Advertisement
E-Paper

ফের পথে সনিয়া, সঙ্গী বিরোধী শিবির

মনমোহন সিংহের পাশে থাকার বার্তা দিতে কিছু দিন আগেই হঠাৎ পথে নেমেছিলেন তিনি! আজ ফের মিছিলের নেতৃত্ব দিলেন সনিয়া গাঁধী। এ বার বিরোধিতার বিষয় মোদী সরকারের জমি নীতি। তাঁর নেতৃত্বে সংসদের বিরোধী দলের শতাধিক সাংসদ আজ সংসদ ভবন থেকে মিছিল করে গেলেন রাইসিনা হিলে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৫ ০৪:৪০
তখন হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন ডেরেক। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন সনিয়া। ছবি: প্রেম সিংহ।

তখন হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন ডেরেক। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন সনিয়া। ছবি: প্রেম সিংহ।

মনমোহন সিংহের পাশে থাকার বার্তা দিতে কিছু দিন আগেই হঠাৎ পথে নেমেছিলেন তিনি! আজ ফের মিছিলের নেতৃত্ব দিলেন সনিয়া গাঁধী। এ বার বিরোধিতার বিষয় মোদী সরকারের জমি নীতি। তাঁর নেতৃত্বে সংসদের বিরোধী দলের শতাধিক সাংসদ আজ সংসদ ভবন থেকে মিছিল করে গেলেন রাইসিনা হিলে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে।

প্রণববাবুর কাছে এই বিষয়ে একটি স্মারকলিপি পেশ করে ১৪টি বিরোধী দল। তার পর বেরিয়ে এসে সনিয়া বলেন, “আমরা মোদী সরকারের জমি নীতির বিরোধিতা করছি। সরকারের কৃষক-বিরোধী নীতি আটকাতে আমরা বদ্ধপরিকর। জমি বিল বা অধ্যাদেশটি যাতে পাশ না হয় সে জন্য রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ দাবি করেছি।”

বিরোধী ঐক্যের এমন আত্মপ্রকাশের নজির হালফিলে নেই। কংগ্রেস সভানেত্রী পদে দেড় দশক ধরে রয়েছেন সনিয়া। এমন অভিজ্ঞতা তাঁরও নেই। সে দিক থেকে জমি বিল পাশ করানোর প্রশ্নে সরকারের উপরে রাজনৈতিক চাপ আজ বাড়ল। যদিও পরিস্থিতির মোকাবিলায় নেমে সাহসী মুখ দেখাতে চেয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। সনিয়ার আক্রমণের জবাবে তাঁর বক্তব্য, “জমি বিলের বিরোধিতা করে রাজ্যের উন্নয়নে বাধা তৈরি করছে কংগ্রেস। এই অধিকার কেউ কংগ্রেসকে দেয়নি।”

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজকের মিছিলের নকশার নেপথ্যে রয়েছে তৃণমূল। বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে সংসদের সেন্ট্রাল হলে আলোচনায় বসে গোড়ায় প্রস্তাবটি এনেছিলেন রাজ্যসভায় তৃণমূল দলনেতা ডেরেক ও’ ব্রায়েন। কিন্তু দিনের শেষে মিছিলের নেতৃত্ব দিয়ে সব আলো শুষে নেন সনিয়া। কিছুটা পার্শ্বচরিত্র হয়ে যান তৃণমূল, সংযুক্ত জনতা, এনসিপি, বাম, ডিএমকে-র মতো দলের নেতারা। সনিয়ার সঙ্গে এক ফ্রেমে জায়গা পান সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজা, ডেরেক-সহ অনেকে। ঠেলাঠেলিতে এক সময় হুমড়ি খেয়ে পড়েন ডেরেক। তাঁকে হাত ধরে টেনে তোলেন কংগ্রেস সভানেত্রী ও তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা।

বসন্তের পড়ন্ত বিকেলে রাইসিনা হিলে এই নাটকীয়তা ছিল দেখার মতো! সন্দেহ নেই রাজনীতিতে এই নাটকীয়তাই এখনও অমূল্য! বরং তা স্বীকার করে নিয়ে মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে কংগ্রেসের এক নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, “দেরিতে হলেও সনিয়া গাঁধী বুঝেছেন বৈদ্যুতিন মাধ্যমের প্রভাব কতখানি। রাজনীতির বার্তা দিতে এখন তাকে কী ভাবে ও কতটা ব্যবহার করা যায়।

কিন্তু কী বার্তা দিতে চাইলেন সনিয়া? রাজনীতিকদের মতে, আজকের মিছিলের প্রাথমিক উদ্দেশ্যই ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কৃষক- বিরোধী বলে দেশ ও দুনিয়ার কাছে প্রতিপন্ন করা। সেই সঙ্গে এই বার্তা দেওয়া যে শিল্প মহলের হাতে তামাক খাচ্ছে মোদী সরকার। এটা কংগ্রেস, বাম, তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি, সকলের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। আবার জমি বিলকে সামনে রেখে সব ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ দলগুলিকে এক ছাতার নীচেও আনতে উদ্যোগী হয়েছেন সনিয়া।

রাজনীতিকদের মতে, এই মিছিল একেবারেই প্রতীকী। বিল আটকানোর ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির কোনও ভূমিকা নেই। তিনি বড় জোর সেটা সরকারের কাছে পুনর্বিবেচনার জন্য পাঠাতে পারেন। জমি বিল ইতিমধ্যেই লোকসভায় পাশ হয়েছে, ঝুলে রয়েছে রাজ্যসভায়। বিমা বিল পাশ হওয়ার সময়ে বিরোধীদের সঙ্গে সরকারের রফা হয়েছে, জমি বিল সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হবে।

এ বার সরকার প্রয়োজনে সিলেক্ট কমিটিকে সময়সীমা বেঁধে দিতে পারে। তার পরে সংসদের যৌথ অধিবেশন ডেকে বিল পাশ করাতে পারে। এই বিল পাশ হওয়ার জন্য জমি অধিগ্রহণ বন্ধ থাকারও প্রশ্ন নেই। রাজ্যগুলি চাইলে যে পুরনো আইনে জমি অধিগ্রহণ করতে পারে, তা জানিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।

কিন্তু রাজনৈতিক বার্তার দিক থেকে যে এই মিছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ তা মানছেন সকলেই। রাজনীতিকদের মতে, টানা দশ বছর কেন্দ্রে ক্ষমতায় থেকে যে কংগ্রেস রাস্তায় নেমে আন্দোলন করাটাই ভুলতে বসেছিল, এখন তাকেই ফের টেনে পথে নামাতে চাইছেন সনিয়া। আপনি আচরি ধর্ম দলকে শেখাচ্ছেন।

শুধু সড়কে নয়, আজ অনেক দিন পর সংসদের মধ্যেও প্রবল সক্রিয় ছিলেন সনিয়া। অন্ধ্রপ্রদেশ পুনর্গঠন বিল নিয়ে লোকসভার বিতর্কে অংশ নেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তখন লোকসভায় বসে। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ধারালো আক্রমণ করে সনিয়া বলেন, দেড় বছর আগে অন্ধ্রপ্রদেশ ভাগ হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসে গত ৯ মাসে অন্ধ্রের জন্য কিছুই করেনি মোদী সরকার।

সনিয়ার এই মিছিলে অবশ্য কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে ফের গুঞ্জন শুরু হয় অনুপস্থিত রাহুলকে নিয়ে। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, মা পথে নেমেছেন, ছেলের কি আসা উচিত ছিল না। রাহুল ঘনিষ্ঠদের দাবি, ইচ্ছে করে এই বিতর্ক উস্কে দেওয়া হচ্ছে। রাহুল পরে জমি বিল নিয়ে রাজ্য সফরে যাবেন।

sonia gandhi derek o'brien land aquisiton bill oposition protest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy