ছবি: সংগৃহীত।
নাশকতা-অন্তর্ঘাত ছাড়াও রেল আর রেলকর্মীদের গাফিলতিজনিত নানান কারণে দুর্ঘটনায় পড়ে ট্রেন। তার মধ্যে রেললাইন ভাঙা থাকায় বিপত্তি ঘটে অনেক ক্ষেত্রেই। সেই সব ক্ষেত্রে নজরদারিতে গাফিলতির জন্য আঙুল ওঠে লাইনে নজরদারির জন্য নিযুক্ত রেলকর্মীদের দিকে। যত্রতত্র লাইন ভেঙে ট্রেন দুর্ঘটনা রুখতে এ বার সেই সব নজরদার অর্থাৎ ট্র্যাকম্যানদের উপরেই জিপিএস-এর মাধ্যমে নজরদারি করবেন রেল-কর্তৃপক্ষ।
কী ভাবে চলবে এই নজরদারি?
রেল সূত্রের খবর, ট্র্যাকম্যানদের দেওয়া হবে মোবাইল ফোন। তাতে থাকবে ‘গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম’ বা জিপিএস প্রযুক্তি। সেই প্রযুক্তির সাহায্যেই প্রয়োজন অনুযায়ী ট্র্যাকম্যানদের অবস্থান দেখে নেবে রেল কন্ট্রোল। তাঁরা লাইনে ঠিকঠাক নজর রাখছেন কি না, নজর রাখা হবে তার উপরে। দরকার পড়লে ওই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ট্র্যাকম্যানেরাও কন্ট্রোলে খবর পাঠাবেন। জিপিএসের সুবিধা যাতে সর্বত্র মেলে, তার জন্য সাহায্য নেওয়া হবে ইসরো-র।
ট্র্যাকম্যানদের কাজ রেললাইন ঠিক আছে কি না, তার উপরে নিরন্তর নজর রাখা। লাইনের ভাঙা অংশ ঠিক সময়ে তাঁদের নজরে না-পড়লে এবং তাঁরা যথাস্থানে খবর পাঠিয়ে তা সারানোর বন্দোবস্ত না-করলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যায়।
রেল সূত্রের খবর, প্রায় সর্বত্রই দু’টি স্টেশনের মধ্যবর্তী দূরত্ব সাত থেকে আট কিলোমিটার। এই নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের লাইন পরীক্ষার জন্য সব স্টেশনেই কয়েক জন করে ট্র্যাকম্যান থাকেন। নিয়ম অনুযায়ী দু’জন ট্র্যাকম্যান স্টেশনমাস্টারের কাছ থেকে একটি খাতা নিয়ে লাইন দেখতে দেখতে সামনের স্টেশনের দিকে হেঁটে এগোবেন। উল্টো দিক থেকেও একই ভাবে দু’জন লাইন দেখতে দেখতে এগিয়ে আসবেন। মাঝপথে চার জন নিজেদের খাতা বিনিময় করে স্টেশনে ফিরে আসবেন। এ ভাবে রেললাইন পরীক্ষার কাজে সারা দিনে তাঁদের ১৮-২০ কিলোমিটার হাঁটার কথা।
আরও পড়ুন: ডিজেল না বিদ্যুৎ, ইঞ্জিন বিতর্কে রেল
অভিযোগ, এই কাজটাই ঠিকমতো হচ্ছে না। লাইন যে ভেঙেছে বা তাতে চিড় ধরেছে, সেটা ধরা পড়ছিল না সেই জন্যই। তার জেরে দুর্ঘটনা ঘটছিল। গত ছ’মাসে যে-ক’টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তার কারণ হল ভাঙা লাইন। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, লাইন ভাঙা ছিল বলেই ২৪ নভেম্বর উত্তরপ্রদেশের মানিকপুরে দুর্ঘটনায় পড়ে ভাস্কো-দা-গামা এক্সপ্রেস। মারা যান তিন যাত্রী। লাইন যে ভাঙা, সেই খবর চালক যথাসময়ে জানতে পারেননি। তাতেই বিপত্তি।
রেলকর্তাদের একাংশ বলছেন, যতই ‘এক্স-রে’ এবং ‘ফ্ল ডিটেক্টর’ মেশিন আসুক না কেন, জন্মলগ্নের এত বছর পরেও লাইন ভাঙার খবর পেতে রেল মূলত ট্র্যাকম্যানদের উপরেই নির্ভরশীল। মাঝেমধ্যে ট্রেনচালকেরাও লাইন ভাঙার খবর দেন। তবে লাইনের হালহকিকত জানতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্ভর করতে হয় ট্র্যাকম্যানদের উপরে।
ট্রেন পরিচালন ব্যবস্থায় এর আগে বিশেষ বিশেষ ট্রেনকে চিহ্নিত করতে কিছু ইঞ্জিনে জিপিএস প্রযুক্তি বসানো হয়েছে। ট্রেন আসার খবর জানান দিতে বেশ কিছু প্রহরাবিহীন লেভেল ক্রসিংয়েও বসানো হয়েছে ওই প্রযুক্তি। তাতে ভাল সাড়া পেয়ে এ বার ট্র্যাকম্যানদের উপরেও ২৪ ঘণ্টা জিপিএসের মাধ্যমে নজরদারি চালানোর সিদ্ধান্ত নিল রেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy