গত কাল কাকভোরে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের দরজায় পৌঁছে যায় সিবিআই। মাস দুয়েক আগে যখন বড় মেয়ের মালাবদল হচ্ছে, বেছে বেছে ঠিক তখন প্রায় একই রকম ভাবে হিমাচলপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংহের বাড়িতে তল্লাশি শুরু করে এই তদন্ত সংস্থা। তার ক’দিন বাদে আবার পাঁচ বছরের পুরনো মামলায় সিবিআইয়ের তরফে নতুন করে খোঁজ পড়ে মায়াবতীর। আর আজ প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের ছেলে কার্তির অফিসে হানা দেয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট! যে ঘটনার পরে চিদম্বরম বলেন, ওকে হেনস্থা করার জন্য একটা মূর্খের সরকার কত দূর যেতে পারে, সেটাই দেখার।
এই সব উদাহরণ তুলে ধরে কংগ্রেসের তরফে প্রশ্ন, মোদী সরকারের বিরুদ্ধে এর পর ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণতার’ অভিযোগ তোলা কি খুব কঠিন?
বস্তুত ন্যাশনাল হেরাল্ড বিতর্ককে সামনে রেখে এখন ঠিক সেটাই করতে চাইছেন সনিয়া-রাহুল। হেরাল্ড বিতর্কে আদালত সমন পাঠানোর পর থেকেই এই অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস। কিন্তু উপরোক্ত ঘটনাগুলির জেরে কংগ্রেস এখন মনে করছে, মোদী-বিরোধী রাজনীতির জমি আরও উর্বর হয়েছে। আর তাই ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় ১৯ ডিসেম্বর আদালতে হাজিরা দেওয়ার ঘটনাকে রাজনৈতিক ভাবে উচ্চগ্রামে নিয়ে যেতে চাইছেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। দলীয় সূত্রে বলা হচ্ছে, আদালতে জামিন না-ও চাইতে পারেন সনিয়া-রাহুল। এমনকী আদালতকে জানাতে পারেন, তাঁরা জেলে যেতেও প্রস্তুত। তা ছাড়া আদালতে উপস্থিত হওয়ার জন্য কংগ্রেস সদর দফতর থেকে নেতা- কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে অভিযান করতে পারেন কংগ্রেস সভানেত্রী ও সহ সভাপতি। আর সেই কারণে ওই দিন দলের সব সাংসদকে যেমন দিল্লিতে থাকতে বলা হয়েছে, তেমনই কংগ্রেসশাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও সব রাজ্যের কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতাকে ওই দিন দিল্লিতে ডাকা হয়েছে। সনিয়া-রাহুলের মূল লক্ষ্য, বিজেপি-র সংকীর্ণ রাজনীতির শিকার বলে নিজেদের তুলে ধরা ও মানুষের সহানুভূতি আদায় করা। সেই সঙ্গে প্রতিহিংসার রাজনীতির তকমা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গায়ে সেঁটে দেওয়া। শুধু দিল্লিতে নয়, রাজ্যস্তরে বিক্ষোভ কর্মসূচি গ্রহণের জন্য প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকে ইতিমধ্যেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখন থেকেই ‘দিল্লি চলো’ ডাক দিয়ে উত্তরাখন্ড, হরিয়ানা, রাজস্থানের মতো রাজ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় কংগ্রেস। ১৯ শে, শনিবার রাজধানীতে কংগ্রেস নেতা-সমর্থকদের ঢল নামবে, সন্দেহ নেই। যদিও প্রকাশ্যে এই সব পরিকল্পনার কথা আজ মানতে চায়নি কংগ্রেস। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ শুধু বলেন, ‘‘আদালত সনিয়া ও রাহুলকে হাজির হতে বলেছে। বিচারব্যবস্থায় আস্থা রেখে সভানেত্রী ও দলের সহ-সভাপতি আদালতের সামনে গিয়ে দাঁড়াবেন।’’
কিন্তু কংগ্রেসের এই কৌশলে কিছুটা হলেও ভয় ঢুকেছে বিজেপির মধ্যে। সনিয়া-রাহুল যদি সত্যিই জেলে যান, তা হলে তার রাজনৈতিক ফল কী দাঁড়াবে, তা আঁচ করতে বিজেপির অসুবিধা হচ্ছে না। ঘরোয়া আলোচনায় বিজেপি নেতারা বলছেন, কংগ্রেস যদি ঠিক ভাবে লড়তে পারে, তা হলে এ ধরনের মামলায় সামান্য কিছু জরিমানা দিয়েই অব্যাহতি পেতে পারেন সনিয়ারা। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্বের বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না যে গোটা বিষয়টি রাজনৈতিক ভাবে কাজে লাগিয়ে জনমানসে সহানুভূতি তৈরি করাই গাঁধী পরিবারের লক্ষ্য। সে কারণে নিত্যনতুন ইস্যুকে সামনে এনে সংসদ অচল রাখছে তারা। আর লাগাতার এমন ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, যাতে বিরোধীরা আরও একজোট হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। সব মিলিয়ে উন্নয়ন কেন্দ্রিক আলোচনার পরিবর্তে এ ধরনের বিতর্কই সামনের সারিতে চলে আসছে। আর তা সামাল দিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে।
মোড় ঘোরাতে বিজেপিও এখন ঘুঁটি সাজাতে শুরু করছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী আজ সংসদ ভবনে সরকারের শীর্ষ মন্ত্রীদের সঙ্গে এ ব্যাপারে বৈঠক করেন। আগামিকাল মন্ত্রিসভার সব সদস্যকে নিজের বাসভবনে নৈশভোজেও ডেকেছেন তিনি। বিজেপির শীর্ষ সূত্রের দাবি, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, এখন যা পরিস্থিতি তাতে কংগ্রেস ও অন্য বিরোধীরা যে কোনও ইস্যুতেই সরকারকে চেপে ধরার কৌশল নিয়েছে। তাই হট্টগোলের মধ্যেও সরকারের উন্নয়নের কর্মসূচি তুলে ধরতে হবে।
সে জন্যই আজ প্রকাশ জাভড়েকর রাজ্যসভায় তুমুল হট্টগোলের মধ্যেও প্যারিসের পরিবেশ বৈঠক নিয়ে বিবৃতি দেন। প্রধানমন্ত্রীর আরও পরামর্শ: কংগ্রেস যে ভাবে উন্নয়ন রোখার কৌশল নিয়েছে, সেটিও মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। সংসদ শেষ হলেই এই পাল্টা আন্দোলন শুরু করতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy