বাংলাদেশে মিশতে চলা ভারতীয় ছিটমহলগুলি থেকে ভারতে আসতে চাওয়া মানুষের সংখ্যা হাজারও পেরোচ্ছে না। বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত পর্যায়ের সমীক্ষা শেষে ভারত ও বাংলাদেশের সরকারি অফিসারদের হাতে আসা হিসেব অনুযায়ী ১১১টি ভারতীয় ছিটমহলের ৩৭ হাজার ৩৬৯ জন বাসিন্দার মোট ৯৭৯ জন ভারতের নাগরিকত্ব বজায় রেখে এ দেশে আসতে চেয়েছেন।
দু’দেশের স্বাক্ষর হওয়া স্থলসীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী ৩১ জুলাই ছিটমহল বিনিময়ের কাজ শেষ হচ্ছে। যে ৫১টি বাংলাদেশি ছিটমহল ভারতে মিশতে চলেছে, তার ১৪ হাজার ২১৫ জন বাসিন্দার সকলেই ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়ে এ দেশে থেকে যেতে চেয়েছেন। তার সঙ্গে বাংলাদেশি ছিটমহলগুলি থেকে ভারতে আসতে চাওয়া ৯৭৯ জন যোগ হলে ১৫ হাজার ১৯৪ জন মানুষের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে ভারত সরকারকে, যা তাদের অনুমানের চেয়ে অনেকটাই কম।
রাজ্য সরকার কেন্দ্রের কাছে পুনর্বাসন প্যাকেজ চেয়ে যে আবেদন করেছিল, তাতে বলা হয়েছিল— ৬৯ হাজার লোকের ভার নিতে হতে পারে তাদের। তাদের জন্য জমির ব্যবস্থা করাটাও সমস্যা হতে পারে। সংসদে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সেই প্যাকেজ ঘোষণার সময়ে জানিয়েছিলেন, আনুমানিক ৩৭ হাজার লোকের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হতে পারে। দেখা যাচ্ছে প্রকৃত সংখ্যাটা তার অর্ধেকেরও কম। সমীক্ষা ও পুর্বাসনের দায়িত্বে থাকা বিদেশ মন্ত্রকের এক অফিসার জানাচ্ছেন, বাংলাদেশি ছিটমহলের যে ১৪ হাজার বাসিন্দা ভারতীয় নাগরিকত্ব নিতে চান, তাঁদের জমি ও বসত বাড়ি রয়েছে। ওই এলাকায় স্কুল ও চিকিৎসাকেন্দ্রের মতো পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। নতুন যে ৯৭৯ জন আসতে চান, সংখ্যায় কম হওয়ায় তাঁদের জমির ব্যবস্থাও ছিটমহলেই করা যেতে পারে। তবে আপাতত তাঁদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হবে। তার পরের কাজ হবে তাঁদের হাতে নাগরিক পরিচিতি পত্র তুলে দেওয়া। এর পরে তাঁরা যদি দেশের অন্য কোথাও কাজ নিয়ে বা জমি-বাড়ি কিনে চলে যেতে চান, সরকারের আপত্তি নেই। সেটা না হলে পুনর্বাসন প্যাকেজের আওতায় ভারত সরকারই তাঁদের জন্য জমির ব্যবস্থা করবে।
প্রথম পর্যায়ে ক্যাম্প বসিয়ে করা সমীক্ষায় ভারতীয় ছিটমহলগুলি বাংলাদেশে মিশে গেলে সেখান থেকে ভারতে আসার জন্য অপশন দিয়েছিলেন মোট ১১২৭ জন। কিন্তু পরে অনেকে সেই পছন্দ পরিবর্তন করতে চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। কোনও কোনও পরিবারের কিছু মানুষ বাংলাদেশে থাকতে চেয়ে, আবার অন্যরা ভারতে আসার পক্ষে অপশন দেওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছিল। দ্বিতীয় পর্যায়ের সমীক্ষায় দু’দেশের অফিসারেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে অপশন যাচাইয়ের সময়ে পরিবারের সকলের সঙ্গে কথা বলে সে সমস্যা মিটিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু এত কম মানুষ কেন ভারতে আসতে চাইছেন? এ প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের এক অফিসার ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তাকেই প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করছেন। ভিটে-মাটির টান ছেড়ে আসতে চাইছেন না অধিকাংশ মানুষ। কেউ কেউ আবার বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া পুনর্বাসন প্যাকেজের ওপর ভরসা রাখছেন। তিনি জানাচ্ছেন— যাঁরা আসতে চেয়েছেন, তাঁদের অনেকেরই ভারতে আত্মীয় রয়েছেন। সেখানে থিতু হতে তাঁদের সমস্যা হবে না বলে মনে করছেন তাঁরা।
তবে কুচলিবাড়ি সংগ্রাম কমিটির মতো ছিটমহলের কিছু সংগঠনের অভিযোগ, বাংলাদেশে শাসক দলের সমর্থকদের পরোক্ষ চাপেই অনেকে চাইলেও ভারতে আসার পক্ষে অপশন দিতে পারেননি। এমনকী এমন কয়েকটি পরিবারকে অপশন দিতে দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ। ছিটমহল নিয়ে গবেষণা করা কোচবিহারের দেবব্রত চাকীও জানান, ভারতীয় ছিটমহলগুলি থেকে এমন কিছু অভিযোগ তিনিও পেয়েছেন।
বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তা জানাচ্ছেন, সমীক্ষার কাজে থাকা অফিসারদের কাছে এমন কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। অপশন পরিবর্তন করতে চেয়ে যাঁরা চিঠি দিয়েছিলেন, সে চিঠি গৃহীত হবে কি না— তা নিয়ে কোথাও কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। সব চিঠির প্রেরকের বাড়িতে গিয়ে যাচাই করে তবে চিঠি গ্রহণ করা হয়েছে। কোনও মহল থেকে চাপের অভিযোগ কেউই করেননি। ওই সরকারি কর্তা জানান, বিভিন্ন সংগঠনের তরফে এ ধরনের যে সব অভিযোগ জমা পড়েছে, সেগুলির তদন্ত করে দেখা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy