চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের তারিখ যতই এগিয়ে আসছে, চাপ বাড়ছে সাউথ ব্লকের। ওই সম্মেলনে যোগ দেওয়া চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। সেখানে যাওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও। বিহার নির্বাচনের ঠিক আগে ট্রাম্পের সঙ্গে মোদীর পার্শ্ববৈঠক ঘরোয়া রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে বিজেপি সরকারের জন্য কতটা মানানসই, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিচার।
গত কয়েক মাসে ট্রাম্পের তরফে ভারতকে বারবার অপমান করা হয়েছে। পাকিস্তানের কোলে ঝোল টানা হয়েছে। রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য জরিমানামূলক ২৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক চাপানো হয়েছে। ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে মধ্যস্থতার দাবি করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত নিজেদের জেদে অনড় ওয়াশিংটনের সঙ্গে প্রাথমিক বাণিজ্য চুক্তিটুকুও করে উঠতে পারেনি নয়াদিল্লি। এই জটিল পরিস্থিতিতে মোদী-ট্রাম্প বৈঠকের তাৎপর্য এবং বার্তা কোন দিকে গড়াবে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। এই একই কারণে গত মাসে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সম্মেলনে যোগ দিতে মোদী নিজে না গিয়ে পাঠিয়েছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে। এ ছাড়াও ট্রাম্প কখন কী বলেন, তার কোনও কূটনৈতিক বিধিবদ্ধতা নেই বলে আশঙ্কাও রয়েছে। শেষ পর্যন্ত যদি মোদী-ট্রাম্প বৈঠক হয়ও, ভারতের তরফ থেকে আমেরিকাকে কী কী বলা হবে, তা নিয়েও চলছে আলোচনা।
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, ভারতের উপর ট্রাম্প সরকারের ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর বিষয়টি তো রয়েছেই। বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কঠিন দরকষাকষির চাপও রয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান প্রসঙ্গে ভারতের স্পর্শকাতরতাকে যে ভাবে আমেরিকা প্রতিপদে অপমান করছে গত কয়েক মাসে, যে ভাবে সে দেশের সরকার এবং সামরিক শক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে হোয়াইট হাউস, তা ভারতের পক্ষে খুবই অস্বস্তির। ফলে কুয়ালালামপুরে বৈঠকে সামান্য এ দিক-ও দিক হলে, বিহার নির্বাচনের মুখে বিরোধী দলগুলি সরকার-বিরোধিতার একটি বড় বিষয় হাতে পেয়ে যাবে বলেও মনে করা হচ্ছে।
এটাও নজরে রাখা হচ্ছে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কুড়ি দফা গাজ়া শান্তি প্রস্তাবকে পাঁচ দিনে দু'বার সমর্থন করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। কুয়ালালামপুরে যাওয়ার আগে সম্পর্ককে ইতিবাচক মোড়ক দেওয়াটা তাঁর অগ্রাধিকার কি না সেই প্রশ্ন উঠছে। ট্রাম্পও ভারতের সমর্থনকে স্বীকার করেছেন সমাজমাধ্যমে। যদিও আলাদা করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ এবং পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের প্রশংসা করেছেন ট্রাম্প।
কূটনৈতিক সূত্র জানাচ্ছে, যদি কুয়ালালামপুরে মোদী-ট্রাম্প বৈঠক শেষপর্যন্ত হয়, ভারতের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে প্রধানমন্ত্রীকে পাশে নিয়ে ট্রাম্প যেন ভারত-পাকিস্তান অপারেশন সিঁদুর পরবর্তী সংঘাতে মধ্যস্থতার দাবি না তোলেন তা নিশ্চিত করা। মুখোমুখি বৈঠক হলে ভারতের উপর চাপানো ৫০ শতাংশ শুল্ক আংশিক প্রত্যাহারের কথাও তোলা হতে পারে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)