Advertisement
E-Paper

মায়ের পরিচয়ের ভিত্তিতেও জাতিগত শংসাপত্র পাবে মেয়ে! রায় প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে, বললেন, ‘যুগ পাল্টেছে’

আদালতের এই রায়কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন আইনজ্ঞেরা। কারণ, ধরে নেওয়া পারে, এখন থেকে তফসিলি জাতিভুক্ত কোনও মহিলা যদি উচ্চবর্ণের কাউকে বিয়ে করেন, সে ক্ষেত্রে বিশেষ পরিস্থিতিতে তাঁদের সন্তানও মায়ের জাতি পরিচয়ের ভিত্তিতে শংসাপত্র পেতে পারবে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:২১
মায়ের পরিচয়ের ভিত্তিতেই জাতিগত শংসাপত্র পাবে মেয়ে, রায় প্রধান বিচারপতি সূর্যকান্তের বেঞ্চের।

মায়ের পরিচয়ের ভিত্তিতেই জাতিগত শংসাপত্র পাবে মেয়ে, রায় প্রধান বিচারপতি সূর্যকান্তের বেঞ্চের। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

বাবা উচ্চবর্ণের। ফলে মা তফসিলি জাতিভুক্ত হলেও এত দিন জাতিগত শংসাপত্র পায়নি মেয়ে। কিন্তু এ বার দেশের শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিল, মায়ের পরিচয়ের ভিত্তিতেও তফসিলি জাতির শংসাপত্র পেতে পারে সন্তানেরা। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলায় এমন রায় দিয়েছে দেশের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। যদিও মূল মামলায় আইনি জটিলতার এখনও নিষ্পত্তি হয়নি, তবে এই রায়কে দৃষ্টান্তমূলক বলেই মনে করছেন আইনজ্ঞেরা।

গত ৮ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ এই রায় দিয়েছে। দুই বিচারপতির রায়, বাবা তফসিলি জাতিভুক্ত না-হলেও সন্তানকে জাতি শংসাপত্র দেওয়ার জন্য মায়ের পরিচয়ই যথেষ্ট। এর আগে ওই মামলায় মাদ্রাজ হাই কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিল, তাতে হস্তক্ষেপ করেনি সুপ্রিম কোর্ট। শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতি বলেন, “সময় পাল্টেচ্ছে। তা হলে মায়ের পরিচয়ের ভিত্তিতে কেন জাতিগত শংসাপত্র দেওয়া যাবে না?” শুধু তা-ই নয়, জাতি শংসাপত্র নিয়ে জটিলতার জেরে মেয়েটির শিক্ষায় যাতে কোনও বাধা না-আসে, সে বিষয়েও জোর দিয়েছে শীর্ষ আদালত।

মামলাটি পুদুচেরীর বাসিন্দা এক মহিলা ও তাঁর মেয়েকে ঘিরে। ওই মহিলার দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। কিন্তু মহিলার স্বামী উচ্চবর্ণের হওয়ায় তফসিলি জাতি শংসাপত্র পায়নি সন্তানেরা। মেয়ের জাতি শংসাপত্র বানানোর জন্য তহসিলদারের কাছে আবেদন করেন ওই মহিলা। তাঁর যুক্তি ছিল, বিয়ের পর থেকে তাঁর বাপের বাড়িতেই থাকেন স্বামী। তা ছাড়া, মহিলার পরিবার ‘আদি দ্রাবিড়’ সম্প্রদায়ভুক্ত। ফলে তাঁর সন্তানদের জাতিগত শংসাপত্র পাওয়া উচিত। সেই মামলা প্রথমে মাদ্রাজ হাই কোর্টে ওঠে। উচ্চ আদালত নির্দেশ দেয়, কিশোরীর পড়াশোনার কথা ভেবে তাকে জাতিগত শংসাপত্র দেওয়া হোক। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে মামলা হয়। এ বার সেখানেই মহিলার পরিচয়ের ভিত্তিতে তাঁর মেয়েকে জাতি শংসাপত্র দেওয়ার নির্দেশ দিল দুই বিচারপতির বেঞ্চ।

আদালতের এই রায়কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন আইনজ্ঞেরা। কারণ, ধরে নেওয়া পারে, এখন থেকে তফসিলি জাতিভুক্ত কোনও মহিলা যদি উচ্চবর্ণের কাউকে বিয়ে করেন, সে ক্ষেত্রে বিশেষ পরিস্থিতিতে তাঁদের সন্তানও মায়ের জাতি পরিচয়ের ভিত্তিতে শংসাপত্র পেতে পারবে। এমনিতে, তফসিলি জাতি ও জনজাতিভুক্তদের জাতিগত শংসাপত্র প্রদানের কিছু নিয়ম রয়েছে। এত দিন বাবার জাতি পরিচয় সন্তানদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হত। ১৯৬৪ সালের ৫ মার্চ এবং ২০০২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারির প্রেসিডেন্সিয়াল নোটিফিকেশনে বলা হয়েছিল, বাবার জাতের নিরিখেই ছেলেমেয়েরা শংসাপত্র পাবে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের কোন এলাকায়, কী পরিস্থিতিতে আবেদনকারীর বসবাস, তা-ও বিবেচনা করা হবে।

২০০৩ সালে পুনীত রাই বনাম দীনেশ চৌধরি মামলায় সুপ্রিম কোর্টও জানিয়ে দেয়, নির্দিষ্ট আইন না-থাকলে বাবার জাতি পরিচয়ই পাবেন সন্তান। অবশ্য ২০১২ সালে রমেশভাই দাভাই নাইকা বনাম গুজরাত সরকার মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, আন্তঃবর্ণ বিবাহের ক্ষেত্রে মামলার সমস্ত তথ্য খতিয়ে না-দেখে সন্তানের জাতিগত পরিচয় নির্ধারণ করা যাবে না। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, যদি বাবা উচ্চবর্ণের এবং মা তফসিলি জাতিভুক্ত হন, আর যদি সন্তান মায়ের সান্নিধ্যে বড় হয়, সে ক্ষেত্রে মায়ের পরিচয়ের নিরিখে জাতিগত শংসাপত্র দেওয়া যেতে পারে। তবে এ সব ক্ষেত্রে সন্তানকে প্রমাণ দেখাতে হবে যে, পিতা উচ্চবর্ণের হওয়া সত্ত্বেও তিনি কোনও বাড়তি সুযোগসুবিধা পাননি, বরং মা যে সম্প্রদায়ের ছিলেন, সেই সম্প্রদায়ের অন্য সদস্যদের মতোই বঞ্চনা, অপমান এবং প্রতিবন্ধকতা ভোগ করতে হয়েছিল তাঁকে।

Caste Certificate Mother Supreme Court CJI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy