কয়েক বছর আগে বাংলাদেশে নাম কুড়িয়েছিল ‘লাস্ট বেঞ্চের ফার্স্ট বয়’। ক্লাসের শেষ বেঞ্চে বসা ছাত্র নানা বিদ্রুপ, অপমান সহ্য করতে করতে কী ভাবে ফার্স্ট বয় হয়ে সামনের বেঞ্চে চলে এল, সেই গল্পই বলা হয়েছিল সেখানে। স্কুল-জীবনে পিছনের বেঞ্চকে ঘিরে নানা গল্প সঞ্চয়ে আছে প্রায় প্রত্যেকেরই। সেই সামনের এবং পিছনের বেঞ্চের ফারাক এ বার মুছে যেতে চলেছে! কেরলের পাশাপাশি দক্ষিণী আর এক রাজ্য তামিলনাড়ু সরকারি স্তরে উদ্যোগী হয়েই ‘ব্যাক বেঞ্চ’ তুলে দিতে চাইছে।
কেরলের কোল্লম জেলার দু’টি স্কুলে প্রথম শুরু হয়েছিলঅর্ধ-বৃত্তাকারে পড়ুয়াদের বসানোর ব্যবস্থা। ঘটনাচক্রে, কেরলের পরিবহণ মন্ত্রী তথা অভিনেতা কে বি গণেশ কুমারের পরিবারের হাতে রয়েছে সেই স্কুলের পরিচালনার ভার। মালয়ালম ছবি ‘স্থানার্থী শ্রীকুট্টন’ মুক্তি পেয়েছিল গত বছর। সপ্তম শ্রেণির ছাত্র শ্রীকুট্টন লাস্ট বেঞ্চের পাট তুলে দিয়ে ক্লাসে ‘ইউ’ আকারে আসন সাজিয়ে বসার ভাবনা নিয়ে এল, সেই গল্প ছিল ছবিতে। সেখান থেকেই গণেশ তুলে নিয়েছিলেন ক্লাসে বসার ব্যবস্থা বদলে দেওয়ার ধারণা। তার পরে রাজ্যের ৮টি স্কুলে তুলে দেওয়া হয়েছিল বেঞ্চের শ্রেণি বিভাজন। সাড়াফেলার পরে কেরলের শিক্ষা দফতর উদ্যোগী হয়েছে সারা রাজ্যেই নতুন এই ব্যবস্থা চালু করার।
বাম-শাসিত কেরলের শিক্ষামন্ত্রী ভি শিবনকুট্টির মতে, ‘‘অর্ধ-বৃত্তাকারে ক্লাসে বসার ব্যবস্থা করা গেলে সব পড়ুয়া সমান ভাবে বোর্ড এবং শিক্ষককে দেখতে পারে। শিক্ষকও সব পড়ুয়ার দিকে নজর রাখতে পারবেন। এতে যেমন পঠন-পাঠনে সুবিধা, তেমনই ‘ব্যাক বেঞ্চে’র সঙ্গে যে মানসিক চাপ এসে পড়ে, সেটাও কাটানো যাবে।’’ যে মালয়ালম ছবি থেকে এই বেঞ্চ-বৈষম্য তুলে দেওয়ার যাত্রা শুরু বলে হইচই, সেই ছবির পরিচালক বীনেশ বিশ্বনাথন অবশ্য বিশেষ কোনও কৃতিত্ব দাবি করছেন না। বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। বীনেশ তাঁদের বলেছেন, কেরলে আগে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা প্রকল্পের আওতায় এই ধরনের বসার ব্যবস্থা ছিল। মাঝে আবার হারিয়ে গিয়েছিল। একেবারে সরকারি নির্দেশমাফিক না-হলেও মালয়ালম ছবির সূত্রে কিছু স্কুল নিজেদের উদ্যোগে এমন বেঞ্চ-সাম্যবাদ আনতে শুরু করেছে। সেই তালিকায় যেমন পঞ্জাবের স্কুল আছে, তেমনই এ রাজ্যের মালদহের বার্লো গার্লস হাই স্কুলও আছে।
কেরলের পরিকল্পনার পিঠোপিঠিই তৎপর হয়েছে তামিলনাড়ুর এম কে স্ট্যালিনের সরকার। সূত্রের খবর, দক্ষিণী ওই রাজ্যেও স্কুল শিক্ষা অধিকর্তা জেলার শিক্ষা আধিকারিকদের নির্দেশিকা পাঠিয়েছেন ক্লাসে বসার নতুন ব্যবস্থা কত দিনের মধ্যে চালু করা সম্ভব, তা জানতে চেয়ে। পড়ুয়াদের জন্য স্কুলব্যাগের পাশাপাশি ল্যাপটপ বা ট্যাবলেট রাখার জায়গাও যেন থাকে, দেখতে বলা হয়েছে।
ক্লাসের বেঞ্চ নিয়ে নতুন ভাবনা-চিন্তার সময়েই কেরলে আবার গোল বেধেছে স্কুলে পঠন-পাঠনের সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে ঘিরে। সরকার পরিচালিত এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত সব স্কুলে অষ্টম শ্রেণির পর থেকে উঁচু ক্লাসে পঠন-পাঠনের সময় আধ ঘণ্টা করে বাড়ানো হয়েছে। শুক্রবার বাদে অন্য দিন ক্লাস শুরু হবে আগেকার চেয়ে ১৫ মিনিট আগে, শেষও হবে ১৫ মিনিট পরে। মোট ৭টি শনিবারেও ক্লাস চলবে। স্কুল শিক্ষার উপরে একটি কমিটি রিপোর্ট জমা দেওয়ার পরে কেরলহাই কোর্ট এমন পরামর্শ দিয়েছিল। স্কুলে সময়ে এই পরিবর্তনের জেরে মাদ্রাসার ক্লাসে অসুবিধা হবে, এই যুক্তি দেখিয়ে প্রতিবাদে নেমেছে মুসলিম লিগ এবং আরও কিছু মুসলিম সংগঠন। তিরুঅনন্তপুরমে রাজ্য সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভেরও ডাক দেওয়া হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী শিবনকুট্টি বলেছেন, ‘‘শিক্ষার অধিকার আইন মেনে মোট ১২০০ ঘণ্টা ক্লাসের সময় নিশ্চিত করতে বলেছে হাই কোর্ট। এই নিয়ে বিতর্ক করার অবকাশ নেই। তবে যাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)