জঙ্গি হামলার পরে সেনাবাহিনীর তৎপরতা। রবিবার উরির সেনা ঘাঁটিতে। ছবি: পিটিআই
অশান্ত কাশ্মীরের উরি সেনাঘাঁটিতে জঙ্গি হামলায় ১৭ জন জওয়ানের মৃত্যু দেশের গোয়েন্দা ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে আরও একবার বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিল।
ঘটনাটি বিশ্লেষণ করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কর্তাদের ধারণা, উরি সেনাঘাঁটির ভিতরের খবরাখবর আগেভাগেই জানত জঙ্গিরা। উত্তর কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে ওই ঘাঁটিতে দায়িত্ব হাতবদল হচ্ছে। সেনার ১০ ডোগরা রেজিমেন্টকে সরিয়ে ৬ বিহার রেজিমেন্টের জওয়ানরা ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ হাতে নিচ্ছেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কর্তাদের মতে, এই দায়িত্ব বদলের সময়ে হামলা চালালেই সব চেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটানো সম্ভব। স্পষ্টতই সে কথা জানত জঙ্গিরা। ঘাঁটির মধ্যে নতুন জওয়ানরা কোথায় আস্তানা গেড়েছেন, কোথায় ডিজেল মজুত করা হয়েছে, তা আগে থেকে চিহ্নিত করেই হামলার পরিকল্পনা হয়। প্রাক্তন সেনাপ্রধান শঙ্কর রায়চৌধুরীর মতে, ভারতীয় সেনার মধ্যে চর ধরার ব্যবস্থা (কাউন্টার ইনটেলিজেন্স) দুর্বল হয়ে পড়েছে।
সেনা সূত্র বলছে, রবিবার ভোরে উরির যে সেনাঘাঁটিতে হামলা হয়েছে, নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে তার দূরত্ব মাত্র ছয় কিলোমিটার। এই ঘাঁটিটি সেনার দ্বাদশ ব্রিগেডের অধীন। সেনাদের যে শিবিরে হামলা হয়েছে, সেটি ব্রিগেড সদর দফতরের ঠিক পিছনেই। উরির এই ঘাঁটিটির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হল এর ভৌগোলিক অবস্থান। ওই এলাকার চেহারা অনেকটা গামলার মতো। যে গামলার একেবারে নীচের অংশে রয়েছে উরির সেনাঘাঁটি। নিয়ন্ত্রণরেখার উল্টো দিকে পাকিস্তানের এলাকা হল উঁচুতে। যেখান থেকে চাইলে উরির সেনাঘাঁটির উপরে নজরদারি চালানো সম্ভব।
আর ঠিক এই কারণেই উরির হামলার পিছনে পাকিস্তানি সেনা ও আইএসআই-এর প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন এ দেশের সেনা অফিসাররা। তাঁদের যুক্তি, নিয়ন্ত্রণরেখার ওপার থেকে যথেষ্ট সময় নিয়েই পাকিস্তানি সেনা ও আইএসআই নজরদারি চালিয়েছে। উরির ঘাঁটিতে যে বাহিনী বদল হচ্ছে, তা দেখেই জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গিদের পাঠানো হয়। নিয়ন্ত্রণরেখার ওপার থেকে পাক সেনা ও আইএসআই অফিসাররাই তাদের নিয়ন্ত্রণ করছিল। শনিবার রাতেই ৬ বিহার রেজিমেন্টের অ্যাডভান্স পার্টির ৬০ থেকে ৮০ জন জওয়ান সেনাঘাঁটিতে ঢোকেন। মূলত তাঁবু ও অস্থায়ী শিবিরে ওই জওয়ানদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল। ওই ঘাঁটিতে এই জওয়ানরা নতুন। তাই আচমকা হামলায় যে তাঁরা হকচকিয়ে যাবেন তা বুঝতে পেরেছিল জঙ্গিরা। রবিবার ভোরে সেনা জওয়ানরা যখন ক্লান্ত শরীরে ঘুমোচ্ছেন, সে সময়ই হামলা চালানো হয়। তাঁবুর উপরে বোমা ও গ্রেনেড ফেলা হয়। তার আগে তাঁবুর কাছেই মজুত করে রাখা ডিজেলে আন্ডার ব্যারেল গ্রেনেড লঞ্চার থেকে গ্রেনেড ছোড়া হয়। ডিজেলের জন্য দ্রুত সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তাঁবু থেকে বেরিয়ে আসার সময়ই জওয়ানদের উপর একে-৪৭ থেকে গুলি বৃষ্টি শুরু হয়। অনেকে আহত হয়ে পড়ে যাওয়ায় তাঁদের শরীরে আগুন ধরে যায়। ১৭ জন নিহত জওয়ানের মধ্যে ১৩-১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে আগুনে পুড়ে। আহতদের অনেকেও যথেষ্ট দগ্ধ হয়েছেন।
প্রশ্ন উঠেছে, পাকিস্তানের দিক থেকে হামলার বিশদ পরিকল্পনা হলেও ভারতীয় গোয়েন্দারা তার কিছুই টের পেলেন না কেন? বিশেষত যখন কাশ্মীরে লাগাতার গোলমালের জেরে সেখানে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে? প্রাক্তন সেনাপ্রধান শঙ্কর রায়চৌধুরীর মতে, পাক সেনা ও জঙ্গি সংগঠনের মধ্যে ভারতীয় গোয়েন্দাদের চর এখন আর আদৌ আছে কি না সেটাই সন্দেহের বিষয়। আবার ভারতীয় সেনার মধ্যে শত্রুর চর আছে কি না তাও ঠিক মতো ধরা যাচ্ছে না বলেই মনে করেন তিনি। ফলে বারবার আঘাত হানার সুযোগ পাচ্ছে পাক জঙ্গিরা।
যদিও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কর্তাদের দাবি, উরি সেক্টরে জঙ্গি অনুপ্রবেশের বিষয়ে ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বরই সতর্ক করা হয়েছিল। এর পর ১৫ সেপ্টেম্বরও আত্মঘাতী হামলার বিষয়ে সতর্ক করা হয়। ফিদায়েঁ জঙ্গিদের হামলার পাশাপাশি পাকিস্তানের ব্যাট (বর্ডার অ্যাকশন টিম)-এর একটি দল উরিতে ঢুকে হামলা চালাতে পারে বলেও গোয়েন্দা বার্তায় জানানো হয়েছিল। উল্টো দিকে সেনা কর্তাদের দাবি, নির্দিষ্ট ভাবে কোথায় কখন হামলা হবে, তা ওই বার্তায় বলা ছিল না।
সেনা কর্তাদের মতে, যে চার জঙ্গি হামলা চালিয়েছে তারা সকলেই কম্যান্ডো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। নিহত জঙ্গিদের কাছ থেকে উরি ঘাঁটির মানচিত্র উদ্ধার রয়েছে। যেখানে পাখতুন ভাষায় বিভিন্ন জায়গা চিহ্নিত করা রয়েছে। অনুপ্রবেশের জন্য ওই এলাকার একটি নালাকে জঙ্গিরা কাজে লাগিয়েছিল বলে গোয়েন্দাদের ধারণা। সেনা কর্তারা বলছেন, উরির ভৌগোলিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এর আগেও, ২০১৪-র ডিসেম্বরে এখানকার মহুরা ঘাঁটিতে হামলা হয়েছিল। সেই হামলাতেও নিরাপত্তা বাহিনীর ১০ জওয়ান নিহত হন।
রাইফেল ছিনতাই
জম্মু-কাশ্মীরের অনন্তনাগে পিডিপি নেতা জাভেদ আহমেদের রক্ষীদের রাইফেল ছিনতাই করল জঙ্গিরা। পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার রাতে অনন্তনাগের দিয়ালগামে এই ঘটনা ঘটেছে। জঙ্গিদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে যৌথ বাহিনী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy