একের পর এক হামলা ও হুমকির ঘটনার পর বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ করা নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। সংখ্যালঘুদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষে আজ বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশন ভোটে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারলে তারা ভোটকেন্দ্রগুলিতে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন।
ঢাকায় একটি আলোচনাচক্রের আয়োজন করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব এ কথা জানিয়েছেন। পরিষদের কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক মণীন্দ্র কুমার নাথ বলেছেন, “বাংলাদেশে স্থানীয় কিংবা জাতীয় নির্বাচনে কোনও এক প্রার্থীর সমর্থন কিংবা বিরোধিতা করলেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা, হুমকি, অযথা হয়বানির ঘটনা ঘটে থাকে। এবার অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশন যদি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারেন, সংখ্যালঘুরা হয়তো ভোটদান থেকে বিরত থাকতে পারেন।” মণীন্দ্রের কথায়, “বাংলাদেশে বিভিন্ন গোষ্ঠী ধর্মকে রাজনীতির স্বার্থে ব্যবহার করে আচরণবিধি ভঙ্গ করছেন। ফলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন ভোটের সময়ের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।” তাঁর অভিযোগ, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। গত বছরের ৪ অগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর ও এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত যথাক্রমে ২১৮৪ ও ৪৮৯টি হামলার ঘটনা ঘটে সংখ্যালঘুদের উপরে। ডিসেম্বরে দীপু চন্দ্র দাস-সহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাঁচ জনকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে। এই প্রেক্ষাপটে ভোটের আবহে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
সূত্রের দাবি, একটি খুনের মামলাকে কেন্দ্র করে বৃহত্তর নোয়াখালিতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কয়েক জন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সংগঠনের অভিযোগ, সংখ্যালঘুদের হেনস্থা করতেই এই ধরপাকড়। পাশাপাশি, বাংলাদেশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ-এর পক্ষে মাহবুব আলম প্রদীপ শিক্ষকদের উপর হুমকি নিয়ে সরব হয়েছেন।
অশান্ত বাংলাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় হামলা, হেনস্থার আরও অভিযোগ সামনে এসেছে। গতকাল রাতের অন্ধকারে ঠাকুরগাঁওয়ে পুরনো একটি মাজারে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। আজ সকালে স্থানীয় লোকজন ও ভক্তরা মাজারে গেলে ভাঙচুরের দৃশ্য দেখতে পান। ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি মনির হোসেন জানিয়েছেন, গতকাল রাতের কোনও এক সময় শহরের সত্যপীর ব্রিজ এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে। হামলার খবর ছড়িয়ে পড়তেই সকাল থেকে আশপাশের বহু মানুষ মাজারে ভিড় করেন এবং ঘটনার প্রতিবাদ জানান। দোষীদের শাস্তি দেওয়ার দাবি তোলেন তাঁরা।
এ দিকে, দু’দল গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল সারারাত উত্তপ্ত থেকেছে শাহজাদপুর ইউনিয়নের দেওড়া এলাকা। একটি হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে দু-পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। জানা গিয়েছে, গত রাতে উভয়পক্ষের ২০-২৫টি বাড়িতে ভাঙচুর হয়। একাধিক বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগও সামনে এসেছে।
হিংসার ছবি চাঁপাইনবাবগঞ্জেও। শিবগঞ্জ উপজেলায় আবু সুফিয়ান নামে এক তরুণকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে কোপানো হয়েছে। ২২ বছর বয়সি ওই তরুণের দুই হাত, এক পা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। বুধবার উমরপুর হাট এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। সুফিয়ানের মায়ের অভিযোগ, তাঁদের আত্মীয় এক কিশোরীকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ জানাতেই তাঁর ছেলেকে মারধর ও জখম করেছে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের স্থানীয় কর্মীরা। এই ঘটনায় জামায়াতের দুই কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ ছাড়া, ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকার এক মাদ্রাসায় আজ একটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে মহিলা, শিশু-সহ ৪ জন আহত হয়েছেন। বিস্ফোরণে মাদ্রাসার একতলা ভবনের দু’টি দেওয়াল উড়ে গিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে বোমা তৈরির বিভিন্ন উপকরণ পাওয়া গিয়েছে। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মাদ্রাসা বন্ধ ছিল। তাই বড় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)