Advertisement
E-Paper

‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’, যাত্রীভোগান্তির জন্য ক্ষমা চাইলেন ইন্ডিগোর চেয়ারম্যান, অস্বীকার করলেন একাধিক অভিযোগও

আট মিনিটের ওই ভিডিয়োয় বিক্রম স্বীকার করেন, গত ৩ ডিসেম্বর থেকে ব্যাপক ভাবে ইন্ডিগো বিমান বাতিলের কথা। তিনি জানান, এই ক’দিন ইন্ডিগো বিমান সংস্থা যাত্রীদের হতাশ করেছে এবং সমস্যায় ফেলেছে। তার জন্য তিনি ক্ষমাপ্রার্থী।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০১:১২
ইন্ডিগো সংস্থার চেয়ারম্যান এবং স্বাধীন নির্দেশক (নন-এগ‌জিকিউটিভ ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টর) বিক্রম সিংহ মেহতা।

ইন্ডিগো সংস্থার চেয়ারম্যান এবং স্বাধীন নির্দেশক (নন-এগ‌জিকিউটিভ ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টর) বিক্রম সিংহ মেহতা। ছবি: সমাজমাধ্যম।

এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ইন্ডিগো বিভ্রাটের জেরে বিমানযাত্রীদের ভোগান্তি অব্যাহত। বুধবার উড়ান বাতিল হওয়ার সংখ্যা কমেছে অনেকটাই। কিন্তু উড়ান সংকট এখনও পুরোপুরি মেটেনি। এই প্রেক্ষাপটে এ বার ইন্ডিগো সংস্থার চেয়ারম্যান এবং স্বাধীন নির্দেশক (নন-এগ‌জিকিউটিভ ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টর) বিক্রম সিংহ মেহতা বুধবার জনসাধারণের কাছে ক্ষমা চাইলেন। ইন্ডিগো তাদের এক্স হ্যন্ডলে ওই ভিডিয়োটি পোস্ট করে। সেখানে দেখা যায় বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বিক্রমকে সরব হতে। সংস্থার বিরুদ্ধে ওঠা একাধিক অভিযোগও অস্বীকার করেন তিনি।

আট মিনিটের ওই ভিডিয়োয় বিক্রম স্বীকার করেন, গত ৩ ডিসেম্বর থেকে ব্যাপক ভাবে ইন্ডিগো বিমান বাতিলের কথা। তিনি জানান, এই ক’দিন ইন্ডিগো বিমান সংস্থা যাত্রীদের হতাশ করেছে এবং সমস্যায় ফেলেছে। তার জন্য তিনি ক্ষমাপ্রার্থী। পাশাপাশি তিনি আশ্বাস দেন, ইন্ডিগো প্রত্যাশিত সময়ের আগেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে।

বিক্রম জানান, দেশের বিমানবন্দরগুলিতে যাত্রীদের কতটা ভোগান্তি হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে তৎপর হয়েছে উড়ান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএ। তারা সব তথ্য খতিয়ে দেখে পরীক্ষা করছে। তিনি জানান, এই সমস্যার মূল কারণগুলি নির্ধারণ করার জন্য বাইরে থেকে প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ করা হবে। বিক্রম নিশ্চিত করেন, ভবিষ্যতে এই ধরনের ব্যাঘাত আর যাতে কখনও না ঘটে, তা নিয়ে সর্তক থাকবে।

ইন্ডিগো বিপর্যয়ের মূল কারণ কেন্দ্রেরই বিধি বলে মনে করা হচ্ছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে পাইলট এবং বিমানকর্মীদের কাজের সময় এবং বিধি নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল দেশের উড়ান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএ। ‘ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশনস’ নামের ওই বিধি ১ নভেম্বর থেকে চালু হয়েছে। আর তাতেই বিপাকে পড়েছে ইন্ডিগো। এই নিয়মবিধি মেনে উড়ান পরিষেবা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হচ্ছিল না তাদের। অন্য বিমান সংস্থাগুলির তুলনায় কিছুটা সস্তায় যাত্রীদের উড়ান পরিষেবা দিয়ে থাকে ইন্ডিগো। তাদের অনেক বিমানই রাতে অবতরণ করে। তাই নয়া বিধিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে এই বিমানসংস্থাই। নয়া বিধি মেনে পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে যত সংখ্যক কর্মী এবং পাইলট প্রয়োজন, বর্তমানে তা ইন্ডিগোর নেই। ফলে চরম সঙ্কট তৈরি হয়েছে। যার জেরে যাত্রীদের ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। সংস্থার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করে বিক্রম জানান, এই সমস্যাগুলি অনিচ্ছাকৃত ভাবে হয়েছে। তিনি এ-ও জানান, সংস্থা কোনও ভাবেই নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করেনি। তারা সব সময় যাত্রী সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেছে। বিক্রম বলেন, “আমরা জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সংশোধিত বিধি মেনেই কাজ করেছি এবং তা এড়িয়ে যাওয়ার কোনও রকম চেষ্টা করিনি।” তাঁর সংযোজন, ৩ থেকে ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ছোটখাটো প্রযুক্তিগত ত্রুটি, শীতকালীন সময়সূচির পরিবর্তন, প্রতিকূল আবহাওয়া, বিমান চলাচলে যানজট, ক্রু রোস্টারিং নিয়মাবলি-সহ একাধিক জটিলতা দেখা দিয়েছিল। যার ফলে এই সমস্যা। তবে এটি কোনও অজুহাত নয়। বরং এ সব কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি সংস্থার জন্য একটি খারাপ নজির এবং দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছে।”

বিক্রম জোর দিয়ে জানান, এই সংকটকালীন পরিস্থিতিতে সংস্থার সকলে তৎপর ছিলেন। ইন্ডিগোর সিইও পিটার এলবার্সের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে পরিস্থিতি স্থিতিশীল করা হয়েছে। ইন্ডিগো পরিষেবা এখন সম্পূর্ণ ভাবে স্বাভাবিক হয়েছে। ১৩৮টি গন্তব্যে ১৯০০টি পরিষেবা পরিচালনা করা হয়েছে। পাশাপাশি বিক্রম বলেন, “এই বিভ্রাটের পর যাত্রীদের আস্থা ফিরে পেতে সময় লাগবে। আমাদের সংস্থা ভুল করেছে। প্রতিশ্রুতি নয়, কাজের মাধ্যমে আমাদের বিশ্বাস পুনরায় ফিরিয়ে আনতে হবে।”

প্রসঙ্গত, ইন্ডিগোর একের পর এক উড়ান বাতিল হওয়া নিয়ে বিভিন্ন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্তা এবং ইন্ডিগোর সিইও পিটার এলবার্সের সঙ্গে শনিবার দিল্লিতে একটি জরুরি বৈঠকে বসেন কেন্দ্রের অসামরিক বিমান পরিবহণমন্ত্রী রামমোহন নায়ডু। অসামরিক বিমান পরিবহণসচিব সমীরকুমার সিংহ এবং ডিজিসিএ-র প্রধান ফৈজ় আহমেদ কিদওয়াই-ও উপস্থিত ছিলেন সেই বৈঠকে। বৈঠকের পরেই ইন্ডিগোর সিইও-কে শো কজ় নোটিস পাঠায় ডিজিসিএ। নোটিসে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থার কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, এই পরিস্থিতির জন্য তিনিও দায়ী। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে শো কজ়ের জবাব দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। বুধবার ইন্ডিগো সংস্থার সিইও-কে হাজিরা দিতে বলেছে ডিজিসিএ। উড়ান বাতিল সংক্রান্ত সব তথ্য নিয়ে বৃহস্পতিবার হাজিরা দিতে বলা হয়েছে তাঁকে। দেশের বিমানবন্দরগুলিতে যাত্রীদের কতটা ভোগান্তি হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে তৎপর হয়েছে ডিজিসিএ।

Indigo Airlines Indigo Flight IndiGo
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy