Advertisement
E-Paper

বাজেটের পর ব্যক্তিগত কর, বিনিয়োগের হিসেবটা কোথায় দাঁড়াল

বহু তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা, আশা-আকাঙ্ক্ষার পরে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনের দুপুরে অবশেষে সাঙ্গ হল চলতি অর্থবর্ষের সব থেকে বড় উৎসবের পালা।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ২০:৫৫

সপ্তাহ দুয়েক ধরেই চড়েছিল প্রত্যাশার পারদ। বহু তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা, আশা-আকাঙ্ক্ষার পরে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনের দুপুরে অবশেষে সাঙ্গ হল চলতি অর্থবর্ষের সব থেকে বড় উৎসবের পালা। কী হবে এ বারের বাজেটে, তা জানতে সকাল থেকেই রিমোট হাতে টিভি-র সামনে বসেছিল আপামর জনতা। প্রত্যেকের প্রশ্ন ছিল একটাই। জেটলির ঝুলি থেকে কী বের হতে চলেছে!

শেষ পর্যন্ত জেটলির ব্রিফকেস থেকে যা বের হলো তা এইরকম-

এক: সকলেরই নজর ছিল আয়করের কী পরিবর্তন হয় তার উপর। কিন্তু জেটলির বাজেটে সেই ভাবে কোনও পরিবর্তনই দেখা গেল না। যার ফলে হয়তো হতাশ হলেন বহু কর্মচারীই।

২.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত

২.৫ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত

৫ লক্ষ থেকে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত

১০ লক্ষ টাকার উপরে

নেই

৫ শতাংশ

২০ শতাংশ

৩০ শতাংশ

দুই: শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে ৪ শতাংশ সেস

স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা সেস ৩ শতাংশ থেকে বেড়ে চলতি অর্থবর্ষে গিয়ে দাঁড়াল ৪ শতাংশে। দেশের গ্রামীণ এবং দারিদ্র সীমারেখার নীচে থাকা মানুষদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলিকে আরও জোরদার করার লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ বলে জানালেন জেটলি। পাশাপাশি এই প্রচেষ্টার ফলে অতিরিক্ত ১১,০০০ কোটি টাকা সরকারের ঘরে আসবে।

আরও পড়ুন: গরিবকে বিমা, কর্পোরেটকে ছাড়, মধ্যবিত্ত কী পেল? দেখে নিন বিশ্লেষণ

তিন: চাকুরিজীবীদের জন্য ৪০,০০০ টাকা পর্যন্ত ছাড়

বেতনভোগী কর্মচারীদের জন্য সুখবর। চলতি অর্থবর্ষে মিলবে ৪০,০০০ টাকা পর্যন্ত স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন। অর্থাৎ মূল বেতন কোনও কর্মচারী এ বার ৪০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়কর বাঁচাতে পারেন। ২০০৫-২০০৬ এর কেন্দ্রীয় বাজেটে এই বিষয়টিকে বাতিলের খাতায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল। এ বারের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হল সেই পুরনো সিন্ধান্তই। এই সিদ্ধান্তের ফলে বেতনভোগী কর্মচারীদের আয়করের দায় কমে যাবে। অবশ্য অন্য দিকে কর্মচারীদের পরিবহণ খরচা বাবদ ১৯,২০০ টাকা এবং মেডিক্যাল খরচা বাবদ ১৫,০০০ টাকার আয়কর ছাড়ের বিষয়টি উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: মধ্যমেধার বাজেট পেশ করলেন জেটলি

চার: ইক্যুয়িটি মিউচুয়াল ফান্ডের উপরে ডিভিডেন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কর

নতুন বাজেটে মিউচুয়াল ফান্ডের উপর ১০ শতাংশ কর বসিয়েছেন জেটলি। এখনও পর্যন্ত ইক্যুয়িটি মিউচুয়াল ফান্ডের উপরে কোনও ডিভিডেন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কর প্রযোজ্য ছিল না। এই পদক্ষেপ সেই সমস্ত বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করবে. যাঁরা ইক্যুয়িটি ফান্ডের লভ্যাংশের উপর নির্ভর করেন। তাঁদের 'ইন হ্যান্ড' আয় আগের তুলনায় অনেকটাই কমে যাবে।

পাঁচ: ইপিএফ-এ সরকারের ১২ শতাংশ

এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্থাৎ ইপিএফ-এর অধীনে আসা নতুন কর্মীদের ক্ষেত্রে সরকারের তরফে দেওয়া হবে ১২ শতাংশ। এই সুবিধা কেবলমাত্র পাবেন ইপিএফ-এর আওতায় আসা নতুন কর্মীরা, তিন বছরের জন্য। পাশাপাশি চাকরিতে নতুন যোগ দেওয়া মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রথম তিন বছরের জন্য ইপিএফ খাতে ১২ শতাংশের জায়গায় কাটা হবে ৮ শতাংশ। ফলে সেই সমস্ত মহিলাকর্মী বাড়িতে বেশি টাকা নিয়ে যেতে পারবেন।

আরও পড়ুন: হতাশার বাজেট: মমতা, আর একটা বছর: রাহুল

ছয়: স্বাস্থ্য প্রকল্প

'আয়ুষ্মান ভারত' প্রকল্পের অংশ হিসেবে দু'টি উদ্যোগ ঘোষণা করা হয়েছে নতুন বাজেটে।

• জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রকল্প: এই প্রকল্পের আওতায় থাকা প্রতিটি পরিবারকে বার্ষিক ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবিমা প্রদান করবে সরকার। এর ফলে প্রায় ১০ কোটি পরিবার উপকৃত হবে। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন এটিই এখনও পর্যন্ত বিশ্বের সবথেকে বড় স্বাস্থ্য সেবা প্রকল্প।

• স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণ: সারা দেশ জুড়ে প্রায় দেড় লক্ষ স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এই কেন্দ্রগুলি বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করবে এবং মানুষের চিকিৎসা করবে। এই প্রকল্পের খাতে ১২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

সাত: আরও বেশি এক্সচেঞ্জ ট্রেডিং ফান্ড

ভারত-২২ এক্সচেঞ্জ ট্রেডিং ফান্ডের সফলতার পরে, বিনিয়োগকারীরা আরও এক্সচেঞ্জ ট্রেডিং ফান্ডের আশা করতে পারেন। বিনিয়োগ এবং পাবলিক অ্যাসেট বিভাগ ম্যানেজমেন্ট এই বছরের শেষে আরও ইটিএফ অফার চালু করতে পারে। যার মধ্যে ঋণ অন্তর্ভুক্ত ইটিএফ-ও রয়েছে।

আরও পড়ুন: ২৪টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণের প্রস্তাব বাজেটে

আট: সোনা সংক্রান্ত ঘোষণা

সাধারণ মানুষ যাতে সোনাকে অ্যাসেট অর্থাৎ সম্পত্তি রূপে ধরে রাখতে পারেন, সেই কথা মাথায় রেখে বেশ কতগুলি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এই বাজেটে। খুব শীঘ্রই উপভোক্তাবান্ধব এবং বাণিজ্যে দক্ষ একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে যা সোনা এক্সচেঞ্জে সাহায্য করবে। পাশাপাশি একটি স্বর্ণ নগদীকরণ প্রকল্পও চালু করবে সরকার।

প্রত্যেক বছরের বাজেটেই ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক থাকে। কিন্তু এই বছরের বাজেটে নেতিবাচকের তুলনায় ইতিবাচক দিকটাই বেশি। বেতনভোগী কর্মচারীদের জন্য স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশনের হার বৃদ্ধি এবং ১২ শতাংশ ইপিএফ সত্যিই এই বাজেটের একটি প্লাস পয়েন্ট। যদিও ব্যক্তিগত আয়ের ক্ষেত্রে আয়কর ছাড়ের কোনও পরিবর্তন না হওয়ায় হতাশ হয়েছেন বহু মানুষ।

Tax deductions Investment Union Budget Central Budget Budget 2018 Personal Finance
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy