Advertisement
E-Paper

পোড়ামাটির খেলনা গড়ছে শিলচর

সূর্য ডুবেছে অনেকক্ষণ। তবু আলো জ্বালানোর খেয়াল নেই আমিরউদ্দিন লস্কর, ঋতম চক্রবর্তীর। সন্ধ্যার অন্ধকারেই কাজে মগ্ন তাঁরা। মাটির ঢেলাকে হাতের ছোঁয়ায় খেলনার চেহারা দিচ্ছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৬ ০১:২৬

সূর্য ডুবেছে অনেকক্ষণ। তবু আলো জ্বালানোর খেয়াল নেই আমিরউদ্দিন লস্কর, ঋতম চক্রবর্তীর। সন্ধ্যার অন্ধকারেই কাজে মগ্ন তাঁরা। মাটির ঢেলাকে হাতের ছোঁয়ায় খেলনার চেহারা দিচ্ছেন। বিশাল ঘরের চারদিকে কত খেলনা যে! ঘোড়ার গাড়ি, মাছ, গণেশ, পশুপাখি। রয়েছে নানা চেহারার মানুষ, ঘর সাজানোর উপকরণও। পাশের ঘরেও মজুত প্রচুর। প্রশিক্ষার্থীরা জানালেন, ২১ অক্টোবর থেকে সেগুলি বানিয়েছেন তাঁরা। ২১ অক্টোবর শিলচরে শুরু হয়েছে বরাক উপত্যকার প্রথম পোড়ামাটির কর্মশালা। আয়োজক রূপকার নামে এক সংস্থা। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গণেশ নন্দী এর সভাপতি। তিনিই ৭ দিনের এই প্রশিক্ষণ শিবিরের প্রশিক্ষক। মোট ৩০ জন শিবিরে নাম লিখিয়েছেন। অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্বের ছাত্রছাত্রী। কয়েক জন অবশ্য এরই মধ্যে মাস্টার ডিগ্রি সেরে নিয়েছেন। দু-চারজন রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় গণ্ডির বাইরের।

গণেশবাবু জানালেন, মূল কাজটা হবে শেষ দিনে, ২৭ অক্টোবর। আগামী কাল চুল্লি তৈরি করা হবে। অনেকটা বিস্কুট বেকারির চুল্লিরই মতো। সারাদিন তাতে সমস্ত খেলনা পোড়ানো হবে। এরপরই এরা আসল চেহারা নেবে, লাল রঙে সেজে উঠবে। মাটির জিনিসের স্থায়িত্ব নির্ভর করে পোড়ানোরই উপর, জানান গণেশবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘পোড়ামাটি বা টেরাকোটার কাজে জিনিসপত্র বেশি লাগে না। আঠালো মাটি, বালি, ইটের গুড়োই যথেষ্ট। ফলে এখানে হাতের কাজটাই আসল।’’ সে কাজ শিখতেই বদরপুর, হাইলাকান্দি, করিমগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, উধারবন্দ, কালাইন-- বহু জায়গা থেকে প্রশিক্ষার্থীরা উপস্থিত হচ্ছেন তারাপুর শিববাড়ি রোড়ে রূপকারের অস্থায়ী ঠিকানায়। সন্ধ্যা ৫টাতেই শিবিরে ছুটি মেলে। কিন্তু কাজের নেশায় অনেকে থেকে যান রাত ৭টা-৮টা পর্যন্ত। বিনয় পাল, কিষান বাগতি, প্রসেনজিত সাহা-রা রাত ১০টাতেও এটা-ওটা করতেই থাকেন। পিছিয়ে নেই মেয়েরাও। অনুরাধা রাজোয়ার বারিকনগর থেকে সকালে চলে আসেন। সুয়েতা হুইড্রম, পূজা তাপাড়িয়া, অদিতি পালও কাজে একনিষ্ঠ। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা ভাস্কর সবিতা দেবনাথও নিয়মিত আসছেন প্রশিক্ষণ শিবিরে।

তাঁদের কথায়, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে সিলেবাস মেনে কাজ করতে হয়। একটি বিষয়ের উপর পুরো মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।’’ শিবিরে তাঁরা শুধুই পোড়ামাটির কাজে মনঃসংযোগ করতে পারছেন।

৭ দিনে ২ হাজার পোড়ামাটির সামগ্রী তৈরির পরিকল্পনা তাঁদের। রূপকার-ই সেগুলি বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করবে। শহরের উপহার সামগ্রীর দোকানগুলিতেও তাঁরা চান, স্থানীয় পোড়ামাটির জিনিস থাকুক। তাঁদের ইচ্ছে, বাইরে থেকে যারা এখানে বেড়াতে আসেন, তাঁরা যেন বরাকের নিজস্ব জিনিস কিনে নিয়ে যেতে পারেন। ওই লক্ষ্যে পোড়ামাটিতে খাসপুর রাজবাড়ি তৈরির কথাও ভাবছেন সভাপতি গণেশবাবু।

Silchar Barak Valley stoneware workshop
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy