বুলন্দশহর গণধর্ষণকে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ বলে আজম খান যে মন্তব্য করেছিলেন, তার তীব্র সমালোচনা করল সুপ্রিম কোর্ট। দুই বিচারপতির বেঞ্চ এ দিন প্রশ্ন তোলে, গণধর্ষণকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করছেন এক পদাধিকারী। বিশেষত, যখন ঘটনাটির সঙ্গে সেই ব্যক্তির কোনও যোগই নেই!’’
পাশাপাশি সোমবার ওই মামলায় ইলাহাবাদ হাইকোর্টের সিবিআই তদন্তের নির্দেশেও স্থগিতাদেশ দিল শীর্ষ আদালত। সব মিলিয়ে আরও এক বার আদালতে বড় রকম অস্বস্তিতে পড়ল অখিলেশ যাদবের সরকার।
পুলিশ-প্রশাসন-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলে গত ১৩ অগস্ট সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন বুলন্দশহর গণধর্ষণ কাণ্ডে নির্যাতিতার পরিবার। অভিযোগ, রাজ্যের পুলিশ তো সাহায্য করছেই না, পাশাপাশি গণধর্ষণকে রাজনৈতিক চক্রান্ত বলে ব্যাখ্যা করছেন রাজ্যের মন্ত্রীও। অগত্যা বিচারের খাতিরে এই মামলাকে উত্তরপ্রদেশ থেকে দিল্লি সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আর্জি জানান নির্যাতিতা নাবালিকার বাবা। সেই আর্জির ভিত্তিতেই আজ অখিলেশ যাদবের সরকার এবং উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী আজম খানকে নোটিস পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের শহরাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী আজম খান বলেছিলেন, বুলন্দশহর ধর্ষণ কাণ্ড একটি রাজনৈতিক চক্রান্ত। এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার আর্জিও জানিয়েছে ধর্ষিতার পরিবার। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি দীপক মিশ্র এবং সি নাগাপ্পনের বেঞ্চ এ দিন সেই আর্জির ভিত্তিতে কয়েকটি সাংবিধানিক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। শীর্ষ আদালত বলছে— সরকারি পদে থাকা কোনও মানুষ কী ভাবে এমন মন্তব্য করেন যাতে স্বচ্ছ বিচার নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে ‘অনিশ্চয়তা’ তৈরি হয়? সেই সঙ্গে রাজ্য সরকারকেও এ দিন একহাত নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন— সরকার যখন নাগরিকদের রক্ষাকর্তা, তখন এই সব মন্তব্য কি সরকার মেনে নেবে?
নির্যাতিতার পরিবারের আবেদন শুনে প্রবীণ আইনজীবী এফ এস নরিমানকে এই মামলার ‘আদালতবন্ধু’ হিসেবে নিয়োগ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি এমন গুরুতর অপরাধের মামলায় উচ্চপদাধিকারীদের বিবৃতি কতটা প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়েও কিছু আইনি প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট।
গত ২৯ জুলাই উত্তরপ্রদেশে জাতীয় সড়কে একটি যাত্রিবাহী বাস থামিয়ে লুঠপাট চালায় একদল দুষ্কৃতী। বাস থেকে নামিয়ে গণধর্ষণ করা হয় ৪৫ বছরের এক মহিলা ও তাঁর কিশোরী মেয়েকে। এই মামলায় আগেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে ইলাহাবাদ হাইকোর্ট। পাশাপাশি, তদন্ত প্রক্রিয়ায়ও নজরদারি চলবে বলে জানিয়েছিল আদালত।
তা সত্ত্বেও ধর্ষিতার পরিবারকে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হতে হল কেন? নির্যাতিতাদের আইনজীবী কিশলয় পাণ্ডে বলছেন, সুবিচারের পাওয়ার জন্যই এমন পদক্ষেপ। পুলিশের কাজে অখুশি ওই পরিবারের আবেদনপত্র বলছে, কোনও ‘যোগ্য এজেন্সি’কে দিয়ে তদন্ত করানো হোক। আজম খানের মন্তব্যের বিরোধিতা করে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার আর্জিও জানিয়েছেন নির্যাতিতার বাবা। তিনি জানান, এমন মন্তব্যে নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবারের সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। আবেদনপত্রে আজম খানের পাশাপাশি, উত্তরপ্রদেশের স্বরাষ্ট্র সচিব এবং পুলিশের বিরুদ্ধেও অভিযোগ তোলা হয়েছে। তিন সপ্তাহ পরে ফের শুনানি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy