দীর্ঘ সময় ধরে কাজ, বসবাসের জন্য অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, পরিবার থেকে দূরে থাকার মতো নানা কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে আধা সামরিক বাহিনীতে। বাড়ছে জওয়ানদের চাকরি ছাড়ার ঘটনাও। পরিসংখ্যান বলছে, গত তিন বছরে আধা সামরিক বাহিনীতে আত্মহত্যা করেছেন প্রায় ৪৩৮ জন। বিবাদে জড়িয়ে সহকর্মীকে হত্যা করেছেন সাত জন এবং গত ১১ বছরে ‘অসহনীয়’ কাজের পরিবেশের কারণে পাকা চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন প্রায় ২৩ হাজার জওয়ান।
কাজের পরিবেশের পাশাপাশি জওয়ানদের ব্যক্তিগত সমস্যাকে আত্মহত্যা বৃদ্ধির পিছনে অন্যতম কারণ হিসেবে পেয়েছে এই বিষয় নিয়ে গঠিত কমিটি। তাদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, সত্তর থেকে আশি শতাংশ আত্মহত্যার ঘটনা ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে ঘটেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, আত্মহত্যার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে জওয়ানের স্ত্রী বা পরিবারের কাছের কারও অকালমৃত্যু, দীর্ঘ সময় বাইরে থাকার কারণে বৈবাহিক সম্পর্কে টানাপড়েন বা বিবাহবিচ্ছেদের পরিস্থিতি তৈরি হওয়া, জমি-বাড়ি সংক্রান্ত বিবাদ, ছেলে-মেয়েদের উচ্চশিক্ষাজনিত সমস্যা। জওয়ানেরা যখন ছুটিতে গিয়েছেন সেই সময়ে অথবা ছুটি কাটিয়ে নিজের ইউনিটে যোগ দেওয়ার এক-দু’দিনের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটেছে।
রিপোর্টে এ-ও বলা হয়েছে, পুরুষদের থেকে মহিলাদের আধা সেনাবাহিনীর মধ্যে আত্মহত্যার সংখ্যা কম। সম্ভবত মহিলারা অন্য মহিলা কর্মীর কাছে মন খুলে কথা বলতে পারেন। পুরুষেরা লজ্জায় বা সমস্যার কথা বললে বাহিনীতে বিদ্রুপের পাত্র হয়ে উঠতে পারেন, এইআশঙ্কায় নিজের মধ্যে চেপে রেখে দিতে বাধ্য হন।
পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কারণে আধা সেনা ছেড়ে যাওয়ার প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। এ বারের শীতকালীন অধিবেশনে একটি প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই জানিয়েছেন, গত ১১ বছরে আধা সেনা ছেড়েছেন ২৩,৩৬০ জন। ২০১৬ সালে যেখানে আধা সেনা ছাড়ার সংখ্যা ছিল ১৩৬৩, সেখানে দশ বছর পরে ২০২৫ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০৭৭ জনে। গত দশ বছরে সবথেকে বেশি বিএসএফ থেকে চাকরি ছেড়েছেন জওয়ানেরা (৭৪৯৩ জন), তার পরেই রয়েছে সিআরপিএফ (৭ ৪৫৬ জন)। গত তিন বছরে আত্মহত্যার সবথেকে বেশি ঘটনা ঘটেছে সিআরপিএফে (১৫৯)। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ২০২৪ সালে বিএফএফে যেখানে ৫২ জন আত্মহত্যা করেছিলেন, সেখানে ২০২৫ সালে তা কমে এসেছে ২৫-এ।
আত্মহত্যার ঘটনা মোকাবিলার প্রশ্নে জওয়ানদের আরও বেশি করে ছুটি দেওয়ার পথ নিয়েছে আধা সেনা। যাতে আরও বেশি সময় পরিবারের সঙ্গে জওয়ানেরা কাটাতে পারেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে, বছরে ৭৫ দিন ছুটি পান জওয়ানেরা। যাঁরা দুর্গম, বিপদসঙ্কুল এলাকায় কর্মরত রয়েছেন, তাঁদের ছুটি বাড়িয়ে কিছু ক্ষেত্রে ১০০ দিনও করা হয়েছে। পাশাপাশি, অফিসারদের নিয়মিত ভিত্তিতে জওয়ানদের সঙ্গে বসে কথা বলে উদ্বেগ দূর করা, তাঁদের অভাব-অভিযোগ দূর করা, উন্নতমানের পোশাক ও রেশনের ব্যবস্থার উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে। যদিও রিপোর্টে ছুটি দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছ ব্যবস্থা চালু করা, চাকরিতে বদলির ক্ষেত্রে আরও মানবিক হওয়া, পাশাপাশি খালি পদে দ্রুত নিয়োগ করার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)