E-Paper

পরিযায়ীদের ভোট নিয়েই প্রশ্ন, কোর্টে যাবে কংগ্রেস

বিরোধীরা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, অসমের মতো রাজ্যগুলির লক্ষ লক্ষ মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাবে। কারণ, এই রাজ্যগুলির বহু মানুষ কর্মসূত্রে ভিন্ রাজ্যে থাকেন।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৫ ০৭:০৯

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

যাঁরা কোনও বিধানসভা এলাকায় সাধারণ ভাবে বাসিন্দা বা ‘অর্ডিনারিলি রেসিডেন্ট’, শুধু তাঁরাই সেই বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার তালিকায় থাকবেন। আর যাঁরা কাজের সূত্রে বাইরে কোথাও থাকছেন, তাঁদের সেই ভিন্ রাজ্যে বা ভিন্ন এলাকাতেই ভোটার তালিকায় নাম তুলতে হবে। যেখানে স্থায়ী ঠিকানা, সেখান থেকে নাম বাদ চলে যাবে। বিহারে ও তার পরে পশ্চিমবঙ্গ-সহ অন্য রাজ্যে ভোটার তালিকা পরিমার্জনের সময় এই নীতি মেনেই নির্বাচন কমিশন এগোতে চাইছে।

বিরোধীরা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, অসমের মতো রাজ্যগুলির লক্ষ লক্ষ মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাবে। কারণ, এই রাজ্যগুলির বহু মানুষ কর্মসূত্রে ভিন্ রাজ্যে থাকেন।

এই পরিস্থিতিতে বিহারে ভোটার তালিকায় বিশেষ পরিমার্জনের বিরুদ্ধে কংগ্রেস তথা বিরোধী শিবির সুপ্রিম কোর্টে যাবে বলে প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, এটা শুধু বিহারের সমস্যা নয়। এর পরে অন্য রাজ্যেও নির্বাচন কমিশন একই ভাবে ভোটার তালিকা সংশোধন করবে। ফলে এটা জাতীয় সমস্যা। তাই পটনা হাই কোর্টের বদলে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করার কথা ভাবা হচ্ছে। দেশের নাগরিককে সংবিধানে দেওয়া মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে— এই দাবি তুলে এবং সঙ্গে ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদের উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ চাওয়া হবে।

কংগ্রেসের সাংগঠনিক সম্পাদক কে সি বেণুগোপাল আজ দাবি তুলেছেন, বিহারের লক্ষ লক্ষ মানুষকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার চক্রান্ত হচ্ছে। এই ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রক্রিয়া এখনই থামাতে হবে। সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, এখন ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য বিহারকে গিনিপিগ করে পরীক্ষানিরীক্ষা হচ্ছে। এর পরে পশ্চিমবঙ্গ ও বাকি রাজ্যগুলিকে গিনিপিগ করা হবে। বিহারে এখন ৮ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের মধ্যে সাড়ে চার থেকে পাঁচ কোটি মানুষকে ভোটার হওয়ার যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে।

বুধবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করে বিরোধী শিবিরের নেতারা জানিয়েছিলেন, এখন বর্ষাকালে নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সময়ই গ্রাম থেকে পরিযায়ী শ্রমিকরা সপরিবার শহরে বা ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে যান। কমিশনের নীতি অনুযায়ী তাঁরা ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাবেন। সূত্রের খবর, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার জানান, কমিশনের আধিকারিকরা একটি বাড়িতে তিন বার যাবেন। তার পরে সিদ্ধান্ত হবে। বিরোধীদের বক্তব্য, মরসুমি পরিযায়ী শ্রমিকরা শহরে বা ভিন্ রাজ্যে গেলে অন্তত তিন থেকে ছ’মাসের জন্য যান। কেউ দু’-এক বছরের জন্যও চলে যান। আধিকারিকরা তিন বার গিয়েও তাঁদের বাড়িতে পাবেন না। ফলে তাঁরা ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাবেন। নির্বাচন কমিশন নিজেই বলেছে, বিহারের ভোটারদের ২০ শতাংশ বাইরে থাকেন।

নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য হল, বিহারের ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ মসৃণ ভাবে চলছে। জন প্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী যে যেখানকার বাসিন্দা, তাঁর সেখানকার ভোটার তালিকাতেই নাম থাকা উচিত। যদি কারও বাড়ি কলকাতায় হয়, কিন্তু তিনি বেঙ্গালুরুতে কাজে গিয়ে থাকেন, তা হলে তাঁর বেঙ্গালুরুর ভোটার তালিকাতেই নাম থাকা উচিত। বিরোধীদের বক্তব্য, কোনও পরিযায়ী শ্রমিকের পক্ষে কি দু’-এক বছরের জন্য বাইরে গেলে ওই সময়ের জন্য নিজের এলাকায় নাম কাটিয়ে নতুন ঠিকানায় ভোটার তালিকায় নাম তোলা সম্ভব? এত ঝক্কি কেউই পোহাতে চান না। তাই যেখানে আদি ভিটে, সেখানেই ভোটার তালিকায় নাম রেখে দেন। বিরোধীদের একাংশের কথায়, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ভোটের সময় দলবদ্ধ ভাবে পরিযায়ী শ্রমিকেরা বাড়ি ফেরেন ভোট দিতে। বিরোধীদের আরও বক্তব্য, জন প্রতিনিধিত্ব আইনেও বলা হয়েছে, কেউ নিজের ঠিকানায় কিছু সময়ের জন্য না থাকলে তিনি সেখানকার বাসিন্দা নন— এমন বলা যাবে না। ভোটার তালিকার ম্যানুয়ালেও বলা হয়েছে, ওই সব ব্যক্তির ভিটেয় ফিরে আসার ইচ্ছে থাকলে তাঁদের বাসিন্দা হিসেবেই ধরতে হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Election Commission of India Migrant Workers Voters

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy