Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
খনিবন্দির সংখ্যা বেড়ে ১৬

একটা আঙুল হলেও চলবে! আর্তি স্বজনের

নৌসেনার রিমোট চালিত যানের ক্যামেরায় ধরা পড়ছে গলিত দেহের ছবিটা। ঘোলা জলে দেহটা খানিকটা তোলার চেষ্টা করতেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল থাই থেকে হাঁটু।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:২৮
Share: Save:

নৌসেনার রিমোট চালিত যানের ক্যামেরায় ধরা পড়ছে গলিত দেহের ছবিটা। ঘোলা জলে দেহটা খানিকটা তোলার চেষ্টা করতেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল থাই থেকে হাঁটু। পা থেকে আঙুলগুলোও খসে পড়ছে। শিউরে মুখ ফিরিয়ে নিলেন মানিক আলি। চোখ নামান প্রেসমেকি দখার ও অ্যালেক দখার। উদ্ধারকাজ তদারক করা এনডিআরএফের সহকারী কম্যান্ডান্ট সন্তোষকুমার সিংহও মুখ ফেরান অন্য দিকে।

ওই দেহ কার, কেউ জানেন না। বাকি দেহগুলির কী অবস্থা হয়েছে— তা সকলেই বুঝে গেলেন। বুঝে গেলেন, মৃতদেহ বলতে যা বোঝায়, তেমন কিছু উদ্ধারের কোনও আশা নেই। কিন্তু তার পরেও প্রশাসনের কাছে পরিবারগুলির কাতর আর্তি: শরীরের একটা আঙুল হলেও উদ্ধার করে দিন। কিছু তো একটা কফিনবন্দি করতে হবে!

মেঘালয়ে কসানের খনিতে জল ঢুকে শ্রমিকরা আটকে পড়ার পরে উদ্ধারকাজে প্রথম হাত লাগিয়েছেন সন্তোষ ও তাঁর দল। তিনি বলেন, ‘‘দেহ উদ্ধারের আশা কম। ৩৬ দিন ধরে তল্লাশি চলছে। এত দিন গভীর জলের তলায় থাকলে মানুষের দেহের কী অবস্থা হতে পারে অনুমান করছিলাম। কিন্তু দেহের ওই অবস্থা নিকটাত্মীয়দের দেখাতে কার ভাল লাগে!’’ সেই সঙ্গে সন্তোষ জানালেন, আরও সমস্যা হবে এই অবস্থায় দেহাংশগুলি উদ্ধার করা। রিমোটে চলা যান আজ কোনও দেহের ছবি পায়নি। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, দেহাংশের নমুনা ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে ঠিকই। কিন্তু ২০০ ফুট জলের তলা থেকে সব শ্রমিকের দেহাংশ পৃথক ভাবে উদ্ধার করা ও শনাক্ত করার কাজটা অত্যন্ত জটিল।

খনিতে আটকে পড়া শ্রমিকদের তিন জন চিরাংয়ের। মনিরুল ইসলাম, আমির হুসেন, সাহের ইসলাম। মনিরুলের ভাই মানিক আলি ঘটনাস্থল থেকে নিজের ও বাকিদের বাড়িতে ফোন করে দেহের অবস্থা জানান। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ছবি দেখে বুঝতে পেরেছি কিছুই উদ্ধার করে লাভ নেই। কিন্তু বাবা-মায়েদের তা বোঝানো সম্ভব নয়। তাই জানিয়ে এসেছি একটা আঙুল হলেও তিন জনের চিহ্ন উদ্ধার করে দিতেই হবে। তাই নিয়েই হবে জানাজা।’’ মানিক নিজেও খনি শ্রমিক ছিলেন। তাঁর আর্তি, ‘‘২৪ ঘণ্টা পাম্প চালানো হোক। পাম্প থামালে জল ফের ঢুকবেই। ঠিক মতো জল বার করলে হয়তো ভাইয়ের দেহটা পেতাম।’’ লামথারির বাসিন্দা ডিমনমে, মেলামবক ও সালাভাস দখারের পরিবারও দাবি করে, দেহের একটা হাড় মিললেও চলবে। রীতি মেনে কফিনবন্দি করে অন্ত্যেষ্টি তো সারতেই হবে।

হোজাইয়ের লংকা থেকে এসেছেন আমিনুল উদ্দিন। তিনি নিজেও ওই খনিতেই কাজ করতেন। পঞ্চায়েত ভোটের জন্য হোজাইয়ে ফিরেছিলেন। তাঁর ভাই কুটি মিঁয়া খনিতে আটকে। কিন্তু ঘটনাস্থলে এসে তিনি অবাক। রাজ্য সরকার আটকে পড়া যে ১৫ জন শ্রমিকের নাম প্রকাশ করেছে, তার মধ্যে ভাইয়ের নাম নেই। তাই অন্তর্বর্তিকালীন ক্ষতিপূরণও পাচ্ছে না কুটি মিঁয়ার পরিবার। ভাইয়ের খনিতে কাজ করার সব তথ্য ও পরিচয়পত্র-সহ আজ আবেদন জানালেন আমিনুল। ফলে আটক শ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে ১৬ হল।

আজও বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের সাহায্যে খনি এলাকায় মাটির নীচের ভূতাত্ত্বিক গঠন ও সুড়ঙ্গের অবস্থান জরিপের কাজ চলে। চলছে সনার ও গ্রাভিটি সার্ভে। ওড়িশা দমকলের পাম্পগুলি তুলে ছোট রিমোট চালিত যানগুলিকে গুহার ভিতরে তল্লাশি চালানোর জায়গা করে দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE