Advertisement
E-Paper

কৌশলী যোগ কেজরী মমতার, ফেল বাম কংগ্রেস

ভাল বিষয়ে কোনও রাজনীতি নয়— কথাটা আগেই বলেছিলেন। যোগ-দিবসের সকালে সে কথা মেনেই রাজপথে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সটান যোগাসনে বসে পড়লেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৫ ০৪:১০

ভাল বিষয়ে কোনও রাজনীতি নয়— কথাটা আগেই বলেছিলেন। যোগ-দিবসের সকালে সে কথা মেনেই রাজপথে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সটান যোগাসনে বসে পড়লেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল।

অন্য জন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জলে নামলেন, কিন্তু চুল ভেজালেন না! মমতা নিজে বা তাঁর মন্ত্রী-সান্ত্রীরা কেউ যোগে যোগ দিলেন না ঠিকই, কিন্তু নিয়মরক্ষার তাগিদে সরকারি অনুষ্ঠানগুলি বিলক্ষণ হল!

আর কংগ্রেস? না সরাসরি যোগদান, না নিয়মরক্ষার বালাই! যন্তর-মন্তরে যুব কংগ্রেসকে দিয়ে ললিত মোদী আর সুষমা স্বরাজের মুখোশ পরে ‘ললিতাসন’-এর ব্যঙ্গ প্রতিবাদ হল। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর ভারতীয়ত্বের মহা-উৎসবে অনুপস্থিত থেকে আসলে বিচ্ছিন্নই হয়ে গেল তারা। একই পথে হাঁটতে গিয়ে ঠিক যা হল বামেদের ক্ষেত্রেও। কৌশলী পা ফেলার অঙ্কে ‘ফেল’ করল দু’পক্ষই!

প্রথম বিশ্ব যোগ দিবস। ভারতের উদ্যোগে রাষ্ট্রপুঞ্জের সম্মতি আদায়ের পর দিল্লির রাজপথ থেকে নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কোয়ার— সর্বত্র জুড়ে রইলেন নরেন্দ্র মোদী। গোটা বিশ্বকে ভারতীয়ত্বের ‘যোগ’সূত্রে বেঁধে দিলেন তিনিই। শুধু কি তা-ই? ঘরোয়া রাজনীতির অলিন্দেও সুষমা-বসুন্ধরা বিতর্কে চাপে পড়ে যাওয়া নিজের রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে এক ধাক্কাতেই প্রতিষ্ঠিত করে ফেললেন অনেকটা। যোগের মাধ্যমে শান্তি ও ঐক্যের বার্তা দিয়ে কাছে পেতে চাইলেন সংখ্যালঘুদেরও।

বিজেপি নেতারা বলছেন, কেজরীবাল বুদ্ধিমান। যোগের মতো চিরন্তন ভারতীয়ত্বের প্রশ্নে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে চাননি। তাই মোদী সরকার বা দিল্লির উপ-রাজ্যপাল নজীব জঙ্গের সঙ্গে তাঁর যতই বিরোধ থাক না কেন, সক্কাল সক্কাল উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়াকে পাশে নিয়ে রাজপথে সকলের সঙ্গে যোগাসনে বসেছেন। কিন্তু মোদীর সঙ্গে যোগের হাত ধরলে পাছে ধর্মনিরপেক্ষতা খোওয়া যায়, তাই বামেরা যেমন দূরে থাকল, তেমনই অবস্থা হল কংগ্রেসের! যুব কংগ্রেসকে দিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপেই আটকে রইল তারা! মোদী কোথাও দাবি করেননি, যোগের ভাবনাটি তাঁর তৈরি। কিন্তু জওহরলাল নেহরুর শীর্ষাসনের ছবি প্রকাশ করে এবং ইন্দিরা গাঁধীও যোগাসন করতেন— এ সব দৃষ্টান্ত সামনে এনে কংগ্রেস ব্যস্ত রইল মোদী-বিরোধিতায়। মোদী আত্মপ্রচার করছেন, এই কটাক্ষে মগ্ন থেকে আসলে নিজেদেরই বিচ্ছিন্ন করে ফেলল তারা! বামেরাও তাই। মোদী-বিরোধী প্রচারেই ব্যস্ত রইল তারা। যা দেখে এক বিজেপি নেতার মন্তব্য, ‘‘ভিয়েতনামের কোনও ইস্যুতে বামেরা রাস্তায় নামতে পারে, অথচ যে যোগ ভারতের নিজস্ব গর্ব, সেখানে যোগ দিলে ধর্মনিরপেক্ষতা খোওয়া যায় বলে মনে করে বামেরা!’’

এই দুইয়ের মধ্যে যিনি মধ্যপন্থা নিয়ে চললেন, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যোগে যোগ দিয়ে মাতামাতি করলেন না, আবার কংগ্রেস-বামেদের মতো উপেক্ষাও করলেন না। মোদীর ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযানে’র বিরোধিতা করেছিলেন মমতা। কিন্তু এখন পরিস্থিতি অন্য রকম। তাই ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’-র কৌশলই বেছে নিলেন তিনি। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সরকারি যোগ দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী তো দূরের কথা, দেখা গেল না কোনও নেতা-মন্ত্রীকেই। ক্রীড়াসচিব ও স্বাস্থ্য দফতরের আয়ুষ বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল ছাড়া উঁচু দরের আমলাও কেউ হাজির ছিলেন না সেখানে।

কারও কারও মতে নিজেকে এবং সব মন্ত্রীদের যোগের এই অনুষ্ঠান থেকে দূরে রেখে মুখ্যমন্ত্রী রাজনৈতিক কৌশল বজায় রেখেছেন। রাজ্যের কোনও কোনও মহলে ঘটা করে যোগ দিবস উদ্‌যাপনের বিষয়টি ভাল চোখে দেখা হয়নি। যেমন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রেরা যোগ দিবসের অনুষ্ঠান থেকে কার্যত মুখ ফিরিয়েই ছিলেন। রাজারহাটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে যোগ দিবসের অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার-সহ গুটিকয়েক কর্মী হাজির ছিলেন। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদের সাধারণ সম্পাদক কবিরুল ইসলাম ‘যোগ দিবস’-এর বিষয়টি ‘বিজেপির রাজনৈতিক কর্মসূচি’ বলে মন্তব্য করেন। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবু তালেব খান বলেন, ‘‘যোগ দিবস পালনের ব্যাপারে চিঠি তিন দিন আগে পেয়েছি। গ্রীষ্মের ছুটি চলছে। তার উপরে রমজানের সময়। তাই হয়তো বেশির ভাগ পড়ুয়া আসেননি।’’ সংখ্যালঘু একাধিক নেতাও যোগ-দিবস নিয়ে কিছুটা বিরূপ মনোভাবই প্রকাশ করেছেন।

এই আবহে সরকারি অনুষ্ঠান থেকে রাজ্যের শাসক দলের সরে থাকা কেউ কেউ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন। তৃণমূলের তরফে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য বক্তব্য, এই অনুষ্ঠানে তাঁদের দলের কাউকে থাকতেই হবে, এমন কেউ বলেননি। তাঁর কথায়, ‘‘এমনিতে তো যোগ করলে শরীর-স্বাস্থ্য ভাল থাকে বলেই শুনেছি। এ সব অনুষ্ঠানে কে থাকবেন, না থাকবেন— সেটা তাঁর ব্যাপার।’’ যোগ দিবসে যোগ না দেওয়া নিয়ে কংগ্রেস কী বলছে? দলের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালার যুক্তি, ‘‘রাজপথে যা হল, সেটা তো মোদীর জনসংযোগ কর্মসূচি! তা না হলে যোগাভ্যাস কি আজকের? দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে অনেকেই যোগাভ্যাস করেন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর মতো এত প্রচার কেউ করেননি।’’ কংগ্রেসের কটাক্ষ, যে মোদী যোগ দিবস পালন করলেন, তাঁর সরকারই স্বাস্থ্য বাজেটে বিপুল কাটছাঁট করেছে। এমনকী খোদ যোগের বাজেটও কমানো হয়েছে। কংগ্রেস মুখপাত্রের কথায়, ‘‘যে যোগ ভারতের ঐতিহ্য, সেটাই এখনকার প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঢাক পেটানোর হাতিয়ার! তিনি শুধু ইভেন্ট আর হেডলাইন ম্যানেজার!’’

strategical yoga kejriwal yoga mamata yoga congress yoga left yoga yoga day celebration
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy