Advertisement
১৪ অক্টোবর ২০২৪
Bilkis Bano

বিলকিসের ধর্ষকদের মুক্তির বিরুদ্ধে দ্রুত শুনানির আর্জি বিবেচনা করবে সুপ্রিম কোর্ট

২০০২ সালে গুজরাতের গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গা চলাকালীন সময়ে অন্তসত্তা বিলকিসকে ধর্ষণকে করে ১১ জন। তাঁর শিশুকন্যা-সহ পরিবারের সাত জন সদস্যকে তাঁর চোখের সামনেই খুন করা হয়।

সুপ্রিম কোর্ট।

সুপ্রিম কোর্ট। —ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৮:২৭
Share: Save:

বিলকিস বানোর ধর্ষকদের ‘সাজার মেয়াদ শেষের আগে’ মুক্তি দেওয়াকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দায়ের করা আবেদনের দ্রুততার ভিত্তিতে শুনানির আর্জি খতিয়ে দেখবে সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার প্রধান বিচারপতির ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ বিলকিসের আইনজীবী শোভা গুপ্তের আবেদন খতিয়ে দেখে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই আবহের মধ্যেই মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অজয় রস্তোগী এবং বিচারপতি বেলা ত্রিবেদীর বেঞ্চে ১১ ধর্ষক ও খুনির মুক্তির প্রতিবাদে ধর্ষিতা বিলকিসের আবেদনের শুনানি হবে।

গত ১৫ অগস্ট ৭৬তম স্বাধীনতা দিবসে বিলকিস-কাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় গুজরাত সরকার। তার আগে, মে মাসে মুক্তির জন্য শীর্ষ আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন ওই ধর্ষণের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীরা। সেই আবেদনের ভিত্তিতে গুজরাত সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিল আদালত। বিজেপি পরিচালিত গুজরাত সরকার ১১ অপরাধীর মুক্তির পক্ষে সওয়াল করে সুপ্রিম কোর্টের সবুজ সঙ্কেত পায়।

শীর্ষ আদালতের কাছে বিলকিসের আইনজীবী শোভার দাবি ছিল, ধর্ষণ ও খুনের মতো গুরুতর অপরাধে সাজাপ্রাপ্তদের মেয়াদ শেষের আগেই মুক্তির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হোক। এবং সেই শুনানি হোক দ্রুততার ভিত্তিতে। এর আগে মুক্তির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি মেনে নিয়েছিল প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ।

গুজরাত সরকার ১১ জন ধর্ষকের জেলের ভিতরে ‘ভাল আচরণের’ দাবি করলেও সরকারি তথ্য ‘অন্য কথা’ বলছে বলে অভিযোগ। ওই ১১ জন যখন বিভিন্ন সময় প্যারোলে জেলের বাইরে ছিল, তাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। দু’জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। দু’জনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জমা পড়েছে। ১১ জনের মধ্যে ১০ জনই প্যারোলের নিয়মভঙ্গ করেছেন। নিয়মভঙ্গের জন্য বেশ কয়েক জন জেলে শাস্তিও পেয়েছে। এই সব তথ্য জানা গিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টে জমা পড়া গুজরাত সরকারের হলফনামা থেকেই।

অপরাধীদের মুক্তির বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে যে মামলা হয়েছে, সেখানে বিচারপতিরা গুজরাত সরকারের কাছে নথিপত্র চেয়ে পাঠিয়েছিলেন। সেখানেই দেখা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও অপরাধীদের মুক্তিতে সায় দিয়েছিল। কিন্তু যে ‘ভাল আচার-ব্যবহারে’র যুক্তি দেখিয়ে সেই মুক্তির ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তার ভিত্তি নিয়েই প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে সরকারের জমা দেওয়া নথি খতিয়ে দেখলে। যদিও গুজরাতের বিজেপি সরকারের ওই যুক্তির পরেই গোধরা জেল থেকে ১১ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, ধর্ষণের ওই অপরাধীদের মুক্তির পরে শাসকদলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা সংবর্ধনা দেন বলেও অভিযোগ।

প্রসঙ্গত, ২০০২ সালে গোধরা-কাণ্ডের পর গুজরাতে সাম্প্রদায়িক হিংসা চলাকালীন, ৩ মে দাহোড় জেলার দেবগড় বারিয়া গ্রামে ভয়াবহ হামলা চালানো হয়। গ্রামের বাসিন্দা পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিসকে গণধর্ষণ করা হয়। বিলকিসের চোখের সামনেই তাঁর তিন বছরের মেয়েকে পাথরে আছড়ে মারে হামলাকারীরা। ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে। তাঁর পরিবারের আরও কয়েক জন সদস্যকে হত্যা করা হয়। এই অপরাধকে ‘বিরল থেকে বিরলতম’ আখ্যা দিয়ে মুম্বইয়ের সিবিআই আদালতে কঠোর সাজার পক্ষে সওয়াল করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছিল ওই বিশেষ আদালত। মামলা চলাকালীন এক জনের মৃত্যু হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Bilkis Bano 2002 Gujarat riots Supreme Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE