Advertisement
১০ মে ২০২৪
Rahul Gandhi

Rahul Gandhi: নেপথ্যে সনিয়া, ‘রাহুল-নীতি’ থেকে সরে এল কংগ্রেস হাই কমান্ড

ভবানীপুরের উপ-নির্বাচনে অধীর চৌধুরীদের প্রার্থী দিতে নিষেধ করে কংগ্রেস হাই কমান্ড ‘রাহুল নীতি’ থেকে সরে এল বলেই মনে করছেন কংগ্রেস নেতারা।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৫৪
Share: Save:

এত দিন রাহুল গাঁধীর নীতি ছিল, কোনও রাজ্যে দলের কৌশল কী হবে, তা প্রদেশ কংগ্রেস নেতারাই ঠিক করবেন। হাই কমান্ড সেখানে নাক গলাবে না। রাহুলের এই নীতির জন্যই ২০১৯-এর লোকসভা বা ২০২১-এর বিধানসভায় কংগ্রেস নেতৃত্ব তৃণমূলের সঙ্গে জোটের চেষ্টা করেনি।

এ বার ভবানীপুরের উপ-নির্বাচনে অধীর চৌধুরীদের প্রার্থী দিতে নিষেধ করে কংগ্রেস হাই কমান্ড ‘রাহুল নীতি’ থেকে সরে এল বলেই মনে করছেন কংগ্রেস নেতারা। এআইসিসি-র এক নেতা বলেন, ‘‘প্রয়াত আহমেদ পটেল মনে করতেন, পশ্চিমবঙ্গে বামেদের শক্তি ফুরিয়ে এসেছে। তাদের সঙ্গে জোট না করে জাতীয় রাজনীতির স্বার্থে তৃণমূলের সঙ্গেই জোট করা উচিত কংগ্রেসের। কিন্তু রাহুল গাঁধী বরাবরই তা নাকচ করে দিয়েছেন। কারণ, প্রদেশ কংগ্রেসের নেতারা তৃণমূলের সঙ্গে জোট চাননি। এ বারই প্রথম হাই কমান্ড রাজ্যের নেতাদের প্রস্তাব নাকচ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ভবানীপুরে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।’’

কংগ্রেস সূত্রের খবর, এই সিদ্ধান্তের পিছনে কমলনাথের মতো সনিয়া গাঁধীর আস্থাভাজন নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। প্রয়াত পটেলের মতো এই প্রবীণ নেতাদেরও মত, বাংলায় সিপিএমের সঙ্গে জোট করে কংগ্রেসের লাভ হচ্ছে না। এই প্রবীণ নেতাদের অনেকেই মমতা কংগ্রেসে থাকার সময় তাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন। সে দিক থেকেও তাঁরা মমতাকে পাশে রাখার পক্ষে।

মমতার বিরুদ্ধে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে কংগ্রেস নেতারা সনিয়া গাঁধীর ‘রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তার প্রমাণ’ বলেও দাবি করছেন। তাঁদের যুক্তি, কংগ্রেস নেতৃত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী না দিয়ে বার্তা দিলেন, তাঁরা বিজেপি বিরোধী জোট চাইছেন। সে জন্য মমতাকে তাঁর মাঠে জায়গা ছেড়ে দিতেও কংগ্রেস তৈরি। এ বার তৃণমূল নেতৃত্বকে ঠিক করতে হবে, তাঁরা কোন দিকে যাবেন। তাঁরাও কংগ্রেসকে পাল্টা জায়গা ছাড়বেন, না কি কংগ্রেসের সমালোচনা করতে গিয়ে বিরোধী ঐক্যে সমস্যা তৈরি করবেন। কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, সিবিআই-ইডির ভয়ে কংগ্রেস ঘরে ঢুকে পড়েছে বলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সমালোচনা করছেন। তার আগে সংসদের অধিবেশনের সময়েও তৃণমূলের প্রথম সারির অধিকাংশ নেতা রাহুলের প্রাতরাশের আমন্ত্রণ এড়িয়ে গিয়েছেন। তা সত্ত্বেও সনিয়া ভবানীপুরে মমতাকে সৌজন্য দেখিয়ে তাঁর কোর্টে বল ঠেলে দিলেন। প্রসঙ্গত, আজ মমতাও বলেন যে কেন্দ্র এজেন্সির ভয় দেখিয়ে কংগ্রেসকে জব্দ করছে।

পশ্চিমবঙ্গে বাম-আইএসএফের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট নিয়ে আনন্দ শর্মা, বীরাপ্পা মইলির মতো বিক্ষুব্ধ নেতারা আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। বিক্ষুব্ধ কংগ্রেস নেতাদের গোষ্ঠী জি-২৩-এর অধিকাংশ নেতা চেয়েছিলেন, বিজেপিকে হারিয়ে মমতাই জিতে আসুন। তা হলে জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষিতেও বিজেপি কিছুটা ধাক্কা খাবে। কংগ্রেস-বাম-আইএসএফের সংযুক্ত মোর্চা তৃণমূলের ভোটে ভাঙন ধরাবে কি না, তা নিয়ে তাঁদের বেশি আশঙ্কা ছিল। দল মমতার বিরুদ্ধে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ নেতারা মনে করছেন, হাই কমান্ড রাজনৈতিক বাস্তবতা বুঝে সিদ্ধান্ত নিল।

জি-২৩ গোষ্ঠীর এক নেতা
বলেন, ‘‘কংগ্রেস জাতীয় দল। কোন রাজ্যে কার সঙ্গে জোট হবে, সেটা জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষিতেই
সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। প্রদেশ কংগ্রেসের উপরে পুরোপুরি সেই সিদ্ধান্ত ছেড়ে দেওয়া যায় না। রাহুল সেই ভুলটাই করছেন। আমাদের মতে, রাজ্যওয়াড়ি জোটের কৌশল ঠিক করতে স্থায়ী কমিটি দরকার।
যখন যেখানে ভোট আসবে, তখন সেখানে সিদ্ধান্ত হবে, এ ভাবে চলতে পারে না।’’

কংগ্রেসের অন্দরমহলে অবশ্য একটি প্রশ্ন উঠছে। তা হল, এক দিকে তৃণমূল সুস্মিতা দেবের মতো নেত্রীকে ভাঙিয়ে নেবে, রাজ্যে কংগ্রেস নেতাদের উপরে হামলা হবে, অভিষেক কংগ্রেসের নিন্দা করবেন, অথচ সব ভুলে গিয়ে জাতীয় রাজনীতির স্বার্থে কংগ্রেস কি তৃণমূলের কিল খেয়েও হজম করে নেবে? কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতা বলেন, ‘‘অভিষেক তরুণ নেতা। আমরা তাই তাঁর মন্তব্যের সমালোচনা করছি না। কিন্তু অভিষেকের মনে রাখা উচিত ছিল, কংগ্রেস তাঁর ছবি দিয়ে টুইট করে ওঁর উপরে পেগাসাসের নজরদারির প্রতিবাদ করেছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rahul Gandhi sonia gandhi Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE