Advertisement
E-Paper

ব্রহ্মপুত্র বোর্ড ভাঙার আর্জি গগৈয়ের

রাজ্যের মত না নিয়ে ব্রহ্মপুত্রের উজানি অংশে বা তার কোনও উপনদীতে বাঁধ গড়ার সিদ্ধান্ত না নিতে অনুরোধ জানালেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। পাশাপাশি, দিল্লিতে ব্রহ্মপুত্র বোর্ডের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মূল্যায়ন বোর্ডের অষ্টম বৈঠকে অংশ নিয়ে গগৈ বর্তমান ব্রহ্মপুত্র বোর্ডকে ভেঙে দ্রুত ‘নর্থ-ইস্ট ব্রহ্মপুত্র রিভার রিজুভেনেশন অথরিটি’ গড়তে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী উমা ভারতীকে আর্জি জানান।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৫ ০২:৫৬
উমা ভারতীর সঙ্গে বৈঠকে তরুণ গগৈ। নয়াদিল্লিতে।— নিজস্ব চিত্র।

উমা ভারতীর সঙ্গে বৈঠকে তরুণ গগৈ। নয়াদিল্লিতে।— নিজস্ব চিত্র।

রাজ্যের মত না নিয়ে ব্রহ্মপুত্রের উজানি অংশে বা তার কোনও উপনদীতে বাঁধ গড়ার সিদ্ধান্ত না নিতে অনুরোধ জানালেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। পাশাপাশি, দিল্লিতে ব্রহ্মপুত্র বোর্ডের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মূল্যায়ন বোর্ডের অষ্টম বৈঠকে অংশ নিয়ে গগৈ বর্তমান ব্রহ্মপুত্র বোর্ডকে ভেঙে দ্রুত ‘নর্থ-ইস্ট ব্রহ্মপুত্র রিভার রিজুভেনেশন অথরিটি’ গড়তে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী উমা ভারতীকে আর্জি জানান। সংসদের আগামী অধিবেশনে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব পেশ করার বিষয়ে তাঁর মন্ত্রক চিন্তাভাবনা করবে বলে আশ্বাস দেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উমা। গগৈ বলেন, ‘‘ব্রহ্মপুত্র বোর্ডের কাছে আমাদের অনেক আশা ছিল। ব্রহ্মপুত্র ও বরাক উপত্যকায় সমীক্ষা চালিয়ে বোর্ড বন্যা ও ভূমিক্ষয় নিয়ন্ত্রণে ৪৩টি মাস্টার প্ল্যান জমা দিয়েছে। কিন্তু, গত তিন দশকে নিকাশি বিকাশ প্রকল্প এবং মাজুলি ও ঢোলায় কয়েকটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প ছাড়াই কিছুই রূপায়িত হয়নি।’’ গগৈ দাবি তোলেন, ব্রহ্মপুত্রের বন্যা নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি তার জলকে বিভিন্ন উপায়ে কাজে লাগিয়ে সামগ্রিক বিকাশের চিন্তা করা হোক।

কেন্দ্র সরকার প্রকল্প রূপায়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্যের প্রদেয় অর্থের অনুপাত ৭০:৩০ করেছে। গগৈ জানান, সে জন্য রাজ্যের উপরে অতিরিক্ত বোঝা চেপেছে। যা বহন করার ক্ষমতা উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির নেই। তাই, বর্তমান নিয়ম বাতিল করে আগের নিয়ম লাগু করা হোক। অসমের মুখ্যমন্ত্রী জানান, একাদশ পরিকল্পনায় রাজ্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণে যে ১০০টি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল, সেগুলির কাজ প্রায় শেষ। কিন্তু, কেন্দ্র এখনও তার প্রদেয় ২৫০ কোটি টাকা দেয়নি। তা ছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য ৪১টি নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সেই বাবদ ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষের জন্য রাজ্য সরকার তার ভাগের ২৯০ কোটি টাকা দিলেও কেন্দ্রের প্রদেয় প্রথম কিস্তিই আসেনি।

গগৈয়ের অভিযোগ, প্রকল্প জমা দেওয়া ও অর্থ বরাদ্দের মধ্যে অন্তত দেড় বছর সময় লাগছে। যার মধ্যে পরিস্থিতি ও খরচ বদলে যাচ্ছে। তাই বন্যা ও ভূমিক্ষয় নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাবে দ্রুত মঞ্জুরি দেওয়া হোক। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, ব্রহ্মপুত্র ও বরাকের যে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়েছিল তা ১৯৮৫-৮৮ সালের সমীক্ষার ভিত্তিতে। মাজুলির ক্ষেত্রে বন্যা নিয়ন্ত্রণের মাস্টার প্ল্যান ২০০০ সালের সমীক্ষাভিত্তিক। কিন্তু, নদের গতিপথ, চরিত্রে বিস্তর বদল হয়েছে। তাই, নতুন করে সমীক্ষা চালানো ও মাস্টার প্ল্যানের মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

উমা ভারতীকে তিনি জানান, রাজ্যে ভূমিক্ষয়ই সমস্যা। ইতিমধ্যে ৪.২৭ লক্ষ হেক্টর জমি নষ্ট হয়েছে। যাঁরা জমি হারিয়েছেন, তাঁরা কী ভাবে জমির ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন তা নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে।

উত্তর-পূর্বের পাহাড়ি যে অংশ থেকে নদীতে জলপ্রবাহ নামে সেখানে ভূমি সংরক্ষণ, অরণ্যায়ন, পলি তোলা নিয়েও প্রকল্প তৈরি করতে হবে। বিশেষ করে অরুণাচল, ভুটানে হড়পা বানের ফলে অসমের জিয়াঢল, ঘাই, বেকি, কুন্ডিল নদীগুলিতে যে ভাবে বন্যা হয় তা নিয়ন্ত্রণের উপায়ও ভাবতে হবে। গগৈ কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানান, ব্রহ্মপুত্রের যে সব উপনদীতে স্টোরেজ বাঁধ গড়ার পরিকল্পনা করা হবে, সব ক্ষেত্রেই বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

সিয়াং বা ব্রহ্মপুত্রের কোনও উপনদীতে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়তে গেলে নামনি অংশে তার প্রভাব যাচাই করতে হবে। অসমের মতামত নিয়ে তবেই যেন কেন্দ্র এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয়। উপনদীগুলি একাধিক রাজ্যের মধ্যে প্রবাহিত হওয়ায় এ ক্ষেত্রে নদী আইন অক্ষরে-অক্ষরে মেনে চলতে হবে। চিনে বড় বাঁধ গড়ার ফলে ব্রহ্মপুত্রে কী প্রভাব পড়তে পারে তার সমীক্ষা করতে হবে। তাঁর আরও পরামর্শ, অবিলম্বে ভুটানকে সঙ্গে নিয়ে উত্তর-পূর্বে বন্যা সতর্কতা ব্যবস্থা ও জল বন্টন তথ্যের আদান-প্রদান চালু করা দরকার।

ভূমিক্ষয় জরিপে রিমোট সেন্সিং ও জিআইএস প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হোক। ব্রহ্মপুত্র ও বরাকের মূল নদী ও উপনদীগুলির উজানিতে স্টোরেজ রিজার্ভার গড়ার বকেয়া কাজ গুলি দ্রুত সারতে হবে।

নয়াদিল্লিতে ওই বৈঠকে কোকরাঝাড়ে পাগলাদিয়া বাঁধ প্রকল্প বাতিল করার আগে পূনর্বিবেচনারও আবেদন জানান গগৈ।

north east brahmaputra rejuvenation authority brahmaputra board tarun gogoi uma bharati gogoi uma meeting
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy