলে অভিযানের ধরন নিয়েও সন্দেহ দানা বাঁধছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক পুলিশকর্তা বলেন, এর দু’টো অর্থ হতে পারে। এক, স্থানীয় গোয়েন্দা সূত্র ও পুলিশ-প্রশাসনের উপরে কেন্দ্রের ভরসা না থাকা। দুই, এটি একটি বিশেষ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এই ধাঁধার উত্তর না মেলা পর্যন্ত সাফল্যের থেকেও অভিযান ঘিরে রহস্য নিয়েই মানুষের মনে প্রশ্ন থেকে যাবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)