Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

সুস্মিতা দেবের কথায় ঝড় উঠল বরাকে

বেশ কিছুদিন পর চর্চায় এলেন শিলচরের সাংসদ সুস্মিতা দেব। রাজনৈতিক মহল কী অরাজনৈতিক আলোচনায়— আজ কাছাড় জুড়ে তাঁকে নিয়েই কথা। ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় শিলচরের সাংসদ সুস্মিতা দেব কী বললেন, আনন্দবাজারের পাতায় দেখতে চাইলেন অনেকেই

উত্তম সাহা
শিলচর শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৬ ০৯:৪৫
Share: Save:

বেশ কিছুদিন পর চর্চায় এলেন শিলচরের সাংসদ সুস্মিতা দেব। রাজনৈতিক মহল কী অরাজনৈতিক আলোচনায়— আজ কাছাড় জুড়ে তাঁকে নিয়েই কথা। ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় শিলচরের সাংসদ সুস্মিতা দেব কী বললেন, আনন্দবাজারের পাতায় দেখতে চাইলেন অনেকেই। শিলচর ডিএসএ-র সচিব বাবুল হোড়ের বাড়িতে ভোর থেকে আয়কর অফিসাররা তল্লাশি চালাচ্ছেন। সে সব কথা সরিয়ে রেখেও ডিএসএ-র সামনে আলোচনায় উঠে আসে সুস্মিতা প্রসঙ্গ। একই অবস্থা শিলচর ইন্দিরা ভবনে।

সুস্মিতা দেবের নানা মন্তব্যে কংগ্রেস নেতাদের মতো বিজেপি শিবিরেও প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সাধারণ মানুষও পক্ষে-বিপক্ষে মতপ্রকাশ করছেন। অনেকের বক্তব্য, সুস্মিতা দেব অকপট। তাই অনেক কথা সহজে বলে ফেলেন। তবে ‘হাইকমান্ডের চাপে মা (বীথিকা দেব)-কে দাঁড়াতে রাজি করানো’-র তত্ত্ব মানতে নারাজ অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, টিকিট নিয়ে ভোটের আগে কী লড়াইটাই না হল কংগ্রেসে!

সেই সময়ে টিকিটের দাবিদার থাকা প্রাক্তন পুরপ্রধান তমালকান্তি বণিক স্বীকার করেন, বীথিকা দেবের হারের পর তিনি সুস্মিতা দেবকে ফোন করেননি। তাই বলে বহু কাঠখড় পুড়িয়ে তাঁকে সুস্মিতাদেবী চেয়ারম্যান করেছেন, এ দাবি মানতে নারাজ তমালবাবু। বরং পাল্টা অভিযোগ করেন, সাংসদ চাইলে আরও আড়াই মাস আগে তিনি চেয়ারম্যান হতেন। পুরপ্রধান পদে সুস্মিতাদেবীর ইস্তফা ও তমালবাবুর দায়িত্বগ্রহণের মধ্যে আড়াই মাসের ব্যবধান ছিল। সেই সময় ভারপ্রাপ্ত প্রধান ছিলেন উপসভাপতি বিজেন্দ্রপ্রসাদ সিংহ। তমালবাবুর কথায়, ‘‘সাংসদ চাইছিলেন ভারপ্রাপ্ত দিয়েই কাজ চালাতে।’’ নিজে উদ্যোগী হয়ে নির্বাচন শাখার জটিলতা কাটিয়েছিলেন বলেই সভাপতির দায়িত্ব নিতে সক্ষম হয়েছিলেন, দাবি তমালবাবুর।

সুস্মিতাদেবীকে খানিকটা সতর্ক করে দিয়েই তিনি বলেন, ‘‘অনেক গোপন কথা রয়েছে, সে সব বলতে চাই না। বললে ফেঁসে যাবেন।’’ টিকিটের জন্য ছোটাছুটির কথা অস্বীকার করে তমালবাবু বলেন, ‘‘যাঁদের সঙ্গে দেখা করেছি বলে তাঁর সন্দেহ, তাঁরা আমাকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু আমি যাইনি।’’

এ ভাবে বিরোধ প্রকাশ্যে আসার পরও সুস্মিতা-ব্রিগেডের এক সময়ের সেনাপতি তমালবাবু আশাবাদী, কংগ্রেস পুনরুজ্জীবিত হবে। সে জন্য কিছু নীতির পরিবর্তন প্রয়োজন। নেতাদের ব্যক্তিকেন্দ্রীক ভাবনা থেকে সরে এসে দলের কথা ভাবতে হবে।

শহর কংগ্রেস কমিটির সভাপতি শৈবাল দত্ত স্বীকার করেন, ‘‘দিদি (সুস্মিতা দেব) আমাকে সভাপতি করার জন্য বহু কাঠখড় পুড়িয়েছেন।’’ এর পরই তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কিন্তু আমি ওই পদের যোগ্য ছিলাম কি না, সেটা তিনি বলছেন না কেন। আর যোগ্য হলে কর্মীদের টেনে তুলবেন, এটাই তো নেতৃত্বের ধর্ম।’’ সেইসঙ্গে শৈবালবাবু মন্তব্য করেন, ‘‘প্রতিটি ভোটে দিদির জন্য কী ই না পরিশ্রম করতে হয়েছে! অনাস্থায় পরাস্ত হওয়ার পর ফের পুরসভার সভাপতি কী করে হলেন, তিনি এত সহজে সব ভুলে গেলেন!’’

সুস্মিতা দেবের মন্তব্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে বিজেপি নেতাদের মধ্যেও। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ বলেন, ‘‘বিধানসভা ভোটে জনগণ কংগ্রেসের হাড় ভেঙে দিয়েছেন। তাই তাঁরা এখন দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছেন।’’ তিনি জানান, ১২ ও ১৩ জুলাই অসমের বিজেপি বিধায়কদের জন্য প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। দল সেখানে ক্লাস নেওয়ার জন্য তাঁকে অনুরোধ করেছে। এর পরও কি কারও মনে হতে পারে, তিনি দলে অপ্রাসঙ্গিক, জানতে চান কবীন্দ্রবাবু। দিলীপকুমার পালকে ডেপুটি স্পিকার করা প্রসঙ্গে কবীন্দ্রবাবুর মন্তব্য, ‘‘এটি অত্যন্ত সম্মানজনক পদ।’’ কবীন্দ্রবাবুর মত, কংগ্রেস শুধু পাওয়ার জন্য রাজনীতি করে। সে দিক থেকে তাঁরা বিচার বিশ্লেষণ করেন।

দিলীপবাবু অবশ্য সরাসরি কোনও প্রতিক্রিয়া প্রকাশে রাজি হননি। শুধু বললেন, ‘‘ডেপুটি স্পিকারের মতো সাংবিধানিক পদে থেকে এমন অবান্তর ও হাস্যকর কথার জবাব দেওয়া সমীচিন নয়। এ সব কথা বালখিল্যসুলভ!’’

তাঁদের জন্য চিন্তা করায় প্রদেশ বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাজদীপ রায় সাংসদ সুস্মিতা দেবকে সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপির এতটাই প্রাসঙ্গিকতা যে, কংগ্রেস সাংসদকেও তাঁদের নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। কংগ্রেস যে ভাল নেই, তাঁর কথাবার্তায় স্পষ্ট।’’ সুস্মিতাদেবী কংগ্রেসের রাষ্ট্রীয় স্তরের মুখপাত্র, সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে, রাজদীপ রায়ের পরামর্শ, —‘‘বরাকের কথা এখন বাদ দিন। সর্বভারতীয় স্তরে কংগ্রেসকে টেনে তোলার চেষ্টা করুন।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘কে বিশ্বাস করল কি না করল, তা ভাবি না। বিজেপির এক জন সাধারণ কর্মী হিসেবে অন্য নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলের জন্য সর্বদা কাজ করে যাব।’’ সাংসদ সুস্মিতা দেব অবশ্য বিরোধী নেতাদের প্রতিক্রিয়ায় কিছু বলতে চাননি। তবে তমাল-শৈবালদের পাল্টা মন্তব্যে খানিকটা আহত তিনি। তমালবাবুকে পাল্টা প্রশ্ন করেন— পুরসভার সভাপতি হওয়ার জন্য তাঁর সংখ্যাগরিষ্ঠতা কী করে এসেছিল? পরে নিজেই বলেন, ‘‘পুরপ্রধান পদের জন্য তাঁর কথা বলতেই সবাই আপত্তি তুলেছিলেন। সে সময় কী ভাবে যে তাঁদের বাগে আনতে হয়েছে, সে সব তো আমিই জানি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sushmita Dev barak
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE