Advertisement
E-Paper

দিল্লির পাশে থেকেছে ঢাকা, মোদীর কাছে ‘প্রতিদান’ চান হাসিনা

মোদীর জবাব জানা যায়নি। তবে ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধনের পরে বক্তৃতায় তিনি জানান, বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য পরিকাঠামো খাতে ৮০০ কোটি ডলার সাহায্য দিয়েছে দিল্লি। বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়িয়ে ১১০০ মেগাওয়াট করা হবে। মহাকাশ প্রযুক্তিতেও সাহায্য করতে চায় দিল্লি।

অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৮ ০৩:৪৯
আলাপচারিতা: বিশ্বভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শেখ হাসিনা এবং নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার শান্তিনিকেতনে। ছবি: সুমন বল্লভ

আলাপচারিতা: বিশ্বভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শেখ হাসিনা এবং নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার শান্তিনিকেতনে। ছবি: সুমন বল্লভ

দিয়েছেন অনেক, প্রতিদানে এ বার ভারতের সহযোগিতা চান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার শান্তিনিকেতনের ‘বাংলাদেশ ভবনে’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকে এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন হাসিনা।

শুক্রবার ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধনের পরে সেখানেই মোদীর সঙ্গে বৈঠকে হাসিনা জানিয়েছেন— তাঁর সরকার উত্তর-পূর্বের জঙ্গিদের দেশছাড়া করেছে, ট্রানজিট দিয়েছে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে বরাবর দিল্লির পাশে থেকেছে। বাংলাদেশের নির্বাচনের বছরে এ বার তাই ভারতের সহযোগিতা চাই। কূটনৈতিক সূত্রে খবর, মোদীকে হাসিনা বলেছেন, তাঁর বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্ন ছিল পাকিস্তানি শোষণে ছিবড়ে হয়ে যাওয়া বাংলাদেশকে মর্যাদার সঙ্গে বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড় করানো। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে নেমেছেন তিনি। মুক্তিযু্দ্ধের মতো এই কাজেও ভারতকে পাশে চান।

১৯৭২-এর ৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীকে পাশে নিয়ে কলকাতার জনসভায় সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘‘নিঃস্ব আমি, রিক্ত আমি। দেওয়ার কিছু নেই। শুধু বুক ভরা ভালবাসা জানাই ভারতের মানুষকে।’’ ছেচল্লিশ বছর পরে হাসিনার বার্তা, তাঁরা যা দিয়েছেন, ভারত এ বার তার প্রতিদান দিক।

মোদীর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তিনি কী বলবেন, উপদেষ্টাদের সঙ্গে আগেই আলোচনা সেরে এসেছিলেন হাসিনা। তাঁর দফতরের এক সূত্র জানান, হাসিনার বার্তা— মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে সরাতে, বাংলাদেশকে ফের পাকিস্তান বানানোর চক্রান্ত চলছে। আওয়ামি লিগ ক্ষমতা হারালে পশ্চিমে আর পূবে— দু’দিকেই পাকিস্তান নিয়ে ঘর করতে হবে ভারতকে। তাই ভারতের উচিত বাংলাদেশের বর্তমান সরকারই যাতে ক্ষমতায় ফেরে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা।

মোদীর জবাব জানা যায়নি। তবে ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধনের পরে বক্তৃতায় তিনি জানান, বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য পরিকাঠামো খাতে ৮০০ কোটি ডলার সাহায্য দিয়েছে দিল্লি। বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়িয়ে ১১০০ মেগাওয়াট করা হবে। মহাকাশ প্রযুক্তিতেও সাহায্য করতে চায় দিল্লি।

ভবন উদ্বোধনের প্রারম্ভিক বক্তৃতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পদ্মা, মেঘনা, যমুনায় অনেক জল গড়িয়েছে। আরও জল গড়াবে। দুই দেশের সুসম্পর্কও এগিয়ে চলবে।’’ দুই প্রধানমন্ত্রীর একান্ত আলোচনায় তিস্তা প্রসঙ্গ ওঠা স্বাভাবিক বলে অনেকেই মনে করেছেন। যদিও এ নিয়ে কেউই প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। তবে তার আগে বক্তৃতায় হাসিনা বলেন, ‘‘অনেক অর্জনের মধ্যে কিছু বকেয়াও রয়েছে, যা উল্লেখ করে এমন সুন্দর অনুষ্ঠানের অঙ্গহানি করতে চাই না আমি!’’

মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী কালে ভারতের অবদান স্মরণ করতে গিয়ে এ দিন গলা ধরে আসে হাসিনার। তিনি বলেন, ‘‘এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিলেন ভারতের মানুষ। যুদ্ধে প্রশিক্ষণ দিয়েছে, অস্ত্র দিয়েছে। লড়াইয়ে প্রাণও দিয়েছেন ভারতের সেনারা।’’ ১৯৭৫-এর ১৫ অগস্ট রাতের কথা স্মরণ করে হাসিনা জানান, শুধু তাঁর বাবা-মা, ভাইদের হত্যা নয়, তাঁর পরিবারের আরও তিনটি বাড়িতে সে রাতে হামলা করে হত্যাকাণ্ড চালায় ‘পাকিস্তানের চরেরা’। ‘‘আমরা দুই বোন-সহ পরিবারের যে ক’জন সে দিন বেঁচে গিয়েছিলাম, ভারতের স্নেহচ্ছায়াতেই কাটিয়েছি পরের কয়েক বছর,’’ বলেন মুজিব-কন্যা। জানান, বাবার স্বভাব ছিল রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি। স্টিমারের ডেক-এ দাঁড়িয়ে ভরাট গলায় উচ্চারণ করতেন, ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই!’ সেই রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনে দুই দেশ মিলে একটি ভবন উদ্বোধন করল। দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হল— দু’টিই রবীন্দ্রনাথের লেখা। হাসিনা জানান, বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথের জমিদারি অঞ্চল শাহজাদপুরে তাঁর সরকার রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেছে।

Sheikh Hasina Narendra Modi India Bangladesh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy