Advertisement
E-Paper

যুক্তিতে এগিয়ে, তবু ইয়েচুরির বাধা অঙ্কই

শীর্ষ পদে পরিবর্তন আসন্ন। কিন্তু পরিবতর্নের পরে কাণ্ডারী কে? এ বার সিপিএমের পার্টি কংগ্রেস শুরু হওয়ার মুখে সব চেয়ে বড় প্রশ্ন, সীতারাম ইয়েচুরি কি দলের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক হবেন? বিশাখাপত্তনমে সিপিএমের পার্টি কংগ্রেস শুরু হচ্ছে ১৪ এপ্রিল। ছ’দিনের অধিবেশনে সব প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পরে দলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি এবং পলিটব্যুরো গঠন হবে।

জয়ন্ত ঘোষাল

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২৪
নতুন কাণ্ডারী কি ইয়েচুরি?

নতুন কাণ্ডারী কি ইয়েচুরি?

শীর্ষ পদে পরিবর্তন আসন্ন। কিন্তু পরিবতর্নের পরে কাণ্ডারী কে? এ বার সিপিএমের পার্টি কংগ্রেস শুরু হওয়ার মুখে সব চেয়ে বড় প্রশ্ন, সীতারাম ইয়েচুরি কি দলের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক হবেন?

বিশাখাপত্তনমে সিপিএমের পার্টি কংগ্রেস শুরু হচ্ছে ১৪ এপ্রিল। ছ’দিনের অধিবেশনে সব প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পরে দলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি এবং পলিটব্যুরো গঠন হবে। দশ বছর সাধারণ সম্পাদক থাকার পরে এ বার প্রকাশ কারাটের সরে দাঁড়ানোর কথা। দলের এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ইয়েচুরিকে পরবর্তী কাণ্ডারী করার কথা শুরু হয়েছে। তাঁকে সাধারণ সম্পাদক করার পক্ষে সব চেয়ে বড় যুক্তি, মান্ধাতার আমলের ক্লিশে ভাবনাচিন্তা থেকে সিপিএমকে বার করে যদি আধুনিক বাম গড়ে তুলতে হয়, যদি ধর্মনিরপেক্ষ কিন্তু সংস্কার ও শিল্পায়ন অভিমুখে আগামী দিনে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, সে ক্ষেত্রে ইয়েচুরিই উপযুক্ত মুখ। অন্য পলিটব্যুরো সদস্যদের তুলনায় ইয়েচুরির মুখ দলীয় কর্মীদের বাইরে আম জনতা, এমনকী অভিজাত নাগরিক সমাজেও জনপ্রিয়। প্রচার এবং গ্ল্যামারের যুগে এই ‘ব্র্যান্ড ইক্যুইটি’ কাজে লাগানোই বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে মনে করছে দলের একাংশ।

দলীয় সূত্রের খবর, কারাট নিজেও এ বিষয়ে আর আগের মতো অনড় নন। পুরভোটের প্রচারের জন্য কলকাতায় গিয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্রদের সঙ্গে ইয়েচুরিরও আলাপ-আলোচনা হয়েছে। সিপিএম সূত্র বলছে, বাংলার নেতৃত্ব কেরলের এস আর পিল্লাই বা অন্ধ্রের বি রাঘভুলুকে সাধারণ সম্পাদক করার থেকে ইয়েচুরিকে দায়িত্বে দেখতেই বেশি আগ্রহী।

তবে রাজনীতিতে প্রকাশ্য সমর্থন এবং বাস্তবতার মধ্যে ফারাক থেকে যায় অনেক সময়ই। চায়ের পেয়ালা আর ঠোঁটের মধ্যে দূরত্ব শেষ মুহূর্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। দিল্লির এ কে গোপালন ভবন সূত্র বলছে, ইয়েচুরির সব চেয়ে বড় শত্রু ইয়েচুরিই! কমিউনিস্ট পার্টিতে দলের বাইরের জনসমর্থনের থেকে নেতা হওয়ার জন্য অনেক বেশি জরুরি সাংগঠনিক শক্তি। বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির ৮৭ জন সদস্যের মধ্যে রাজ্যওয়াড়ি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ সদস্যই ছিলেন ইয়েচুরি নয়, কারাটের পক্ষে! ফলে কারাট যদি ইয়েচুরির পক্ষে সায় দেন, এমনকী, নিজেই যদি ইয়েচুরির নাম প্রস্তাব করেন, তা হলে কিন্তু দল রাজ্যসভার দলনেতার পক্ষেই রায় দেবে। ভোটাভুটির পথ এড়িয়ে, কারাটের সঙ্গে সংঘাতে না গিয়ে, বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের সিলমোহর নিয়েই যদি ইয়েচুরি পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক পদে
প্রার্থী হন, তবেই তাঁর পক্ষে এই লড়াইয়ে জয় সম্ভব।

দলের সংবিধান অনুসারে, সাধারণ সম্পাদকের নাম প্রস্তাব হলে কেন্দ্রীয় কমিটির এক জন সদস্যও যদি উঠে দাঁড়িয়ে তার বিরোধিতা করেন, তা হলে কিন্তু ভোটাভুটিতে যেতে হবে। যখন ১৯৯২ সালে হরকিষেণ সিংহ সুরজিৎ ইএমএস নাম্বুদিরিপাদের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন, তখন অসুস্থতার কারণে ইএমএস-কে পলিটব্যুরো থেকেই অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পার্টি কংগ্রেসে কেরলের প্রতিনিধিরা ওই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেন, এ ভাবে ইএমএস-কে সরানো যাবে না। এই দলীয় বিতর্কে অধিবেশন মুলতুবি রেখে মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতি দেওয়া হয়। তার পরে সুরজিৎ সাধারণ সম্পাদক হলেও ইএমএস-কে পলিটব্যুরোয় রেখে দেওয়া হয়। এ বার অবশ্য সে বিতর্ক নেই। ইয়েচুরি বা
এস আর পিল্লাই, যে-ই সাধারণ সম্পাদক হোন না কেন, কারাট পলিটব্যুরোতেই থাকবেন।

বাংলার সঙ্গে ইয়েচুরির সম্পর্ক অবশ্য দীর্ঘ দিন ধরেই মসৃণ। সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে বুদ্ধবাবুর শিল্পনীতি নিয়ে দলে কম বিতর্ক হয়নি। ইয়েচুরি কিন্তু ধারাবাহিক ভাবে এই শিল্পায়নের নীতির পক্ষে ছিলেন। নন্দীগ্রামের ঘটনায় প্রশাসনিক ব্যর্থতা থাকতে পারে। এমনকী, সিঙ্গুরের ব্যর্থতার পিছনে যথেষ্ট ‘হোমওয়ার্কে’র অভাব থাকতে পারে।

কিন্তু বুদ্ধবাবুর শিল্পনীতিতে আজও কোনও ত্রুটি ছিল বলে মনে করেন না ইয়েচুরি। এ বিষয়ে প্রভাত পট্টনায়েকের লাইনের সঙ্গে তাঁর মতপার্থক্য রয়েছে। এমনকী, ২০০৮ সালে পরমাণু চুক্তি ঘিরে মনমোহন সিংহের সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের বিষয়ে বুদ্ধ-বিমান তথা বাংলার সিপিএম নেতৃত্বের সঙ্গে ইয়েচুরির মতপার্থক্য কার্যত ছিলই না।

গোটা দেশে সিপিএমের অবস্থা এখন খুব খারাপ। পরমাণু চুক্তিতে সমর্থন প্রত্যাহারের কৌশল দলকে আরও বিপদে ফেলেছে। তবে এখনও দলের সাংগঠনিক শক্তির রাজ্যওয়াড়ি খতিয়ানে পশ্চিমবঙ্গই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য।

পশ্চিমবঙ্গের এক নেতার বক্তব্য, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য হওয়া সত্ত্বেও এই রাজ্যের কোনও নেতা সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হতে পারেননি। দক্ষিণের নেতারাই মূলত এই পদ পেয়ে এসেছেন। পশ্চিমবঙ্গের কোনও নেতা এ বারও পার্টি কংগ্রেসে এই পদের জন্য দাবিদার নন।’’

দলীয় সূত্রই অবশ্য বলছে, রাজ্যের কোনও নেতা দাবিদার না হলেও কে সাধারণ সম্পাদক হবেন, তা ঠিক করতে বুদ্ধ-বিমান-সূর্যেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন। কেরলের কিছু নেতা এখনও চাইছেন, সাংগঠনিক শক্তি বা নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ইয়েচুরি নন, বরং কারাটের বিশ্বস্ত পিল্লাই, এমনকী অন্ধ্রের রাঘাভুলুকে প্রয়োজনে সামনে নিয়ে আসা হোক। অন্ধ্রের নেতা রাঘাভুলুকে দিয়ে অন্ধ্রের আর এক ভূমিপুত্র ইয়েচুরির সম্ভাবনাকে প্রশমিত করা সম্ভব। কারাট-বিরোধী নেতারা আরও এক ধাপ এগিয়ে এ কথাও বলছেন, কলকাতায় না করে বিশাখাপত্তনমে পার্টি কংগ্রেস করার পিছনে এটাও একটা বড় কারণ হতে পারে! যাতে কলকাতার স্থানীয় নেতা ও কর্মীদের প্রভাব এই প্রক্রিয়ায় ছায়া না ফেলে!

সরোজ মুখোপাধ্যায় প্রয়াত হওয়ার পরে অনিল বিশ্বাসের আগে শৈলেন দাশগুপ্তকে রাজ্য সম্পাদক তথা বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান করা হয়েছিল। সাধারণ মানুষের কাছে শৈলেনবাবুর তেমন পরিচিতি বা গ্রহণযোগ্যতা না থাকলেও শুধুমাত্র সাংগঠনিক সমর্থনে দলের এই হিসেবরক্ষক রাজ্য সম্পাদক হতে পেরেছিলেন। কাজেই ভবিষ্যতের নব কলেবরে বামকে পথ দেখানোর জন্য ইয়েচুরি না কি পাটিগণিতের সমর্থনে এস আর পিল্লাই বা রাঘাভুলুর মতো অন্য কোনও নেতা—এ বার পার্টি কংগ্রেসে এটাই সব চেয়ে বড় প্রশ্ন!

Sitaram Yechury next general secretary CPIM cpim general secretary cpim party congress visakhapatnam party congress jayanta ghosal cpim politburo
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy