Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Sharad Pawar

Sharad Pawar: ‘ও সবে নেই’, ইউপিএ-র দায়িত্ব নিতে চান না শরদ

এই অবস্থায় অন্য কেউ দায়িত্ব নিন শতাব্দীপ্রাচীন দলের। কিন্তু কংগ্রেসের গান্ধী পরিবার অনুগামীরা আবার তাতে নারাজ। এই সুযোগ ভোটের ময়দানে পুরোদস্তুর তুলে নিচ্ছে বিজেপি। ফলে তাদের জমি যেমন শক্ত হচ্ছে, তেমনই জমি হারাচ্ছে বিরোধী জোট।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২২ ০৬:২৬
Share: Save:

এ যেন শরৎচন্দ্রের গল্পের ‘লাও তো বটে আনে কে’ অবস্থা!

এখন থেকে বিজেপি-বিরোধী জোট ঠিক মতো না গড়তে পারলে ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে বিজেপি যে এক রকম বিনা বাধায় ফের সরকার গড়বে, সেটা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন বিরোধী শিবিরের নেতারা। তাই বারবার একটা শক্তিশালী বিজেপি-বিরোধী জোট গড়ার কথা গত তিন বছর ধরে বলা হচ্ছে বটে, কিন্তু তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। কারণ সেই জোটের নেতা কে হবেন, এই প্রশ্নেই আটকে রয়েছে পুরো পরিকল্পনা। কারণ কংগ্রেসকে জোটের নেতা হিসেবে মানতে নারাজ বহু দল। এই অবস্থায় প্রবীণ এনসিপি নেতা শরদ পওয়ারের হাতে এই জোটের নেতৃত্বভার তুলে দেওয়ার জন্য একাধিক অ-কংগ্রেসি দল এবং নেতা সওয়াল করলেও তাতে রাজি নন পওয়ার। বরং সে রকম কোনও সম্ভাবনা সপাট উড়িয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমাকে ইউপিএ-র চেয়ারপার্সন হিসেবে ঘোষণা করে আমার দলের যুব শাখা সম্প্রতি যে প্রস্তাব পাশ করেছে, আমি তাতে একেবারেই উৎসাহিত নই। আমি ও সবের মধ্যে নেই। আমি ওই সব দায়িত্ব নিতেও পারব না।’’ তবে বিরোধী শিবিরকে কিছুটা আশা জুগিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘যদি বিজেপি-বিরোধী কোনও বিকল্প গড়ে তোলার চেষ্টা হয়, তা হলে আমি সেই জোটকে সব রকম ভাবে সাহায্য করব। তাকে শক্তিশালী করব, সমর্থনও করব।’’

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, এই মুহূর্তে বিজেপি-বিরোধী দলগুলির যা অবস্থা, তাতে অনেকেই ‘আমরা সবাই রাজা’ মনোভাব নিয়ে চলছেন। ইউপিএ-র অস্তিত্বই মানতে নারাজ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা ছাড়া কংগ্রেসকে কোনও বিজেপি-বিরোধী জোটের নেতৃত্বে মানতেও তিনি নারাজ। বিজেপি-বিরোধী জোটের নেতা হিসেবে কংগ্রেসকে মানতে যাঁদের সবচেয়ে বেশি আপত্তি, তাঁদের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও রয়েছেন তেলঙ্গানার কে চন্দ্রশেখর রাও, আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরীওয়াল, অন্ধ্রপ্রদেশের জগন্মোহন রেড্ডি। এ ছাড়া বিএসপি-র মায়াবতী বা ওড়িশার নবীন পট্টনায়ক অলিখিত ভাবে বিজেপি শিবিরে। বাকি দলগুলির অনেকেই অবশ্য কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে রাজি। কিন্তু তাদের শক্তি সীমিত। প্রভাবও।

এমন একটা অবস্থায় কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে তৈরি হওয়া ইউপিএ-র নেতৃত্বভার এনসিপি-র প্রধান শরদ পওয়ারের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য বেশ কয়েক মাস ধরে সক্রিয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মহারাষ্ট্রের শাসক জোটের অন্যতম দল শিবসেনার সঞ্জয় রাউতও পওয়ারকে বিরোধী-জোটের নেতা হিসেবে তুলে ধরতে সক্রিয়। সঞ্জয় বা তাঁর দলের অবশ্য কংগ্রেসকেও নেতৃত্বে হিসেবে মানতে সমস্যা নেই। বাম দলগুলি, তামিলনাড়ুর ডিএমকে, বিহারের আরজেডি-র মতো দলও কংগ্রেসের নেতৃত্বে জোটে থাকতে অরাজি নয়। এই অবস্থায় পওয়ারের নিজের দল তাঁকে ২০০৪ সালের সনিয়া গান্ধীর ভূমিকায় দেখতে চাইলেও তাতে রাজি নন খোদ মরাঠা-স্ট্রংম্যান।

বিজেপি-বিরোধী জোটের মুখ হওয়ার মতো সুযোগ তিনি নিতে নারাজ কেন? রাজনৈতিক শিবিরের ব্যাখ্যা, পওয়ারের দল এনসিপির অস্তিত্ব মূলত মহারাষ্ট্রেই। অন্য কয়েকটি রাজ্যে তাদের উপস্থিতি থাকলেও, তা সে রকম উল্লেখযোগ্য নয়। কংগ্রেসের মতো সর্বভারতীয় সংগঠন বা ভাবমূর্তি কোনওটাই তাঁর বা তাঁর দলের নেই। তা ছাড়া, মমতা চাইলেও কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে সামগ্রিক জোট গড়া যে অবাস্তব, তা বিলক্ষণ বোঝেন প্রবীণ নেতা। একই অবস্থা অন্যদেরও। এই অবস্থায় এ ধরনের একটা জোটে কংগ্রেসকে পিছনের সারিতে ঠেলে দিলে তাঁকে বাকি আঞ্চলিক দলগুলির কথা মেনে চলতে হবে। সেখানেই আপত্তি তাঁর।

গত এক দশকে দেশ জুড়ে একের পর এক ভোটে হেরে বিরোধী জোটে ক্রমশ জমি হারিয়েছে কংগ্রেস। সম্প্রতি পাঁচ রাজ্যের ভোটেও তাদের ভরাডুবি হয়েছে। রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর নেতৃত্ব নিয়ে কংগ্রেসের একাংশ ক্ষুব্ধ। তাঁরা বলছেন, গত আট বছরে দলকে যথাযথ নেতৃত্ব দিতে বারেবারে ব্যর্থ হয়েছেন রাহুল। তিনি ভাল ভাল কথা বললেও তা যে ভোট টানতে ব্যর্থ, তা বোঝা গিয়েছে বারবার। এই অবস্থায় অন্য কেউ দায়িত্ব নিন শতাব্দীপ্রাচীন দলের। কিন্তু কংগ্রেসের গান্ধী পরিবার অনুগামীরা আবার তাতে নারাজ। এই সুযোগ ভোটের ময়দানে পুরোদস্তুর তুলে নিচ্ছে বিজেপি। ফলে তাদের জমি যেমন শক্ত হচ্ছে, তেমনই জমি হারাচ্ছে বিরোধী জোট।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE