Advertisement
E-Paper

ছররায় জখম কাশ্মীরের চোখ, আলো ফেরানোর চেষ্টায় ওঁরা

মাত্র তিন দিনে মোট ৪৬টি অস্ত্রোপচার! কাশ্মীরে ছররায় জখম রোগীদের সুস্থ করে তুলতে এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন মুম্বইয়ের চক্ষু বিশেষজ্ঞ সুদর্শন নটরাজন এবং তাঁর সঙ্গে থাকা চার জন চিকিৎসক।

সাবির ইবন ইউসুফ

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৪৭
ছররার আঘাতে আইসিইউয়ে ইনশা মালিক। ছবি: এএফপি

ছররার আঘাতে আইসিইউয়ে ইনশা মালিক। ছবি: এএফপি

মাত্র তিন দিনে মোট ৪৬টি অস্ত্রোপচার! কাশ্মীরে ছররায় জখম রোগীদের সুস্থ করে তুলতে এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন মুম্বইয়ের চক্ষু বিশেষজ্ঞ সুদর্শন নটরাজন এবং তাঁর সঙ্গে থাকা চার জন চিকিৎসক।

জুলাই মাসের গোড়ায় সেনার হাতে হিজবুল কম্যান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর থেকেই ফের অশান্ত উপত্যকা। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন অন্তত ৪৯ জন। জখম হাজার হাজার। কিন্তু পাথর ছুড়ে যাঁরা বিক্ষোভে নেমেছেন, তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করতে ছররা গুলির ব্যবহার নিয়ে জোর বিতর্ক শুরু হয়েছে এখানে। ছররার আঘাতে চোখ নষ্ট হয়েছে অনেকের। কারও চামড়া ফুটো হয়ে বিকৃত হয়ে গিয়েছে মুখ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে সে সব ছবি। বিতর্কের মুখে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এ সপ্তাহের গোড়ায় বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করে ছররা গুলির বিকল্প ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছে।

আক্রান্তদের চোখ সারিয়ে তোলার জন্য চিকিৎসকদের একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পুণে শাখা সম্প্রতি নটরাজন-সহ মুম্বইয়ের এক হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাশ্মীরে নিয়ে আসে। তার পর থেকে গত শনিবার পর্যন্ত অভিজ্ঞ সেই চক্ষু বিশেষজ্ঞ নটরাজন এবং তাঁর দল বিনামূল্যে অন্তত ৬৯ অস্ত্রোপচার করে ফেলেছেন। নটরাজন আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন, কোনও বিপর্যয় পরবর্তী এলাকায় দুর্গতদের সেবা করতে গেলে যেমন মনে হয়, কাশ্মীরে ছররায় জখমদের চিকিৎসা করতে এসে সেই অনুভূতি হচ্ছে তাঁর। ১৪০ জন ছররা আক্রান্ত রোগীর মধ্যে দশ জনের রেটিনা পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তাঁর দাবি।

এঁদের মধ্যে ৪৬ জনের অস্ত্রোপচার নটরাজন করেছেন নিজে হাতে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘চোখের ভিতরে রক্তক্ষরণ হলে তা দীর্ঘ সময় ফেলে রাখলে সমস্যা হতে পারে। তাই আঘাত কিছুটা সেরে উঠলেই পরবর্তী অস্ত্রোপচার দ্রুত করা প্রয়োজন।’’ শনিবার পর্যন্ত অস্ত্রোপচার সেরে তিনি ফিরে গিয়েছেন মুম্বইয়ে। ২১ অগস্ট ফের আসবেন তিনি। যাঁদের দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার প্রয়োজন, তাঁদের যত্নও তিনি নিজেই নিতে চান। আপাতত কাশ্মীরের হাসপাতালে রয়ে গিয়েছেন দলের অন্য দুই চিকিৎসক। যাঁরা স্থানীয় চিকিৎসকদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ে যাচ্ছেন জখমদের সুস্থ করার লক্ষ্যে।

নটরাজন বলেছেন, ‘‘বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে চোখের অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে আমাকে। এখানে যারা জখম, তাদের বেশির ভাগই অল্পবয়সি। এই রকম পরিস্থিতি জীবনে এই প্রথম দেখছি।’’

যেমন নবম শ্রেণির ছাত্রী ইনশা মালিক। ছররা লেগে নষ্ট হয়ে গিয়েছে ওর বাঁ চোখ। শোপিয়ানে বাড়ির ব্যালকনি থেকে রাস্তায় বিক্ষোভ দেখছিল ইনশা। তখনই চোখে এসে লাগে ছররা গুলি। স্থানীয় চক্ষু চিকিৎসক তারিক কুরেশি বলেছেন, ‘‘ওর ডান চোখেও ছররা লেগে বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু বাঁ চোখে ঢুকে যায় সেটা। তাই দৃষ্টি ফেরার আশা প্রায় নেই।’’ গোটা মুখ আর গলায় ক্ষত নিয়ে হাসপাতালের আইসিইউয়ে এখন বন্দি ইনশা। ওর করোটি ভেদ করে ঢুকেছে অসংখ্য ছররা। যার জেরে মস্তিষ্কের ফাঁকা জায়গায় হাওয়া ঢুকে গিয়েছে। তবে এখন সে কিছুটা স্থিতিশীল।

নটরাজন যাঁদের অস্ত্রোপচার করেছেন, তাঁদের দৃষ্টি কি ফিরবে? তিনি বলছেন, চার থেকে ছ’সপ্তাহের আগে কিছু বলা সম্ভব নয়। তাই তিনি ফের রোগীদের দেখার জন্য ফিরে আসবেন এখানকার হাসপাতালে। যাঁদের রেটিনা ছাড়া চোখের অন্য অংশে ক্ষতি হয়েছে, তাঁদের দৃষ্টিশক্তি ফেরার সম্ভাবনা বেশি। এই সব রোগীদের আগামী এক বছর ধরে তাঁরা পর্যবেক্ষণে রাখতে চান বলে জানাচ্ছেন নটরাজন। এইমসে রেটিনা সার্জনদের সঙ্গে তাঁর কথা হচ্ছে। পরবর্তী চিকিৎসায় তাঁদেরও সাহায্য নেওয়া হবে। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির সঙ্গেও কথা বলেছেন নটরাজন। গত তিন সপ্তাহে ২০৪ জন চোখে ছররার আঘাত নিয়ে কাশ্মীরের ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এঁদের মধ্যে কারও এক চোখ কারও বা দু’টি চোখই নষ্ট হয়েছে।

kashmir doctors Sudarshan natarajan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy