Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
হেরাল্ড হেনস্থা

সব বিরোধীকে পাশে চান সনিয়া

মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সনিয়া গাঁধী রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলেছেন। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নীতীশ কুমার ছাড়া কেউ পাশে না দাঁড়ানোয় দুঃখিত কংগ্রেস সভানেত্রী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৪৪
Share: Save:

মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সনিয়া গাঁধী রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলেছেন। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নীতীশ কুমার ছাড়া কেউ পাশে না দাঁড়ানোয় দুঃখিত কংগ্রেস সভানেত্রী।

সনিয়া মনে করছেন, আজ যে ভাবে তাঁদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে কাজে লাগানো হচ্ছে, সেই একই ভাবে আগামী দিনে অন্য দলের নেতাদেরও নিশানা করা হতে পারে। তাই এ বিষয়ে যদি সব বিরোধী দল মোদী সরকারের বিরুদ্ধে একজোট হতো, সেটাই ভাল হতো। সনিয়ার সঙ্গে এ বিষয়ে একমত মমতাও। সেই কারণেই দুর্নীতির তদন্তে তিনি লোকপালের অধীনে তদন্তকারীদের একটি নিরপেক্ষ গোষ্ঠী তৈরির

দাবি তুলেছেন। যাতে সিবিআইয়ের মতো সংস্থাগুলিকে কোনও ক্ষমতাসীন দলই বিরোধীদের বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে না পারে।

ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় সনিয়া-রাহুলকে সমন পাঠিয়েছে আদালত। তার প্রতিবাদেই কংগ্রেস সংসদে অচলাবস্থা তৈরি করেছে। কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী ও ইডি-আয়কর দফতরকে সামনে রেখে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে নিশানা করছে মোদী সরকার। কংগ্রেসের নেতারা যুক্তি দিচ্ছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের মতো বিরোধী দলের বিরুদ্ধেও কেন্দ্রীয় সংস্থাকে কাজে লাগানো হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশেই তা করা হচ্ছে।

বুধবার সনিয়ার জন্মদিনে দশ জনপথে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলেন মমতা। সেখানেও দু’জনের এ বিষয়ে আলোচনা হয়। মমতা বৈঠকের আগেই জানিয়েছিলেন, ‘‘এত বছর রাজনীতি করে যদি কাউকে আদালতে হাজিরা দিতে হয়, সেটা খুবই অস্বস্তির। আমারও খারাপ লাগছে।’’ আজ দিল্লিতে এসে নীতীশ কুমার আরও স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘‘রাজনীতিতে কোনও প্রতিহিংসা থাকা উচিত নয়। ভোটে মানুষ জনস্বার্থে কাজ করার দায়িত্ব দিয়েছে। মানুষ বিরোধীদের হেনস্থা করার দায়িত্ব দেয়নি।’’ কংগ্রেসের অভিযোগ নিয়েও নীতীশের যুক্তি, ‘‘আমার কাছে কোনও তথ্য নেই। কিন্তু কংগ্রেস যখন বলছে, তা ভেবেচিন্তেই বলছে। না হলে বলবে কেন?’’

একই সুরে মমতাও বলছেন, ন্যাশনাল হেরাল্ড নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, তার কতখানি সত্য, কতখানি অসত্য, তার মধ্যে তিনি যাচ্ছেন না। আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলছেন না। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে তিনি সনিয়া-রাহুলকে হেনস্থা করার বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে দিয়ে বিরোধী দলের নেতাদের নিশানা করারও তিনি পক্ষে নন। সেই কারণেই তাঁর দল লোকপাল হলে তার অধীনে তদন্তকারী সংস্থা তৈরির পক্ষে।

সম্প্রতি সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সুপারিশ করেছে, লোকপালের অধীনেই সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখা ও কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনকে নিয়ে আসা হোক। যাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি সংস্থাই কাজ করতে পারে। কোনও বিভ্রান্তি তৈরি না হয়। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, সিবিআইকে এমনিতেই যথেষ্ট ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যা বেআইনি ও অসাংবিধানিক। তাই লোকপালের অধীনে নিরপেক্ষ তদন্তকারী সংস্থা তৈরি হোক। ওই কমিটিতে তৃণমূলের সদস্য সুখেন্দুশেখর রায় এই দাবি তুলেছিলেন। কমিটির সামনে হাজির হয়ে তৃণমূলের তরফে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও একই সওয়াল করেন

কংগ্রেসের অভিযোগ, শুধু সনিয়া-রাহুল নয়। হিমাচলের বীরভদ্র সিংহ, পি চিদম্বরমের পুত্র কার্তি, পঞ্জাবের অমরেন্দ্র সিংহর স্ত্রী— বেছে বেছে কংগ্রেসের নেতাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে কাজে লাগাচ্ছে মোদী সরকার। বিজেপি নেতাদের যুক্তি, প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই সিবিআই, ইডি বা আয়কর দফতরের মতো সংস্থাগুলি তদন্ত করছে।

কংগ্রেস শীর্ষনেতৃত্বের পাল্টা প্রশ্ন, তা হলে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিংহ বাদল ও তাঁর ছেলে সুখবীর সিংহ বাদলের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে না কেন? বাদল পরিবারের বিরুদ্ধেও আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন বিপুল সম্পত্তির অভিযোগ রয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষমতার খাতিরেই বাদল পরিবারের হোটেল ও পরিবহণের ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠেছে বলে অভিযোগ। কংগ্রেস নেতাদের প্রশ্ন, তদন্ত নিরপেক্ষ হলে বাদল পরিবারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হচ্ছে না কেন? অকালি দল বিজেপির শরিক বলে!

পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস বা সিপিএম নেতাদের যুক্তি, রাজ্যের অধীনে যে সিআইডি রয়েছে, তাকেও একই ভাবে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে কাজে লাগানো হচ্ছে। অথচ শাসক দলের দুর্নীতি দেখেও চোখ বুজে থাকছে সিআইডি। তৃণমূলের নেতাদের পাল্টা যুক্তি, লোকপালের মতো রাজ্যেও লোকায়ুক্তর অধীনে নিরপেক্ষ তদন্ত গোষ্ঠী তৈরি হবে। সে ক্ষেত্রে তারাও রাজনীতির রং না দেখেই দুর্নীতির তদন্ত করবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sonia gandhi opposition national herald case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE