তুলোধোনা বললেও কম বলা হয়।
জেলায় জেলায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক আদালত ভবন ও বিচারকদের বাসস্থান তৈরিতে ‘ঢিলেমি’-র জন্য সুপ্রিম কোর্টের তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়ল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। রাজ্যের মুখ্যসচিব ও অর্থসচিবকে আদালতে তলব করলেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ।
এ দিন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ রাজ্যের কাছে জানতে চায়, কত দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আদালত ভবন ও বিচারকদের বাসভবন তৈরির কাজ শেষ হবে। মুখ্যসচিবের হলফনামায় তার উত্তর না পেয়ে প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘আমরা স্তম্ভিত, বিস্মিত।’’ প্রশ্নের মুখে পড়েন কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলও। জবাব দেওয়ার জন্য তলব করা হয়েছে মুখ্যসচিব ও অর্থসচিবকে। ৫ ডিসেম্বর তাঁদের প্রধান বিচারপতির এজলাসে সশরীর হাজির হয়ে জবাবদিহি করতে হবে। যা নিয়ে প্রবল অস্বস্তিতে রাজ্য সরকার। কোনও ভাবে মুখ্যসচিবের হাজিরা এড়ানো যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
কত দিনের মধ্যে কাজ শেষ হবে, তা ঠিক না করেই অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে দেখে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘মুখ্যসচিব ঘোড়ার সামনে গাড়ি জুড়ে দিচ্ছেন!’’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আপনাদের অনেক গুরুতর প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।’’
জেলা স্তরে বিচারকদের শূন্যপদ ও আদালতের পরিকাঠামোর অভাব নিয়ে একগুচ্ছ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গের কাছে জানতে চেয়েছিল, কতগুলি আদালত ভবন ও বিচারকদের বাসস্থান তৈরি হচ্ছে? কত দূর কাজ এগিয়েছে? কত দিনের মধ্যে বাকি কাজ শেষ হবে?
মামলায় আদালত-বান্ধব আইনজীবী শ্যাম দিভান জানান, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিবের হলফনামা অনুযায়ী, ৭৫টি আদালত ভবন ও ৩৯টি বাসভবন তৈরির কাজ চলছে। যেখানে ৪২২টি আদালত ভবন ও ৬৩০টি বাসভবন প্রয়োজন। শুনেই প্রধান বিচারপতির তির্যক মন্তব্য, ‘‘গোটা ব্যাপারটার মধ্যে ঢিলেমি ও অনিচ্ছে চোখে পড়ছে না!’’ আদালত যা জানতে চেয়েছিল, তার কোনও উত্তরই মুখ্যসচিবের হলফনামায় নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এর পরেই রাজ্যের আইনজীবী সুহান মুখোপাধ্যায়ের দিকে একের পর এক প্রশ্নবাণ ধেয়ে আসে। এজলাসে হাজির ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলও। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বিচারপতি সঞ্জয় কিষেণ কউল, বিচারপতি কে এম জোসেফ জানতে চান, কত টাকা বরাদ্দ হয়েছে? রাজ্যের আইনজীবী উত্তর দেন, ৮০ কোটি টাকা। তিনি আরও জানান, গত ২০ নভেম্বরই মুখ্যসচিব, অর্থসচিব ও আইনসচিবের বৈঠক হয়েছে। যে সব কাজ চলছে, তার জন্য যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ হয়েছে।
রাজ্য সরকারের একটি সূত্রের বক্তব্য, ২০ নভেম্বরের বৈঠকের পরে তাঁর অধিকারের মধ্যে থাকা সব কাজ শেষ করতে বিচারসচিবকে নির্দেশ দেন মুখ্যসচিব। পূর্ত ও অর্থ দফতর নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করবে বলেও ঠিক হয়।
এ দিন বিচারপতিরা প্রশ্ন করেন, বাজেটের কত শতাংশ এই খাতে বরাদ্দ হয়েছে? সুহান জানান, তিনি দেখে জানাবেন। বিচারপতিরা প্রশ্ন তোলেন, চালু কাজ কত দিনের মধ্যে শেষ হবে? বাকি কাজ শেষ করতে কত দিন লাগবে? ভবিষ্যতে আরও কত টাকা বরাদ্দের পরিকল্পনা রয়েছে? রাজ্যের কাছে এ সবের উত্তর ছিল না। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘কত টাকা বরাদ্দ হচ্ছে, তার তথ্য নেই। কত দিনের মধ্যে কাজ শেষ হবে, তা জানা নেই। অথচ বলছেন, যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ হয়েছে!’’ পরবর্তী শুনানির আগে, ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করার সময়সীমা জানানোর নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy