Advertisement
E-Paper

যোগ্যতার বিচারেই ফের মন্ত্রী প্রভু

বাজপেয়ী জমানায় রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। বিরোধী হলেও মন্ত্রীদের মধ্যে প্রণববাবু যাঁর মেধা ও শিক্ষার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতেন, তাঁর নাম সুরেশ প্রভু। আজ সকালে শিবসেনা ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে সেই সুরেশ প্রভুই এ বার নরেন্দ্র মোদী সরকারের পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন। গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পর্রীকরের পর তিনিই সব থেকে আলোচিত। মনে করা হচ্ছিল, রেল বা পরিকাঠামো সংক্রান্ত কোনও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক দেওয়া হবে তাঁকে। সদানন্দ গৌড়ার পর রেল মন্ত্রকের দায়িত্বই শেষ পর্যন্ত দেওয়া হল তাঁকে।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:১৭

বাজপেয়ী জমানায় রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। বিরোধী হলেও মন্ত্রীদের মধ্যে প্রণববাবু যাঁর মেধা ও শিক্ষার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতেন, তাঁর নাম সুরেশ প্রভু।

আজ সকালে শিবসেনা ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে সেই সুরেশ প্রভুই এ বার নরেন্দ্র মোদী সরকারের পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন। গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পর্রীকরের পর তিনিই সব থেকে আলোচিত। মনে করা হচ্ছিল, রেল বা পরিকাঠামো সংক্রান্ত কোনও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক দেওয়া হবে তাঁকে। সদানন্দ গৌড়ার পর রেল মন্ত্রকের দায়িত্বই শেষ পর্যন্ত দেওয়া হল তাঁকে।

কে এই সুরেশ প্রভু? রাজনীতিকদের অনেকেই মনে করেন, এত দিন ‘ভুল’ দলে ছিলেন প্রভু। মহারাষ্ট্রে শিবসৈনিক বলতেই কট্টর জঙ্গিপনার যে ছবিটা ভেসে ওঠে, সুরেশ প্রভুর ভাবমূর্তির সঙ্গে তা মেলে না। অটলবিহারী বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভায় শিল্প, বিদ্যুৎ, ভারী শিল্প, পরিবেশ, সার-রসায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি।

কিন্তু এক সময় প্রয়াত শিবসেনা প্রধান বালসাহেব ঠাকরের কুনজরে পড়েন। বাল ঠাকরের মনে হয়েছিল, বাজপেয়ীর খুব বেশি রকমের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন সুরেশ। তাই প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা অগ্রাহ্য করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে প্রভুকে তুলে নেন শিবসেনা প্রধান। পরে আর কখনও তাঁকে লোকসভার টিকিট দেওয়া হয়নি। পাঠানো হয়নি রাজ্যসভাতেও।

দলের শীর্ষনেতার কুনজরে পড়লে রাজনীতিকরা সাধারণত আরও স্তাবকতায় মন দেন। সুরেশ প্রভু মন দিয়েছিলেন পড়াশোনায়। অর্থনীতি, জলবায়ু নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। পরিবেশ বিষয়ে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হন। সেই সুবাদে গুজরাতে অপ্রচলিত বিদ্যুৎ নিয়ে মোদীর সঙ্গে কাজও করেন তিনি। এত দিন মন্ত্রী না হলেও মোদী তাঁকে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য উপদেষ্টা গোষ্ঠীর প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেন। তাঁকে নিজের মন্ত্রিসভায় নিতে বদ্ধপরিকর ছিলেন মোদী। কিন্তু এ বার মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের ঠিক আগে শিবসেনার স্পষ্ট অবস্থান ছিল, মন্ত্রী করার জন্য তাদের দলের পক্ষ থেকে প্রভুর নাম দেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রী চাইলে তাঁকে বিজেপির থেকে মন্ত্রী করতে পারেন।

আজ সেই পথেই হেঁটেছেন নরেন্দ্র মোদী। মহারাষ্ট্র থেকে দিল্লির রাজনীতিতে বিজেপি-শিবসেনার টানাপড়েন যখন চরমে, সেই দিনই সাতসকালে শিবসেনা থেকে পদত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন প্রভু। অমিত শাহর হাত থেকে বিজেপির প্রাথমিক সদস্যপদ নিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনে শপথ নিতে পৌঁছন তিনি।

জোট রাজনীতিতে এত দিন রেল বা পরিকাঠামো সংক্রান্ত মন্ত্রকগুলি শরিক দলের নেতাদের দেওয়া হতো। কিন্তু অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বদ্ধপরিকর মোদী ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন। তিনি মনে করছেন, পরিকাঠামো হল অর্থনীতির চালিকাশক্তি। তাই এই সব মন্ত্রকও নিজের দলের নেতাদের হাতে রাখতেই আগ্রহী তিনি। প্রভু বিজেপিতে আসায় তাঁকে এই রকম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক দেওয়ার ক্ষেত্রেও বাধা থাকল না।

পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে প্রভুর মতো ব্যক্তিদের শপথগ্রহণকে শিল্প মহলও স্বাগত জানিয়েছে। বণিকসভা অ্যাসোচ্যাম-এর বক্তব্য, “ক্যাবিনেটে এমন নেতাদের নেওয়া হয়েছে, যাঁরা পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার জন্য পরিচিত। এই সব মাপকাঠিতে মোদী যে কোনও আপস করছেন না, এটা তারই প্রমাণ।” এ দেশে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের সংস্কার নিয়ে যখনই আলোচনা হয়েছে, তখনই সুরেশ প্রভুর নাম উঠেছে। কারণ কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ আইন তৈরি করে তিনি এ দেশে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের সংস্কারের কাজ শুরু করেন। নদী সংযুক্তিকরণের পরিকল্পনাও তাঁরই তৈরি।

বিজেপি নেতারা বলছেন, প্রভুর মন্ত্রিসভায় আসা ছিল শুধুই সময়ের অপেক্ষা। গত পাঁচ মাসে মন্ত্রী না হয়েও মোদী সরকারের অন্দরমহলে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। গোটা দেশে সাত দিন চব্বিশ ঘণ্টা বিদ্যুৎ জোগানের লক্ষ্য নিয়েছে মোদী সরকার। এ জন্য বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের পাশাপাশি কয়লা ও অপ্রচলিত বিদ্যুৎ ক্ষেত্রেরও উন্নতি প্রয়োজন। তিনটি ক্ষেত্রে এক সঙ্গে উন্নয়নের জন্য কী করা উচিত, তা ঠিক করতে সুরেশ প্রভুর নেতৃত্বে উপদেষ্টা গোষ্ঠী তৈরি হয়। সেই কাজের জন্য মন্ত্রী হওয়ার আগেই সাউথ ব্লকে নিজস্ব দফতর পেয়ে গিয়েছিলেন প্রভু।

ব্রিসবেনে আসন্ন জি-২০ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীকে সাহায্য করার জন্য তাঁকে ‘শেরপা’ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। যোজনা কমিশনের পাট গুটিয়ে নরেন্দ্র মোদী যে নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার দায়িত্ব প্রভুকে দেওয়া হবে বলেও জল্পনা ছিল। জি-২০ সম্মেলনের আলোচ্য বিষয় নিয়ে গত সপ্তাহে এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রভুকে প্রশ্ন করা হয়, ‘ব্রিসবেনে মন্ত্রী হিসেবে যাবেন?’ রসিকতা করে প্রভু জবাব দেন, “এ বিষয়ে জি-২০-তে আলোচনা হতে পারে।” আজকের পরে যদিও আর সে আলোচনার অবকাশ রইল না।

modi ministry Suresh Prabhakar Prabhu new delhi premanshu choudhuri national news online national news Suresh Prabhu cabinet minister Shiv sena BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy