Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ঘর গুছিয়ে এখন জোটে নজর টিপুর

সাইকেল গিয়েছে। দলের রাশও। ‘টিপু’র কাছে এখন শুধু একটা টিকিট চান কাকা শিবপাল যাদব। তাঁর ছেলে আদিত্যর জন্য। খুড়তুতো ভাইয়ের মুখ চেয়ে এটুকু কি করবেন টিপু?

 অখিলেশ ও খুড়তুতো ভাই আদিত্য।

অখিলেশ ও খুড়তুতো ভাই আদিত্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩৯
Share: Save:

সাইকেল গিয়েছে। দলের রাশও। ‘টিপু’র কাছে এখন শুধু একটা টিকিট চান কাকা শিবপাল যাদব। তাঁর ছেলে আদিত্যর জন্য। খুড়তুতো ভাইয়ের মুখ চেয়ে এটুকু কি করবেন টিপু?

ঘনিষ্ঠ মহলে টিপু অর্থাৎ অখিলেশ যাদব জানিয়েছেন, তিনি ব্যাপারটা ভেবে দেখবেন। কথা দিতে পারেননি। নির্বাচন কমিশন গত কাল তাঁকে সাইকেল প্রতীকের অধিকারী ঘোষণা করার পর বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছেন অখিলেশ। আগামিকাল বা পরশু হয়তো জোট ঘোষণাও হয়ে যাবে।

তার আগে আজ সকালে টিপু গিয়েছিলেন বাবার কাছে। ছেলেকে ৩৮ সদস্যের একটি প্রার্থী তালিকা দেন মুলায়ম সিংহ যাদব। সেই তালিকাতেই রয়েছে শিবপাল-পুত্রের নাম। রয়েছে অখিলেশের নির্দেশেই মন্ত্রিত্ব খোয়ানো নারদ রাই এবং ও পি সিংহের নামও। সকালের সেই তালিকায় শিবপালের নাম ছিল না। সূত্রের খবর, রাতে নতুন একটি তালিকা ছেলেকে দেন ‘নেতাজি’। তাতে কিন্তু রয়েছে শিবপালের নাম।

টিপু কি বাবার কথা রাখবেন? ঘনিষ্ঠ মহলে অখিলেশ বলেছেন, তাঁর ও বাবার তালিকার মধ্যে ৯০ শতাংশ প্রার্থীই এক। কিন্তু শিবপাল বা আদিত্যকে নিয়ে কেউই বাজি ধরতে রাজি নন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করাচ্ছেন, মাত্র ক’মাস আগেও মন্ত্রী ছিলেন শিবপাল। ছিলেন রাজ্য সভাপতিও। দল ও পরিবারে ভাঙনের নেপথ্যে শিবপাল এবং অমর সিংহের দিকেই বরাবর আঙুল তুলেছেন অখিলেশরা। শিবপালের প্রভাবেই মুলায়ম দল থেকে ছেলেকে বহিষ্কার করেছিলেন বলে তাঁদের বিশ্বাস।

সাম্প্রতিক পট-পরিবর্তনে সেই শিবপালই এখন কার্যত ক্ষমতাহীন। দলীয় পদ খুইয়েছেন। ভাইপো ফের ক্ষমতায় এলে কল্কে পাবেন না বুঝতে পেরে আগে জানিয়েছিলেন, ভোটে লড়বেন না। কিন্তু তখনও নির্বাচন কমিশনের রায় ঘোষণা বাকি ছিল। গত কালের যে রায় কার্যত বলেছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনপ্রতিনিধি যাঁর দিকে, সেই অখিলেশই ‘প্রকৃত সপা’। ফলে শিবপালের পাশে এখন নিঃসঙ্গ মুলায়ম ছাড়া আর কেউ নেই। লন্ডনে চিকিৎসা করাতে যাওয়া অমর সিংহও বলতে বাধ্য হয়েছেন, ‘‘সপা-য় এখন অখিলেশ যুগ শুরু হয়ে গিয়েছে।’’

ফলে চর্চা শুরু হয়েছে, নিজের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বাঁচিয়ে রাখতে এখন ভাইপোর মুখের দিকেই চেয়ে থাকতে হবে শিবপালকে। তাই মুলায়মের মাধ্যমে তদ্বির চালাচ্ছেন ছেলের টিকিটের জন্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, অখিলেশ যদি কাকাকে টিকিট না-ও দেন, খুড়তুতো ভাইটিকে হয়তো একটা সুযোগ দিলেও দিতে পারেন। কারণ, শিবপালের চেয়ে আদিত্যকে নিয়ন্ত্রণ করা অখিলেশের পক্ষে অনেক সহজ। ২৮ বছর বয়সি আদিত্য উত্তরপ্রদেশ প্রাদেশিক কোঅপারেটিভ ফেডারেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান। বাবার নির্বাচনী কেন্দ্র যশবন্তনগরে দলের দায়িত্বেও রয়েছেন।

অখিলেশ ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, ‘‘টিপু এখন এক জনকেই পাশে চান। নেতাজি। তিনি চান, বাবাকে তিনি অশ্রদ্ধা করেছেন, এমন কোনও বার্তা যেন না যায়।’’ মুলায়মের মূল শক্তি যাদব ভোট। বাবা-ছেলের দ্বন্দ্ব নিয়ে নেতিবাচক বার্তা গেলে তাঁরা অখিলেশের পাশে না-ও থাকতে পারেন। আবার উত্তরপ্রদেশের ১৯ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট বরাবরই নির্ণায়ক শক্তি। তাঁরাও মুলায়মের ভরসা।

সবই জানেন অখিলেশ। সব দিক ভেবেই তাঁর আজ সকালে মুলায়মের বাড়ি যাওয়া। গত ১২ ঘণ্টায় এটা ছিল বাবা-ছেলের দ্বিতীয় সাক্ষাৎ। অখিলেশ বাবাকে বোঝান, দলের স্বার্থেই তাঁকে এই লড়াইয়ে নামতে হয়েছিল। এখন ভোট-যুদ্ধে বাবা যেন তাঁর পাশে থাকেন। মুলায়ম যাতে দল না ভাঙেন, সে ব্যাপারেও তাঁকে বুঝিয়েছেন টিপু।

এক দিকে অখিলেশ যেমন ঘর গোছাচ্ছেন, অন্য দিকে গোছাচ্ছেন জোট। সূত্রের খবর, কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। আজই রাহুল গাঁধীর সঙ্গে এক প্রস্ত কথা হয়েছে অখিলেশের। সপা সূত্রের খবর, সকালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে পাশে দাঁড়ানোর জন্য ধন্যবাদ দিয়েছেন অখিলেশ। সেই সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়ে দিয়েছেন, সব ঠিক থাকলে কংগ্রেসের সঙ্গেই জোট করছেন তাঁরা।

উত্তরপ্রদেশের ভারপ্রাপ্ত কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদও বলে দিয়েছেন, ‘‘কংগ্রেস ও সপা-র মধ্যে জোট আগামী এক-দু’দিনের মধ্যেই ঘোষণা করে দেওয়া হবে।’’ অখিলেশের নেতৃত্ব মেনে নিতে সমস্যা নেই বলে জানিয়ে লড়াই থেকে সরে গিয়েছেন কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী শীলা দীক্ষিত। এখন দেখার, লখনউ না দিল্লি— কোথায় হয় এই জোট ঘোষণা। অখিলেশ দিল্লি আসবেন, নাকি জোট-বার্তা দিতে রাহুল উড়ে যাবেন লখনউ?

কংগ্রেস সূ্ত্র বলছে, জোটের বিষয়টি এখন দেখছেন খোদ রাহুল। কারণ, এ যাবৎ অন্য নেতারা আলোচনা চালানোয় আখেরে জটিলতাই বেড়েছে। রাহুলও বুঝতে পারছেন, আসন নিয়ে চূড়ান্ত দর কষাকষির চেয়ে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে জোট টিকিয়ে রাখাটা অনেক বেশি জরুরি। তাই আসন নিয়ে এখন সরাসরি অখিলেশের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি।

৪০৩ আসনের বিধানসভায় শুরুতে ১১৫-১২০টি আসনের জন্য তদ্বির করেছিল কংগ্রেস। কিন্তু সপা অন্তত তিনশোটি আসনে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে ক্ষেত্রে কংগ্রেস ও জাঠ নেতা অজিত সিংহের রাষ্ট্রীয় লোক দলকে শ’খানেকের বেশি আসন ছাড়া অসম্ভব। সেই অঙ্কে কংগ্রেসকে ৮০টি আসন ছাড়ার কথা ভাবা হচ্ছিল।

তবে সপা’র একাংশ অজিত সিংহের সঙ্গে জোট করার প্রশ্নে সংশয়ী। কারণ লোকসভা ভোটের আগে উত্তরপ্রদেশে জাঠ ও সংখ্যালঘুদের মধ্যে একাধিক গোষ্ঠী সংঘর্ষ হয়েছিল। তাই কারও কারও মতে, সংখ্যালঘুদের পাশে থাকার বার্তা দিতে শেষ পর্যন্ত অজিতকে ব্রাত্য করতে পারেন অখিলেশ। সে ক্ষেত্রে কংগ্রেসের হাতে তুলে দেওয়া যাবে আরও অন্তত ১০টি আসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Akhilesh yadav Shivpal yadav
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE