সুপ্রিম কোর্টে ওয়াকফ মামলার শুনানিতে নিজের আগের মন্তব্য থেকে পিছু হটলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। ওয়াকফ বোর্ডের সঙ্গে হিন্দুদের দেবোত্তর সম্পত্তি বোর্ডের ফারাক বোঝাতে গিয়ে তিনি দাবি করেছিলেন, হিন্দুদের দেবোত্তর বোর্ডগুলি শুধু ধর্মীয় কাজের সঙ্গেই যুক্ত। তবে ওয়াকফ বোর্ড বিভিন্ন ধর্মনিরপেক্ষ কাজও করে। হিন্দু দেবোত্তর বোর্ড নিয়ে ওই মন্তব্য যে ভুল ছিল, তা বৃহস্পতিবারের শুনানিতে মেনে নিলেন কেন্দ্রের আইনজীবী।
এই নিয়ে টানা তিন দিন ধরে সংশোধিত ওয়াকফ আইন সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলছে সুপ্রিম কোর্টে। ওয়াকফ বোর্ডে কেন অমুসলিম সদস্য থাকবেন, তা নিয়ে প্রথম দিন থেকেই প্রশ্ন তুলছিলেন মামলাকারীদের আইনজীবীরা। হিন্দুদের দেবোত্তর সম্পত্তি সংক্রান্ত বোর্ডে সাধারণত হিন্দুরাই থাকেন, এমন তত্ত্বও উঠে আসে আদালতে। মামলাকারী পক্ষের অন্যতম আইনজীবী কপিল সিব্বল সওয়াল করেছিলেন, ওয়াকফ বোর্ড আসলে একটি ধর্মীয় বিষয়।
মঙ্গলবার মামলাকারীদের বক্তব্য শোনার পরে বুধবার কেন্দ্রের বক্তব্য শোনে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বিআর গবইয়ের বেঞ্চ। সেখানে ওয়াকফ যে শুধু ধর্মীয় বিষয় নয়, বিভিন্ন ধর্মনিরপেক্ষ কাজের সঙ্গেও যুক্ত, তা বোঝানোর চেষ্টা করেন মেহতা। আইনি খবর পরিবেশনকারী ওয়েবসাইট ‘বার অ্যান্ড বেঞ্চ’ অনুসারে, বুধবার তিনি বলেছিলেন, “হিন্দুদের দান সংক্রান্ত বোর্ড শুধুমাত্র ধর্মীয় কাজের সঙ্গে যুক্ত। তবে ওয়াকফের সম্পত্তি বিভিন্ন ধর্মনিরেপক্ষ কাজেও ব্যবহার হয়।” সেই মন্তব্য যে ভুল ছিল, তা বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতির এজলাসে স্বীকার করে নেন নিজেই। বৃহস্পতিবার মেহতা বলেন, “আমি গতকাল একটি ভুল মন্তব্য করেছিলাম। হিন্দুদের দান সংক্রান্ত বোর্ডগুলি ধর্মীয় এবং দানমূলক উভয় কাজই করে। আমি বলেছিলাম, শুধু ধর্মীয় কাজের সঙ্গে যুক্ত।”
আরও পড়ুন:
বস্তুত, ওয়াকফ বোর্ডকে কেন ধর্মনিরপেক্ষ বলে ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন, তা নিয়ে বুধবার আদালতে সওয়াল করছিলেন মেহতা। সলিসিটর জেনারেল তখন জানিয়েছিলেন, ওয়াকফের সম্পত্তিতে স্কুল বা অনাথাশ্রমও হতে পারে। এমন অনেক ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পারে ওয়াকফ। যেহেতু ওয়াকফের সম্পত্তি অমুসলিমদের সুবিধার জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে, তাই অমুসলিম সদস্যদের জন্য ওয়াকফ কাউন্সিলে জায়গা দেওয়া যেতে পারে। তিনি এ-ও জানিয়েছিলেন, ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রে ওয়াকফ কোনও আবশ্যিক অংশ নয়। বুধবার আদালতে তিনি সওয়াল করেন, অনেক মুসলিমই আছেন, যাঁরা আর্থিক ভাবে সচ্ছল নন। তাঁরা যদি ওয়াকফে সম্পত্তি দান না করেন, তবে কি তাঁরা মুসলিম নন? কোনও কিছু দান করা যে কোনও ধর্মের অঙ্গ, কিন্তু তা আবশ্যিক নয়।