Advertisement
E-Paper

কেন কাটল কল্যাণের হাত? মোদী সরকারের ওয়াকফ বিলের কোন কোন বিষয় নিয়ে আপত্তি বিরোধীদের

১৯৫৪ সালে প্রথম ওয়াকফ আইন পাশ হয়েছিল। ১৯৯৫ সালে ওয়াকফ আইনে সংশোধনী এনে ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছিল। তার পর থেকেই বিজেপির তরফে বার বার এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৪ ১৭:১৯

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

সোমবারেই ওয়াকফ বিল সংক্রান্ত যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি)-র বৈঠকে সরকারি আমলাদের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলে জেপিসি বৈঠকে নতুন ওয়াকফ বিলের খসড়া নিয়ে তুমুল অশান্তি জেরে ভাঙা কাচে হাত কাটল তাঁর। পড়ল ছ’টি সেলাই।

শুধু কল্যাণ নন, কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, আম আদমি পার্টি (আপ), আরজেডি, ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’ (মিম)-এর মতো বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতারা ইতিমধ্যেই নরেন্দ্র মোদী সরকারের ওই বিলের বিরোধিতায় সরব হয়েছে। তাদের অভিযোগ, ৪৪টি সংশোধনী এনে কেন্দ্র আসলে ওয়াকফ বোর্ডের উপর সরকারি কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ করতে চাইছে সরকার। সংসদের দুই কক্ষে পাশ হলে আইনটির নতুন নাম হবে ‘ইউনিফায়েড ওয়াকফ ম্যানেজমেন্ট, এমপাওয়ারমেন্ট, এফিশিয়েন্সি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাক্ট’।

ওয়াকফ বিলের বিতর্কিত নানা অংশ।

ওয়াকফ বিলের বিতর্কিত নানা অংশ।

বিরোধীদের প্রবল আপত্তি ও হট্টগোলের মধ্যে গত ৮ অগস্ট লোকসভায় ওয়াকফ সংশোধনী বিল পেশ করেছিলেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। বিলটি ‘অসাংবিধানিক এবং মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপকারী’ বলে অভিযোগ তুলে বিরোধীরা একযোগে তা নিয়ে আপত্তি জানান। দীর্ঘ বিতর্কের শেষে ঐকমত্যের লক্ষ্যে বিলটি যৌথ সংসদীয় কমিটির (জেপিসি)-র কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র। বিজেপি সাংসদ জগদম্বিকা পালের নেতৃত্বাধীন জেপিসিতে শাসক শিবিরই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাই বিরোধীদের আপত্তি উপেক্ষা করেই একতরফা ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে জেপিসি।

চলতি মাসে সেই জেপিসিতে বক্তব্য পেশ করতে এসেছিলেন অশ্বিনী উপাধ্যায়, বিষ্ণুশঙ্কর জৈনের মতো আইনজীবীরা। ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় থাকা ‘সমাজতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দের অন্তর্ভুক্তির বিপক্ষে সুপ্রিম কোর্টে সওয়ালকারী সঙ্ঘ পরিবারের ওই সদস্যেরা কেন জেপিসির বৈঠকে তা নিয়ে সরব হয়েছিলেন কল্যাণ। মঙ্গলবার, বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবের একটি প্রস্তাব ঘিরে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয় শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদের। সেখান থেকেই সূত্রপাত অশান্তির।

ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরোধিতা প্রসঙ্গে মুসলিম সংগঠনগুলির যুক্তি ছিল, ওয়াকফ বোর্ডের বিভিন্ন সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যেই ওই বিল আনছে কেন্দ্র। জমিয়তে ইসলামি হিন্দ এবং অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের মতো প্রধান মুসলিম সংগঠনগুলির মতে, গেরুয়া শিবির দীর্ঘ সময় ধরেই দিল্লি-সহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ওয়াকফ সম্পত্তি দখল করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। সেই কারণেই তড়িঘড়ি পাশ করাতে চাইছে সংশোধনী বিল। যদিও কেন্দ্রের যুক্তি ছিল, খোদ মুসলিম সমাজের গরিব এবং মহিলারা নিজেরাই নাকি এত দিন ওয়াকফ আইন সংস্কারের দাবি জানাচ্ছিলেন। তার পরেও থামেনি সমালোচনা।

বর্তমান ওয়াকফ আইনের ৪০ নম্বর ধারা অনুযায়ী, যে কোনও সম্পত্তিকে ওয়াকফ হিসাবে ঘোষণার অধিকার এত দিন ছিল ওয়াকফ বোর্ডের হাতেই। ফলে ওয়াকফ বোর্ডের বিরুদ্ধে বার বার বহু গরিব মুসলিমের সম্পত্তি, অন্য ধর্মাবলম্বীদের ব্যক্তির সম্পত্তি অধিগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। নতুন সংশোধনীতে ওয়াকফ বোর্ডের সেই একচ্ছত্র অধিকার কেড়ে নিয়ে কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ কি না, সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হবে জেলাশাসক বা সমপদমর্যাদার কোনও আধিকারিকের হাতে।

বর্তমানে যে আইন রয়েছে, তাতে ওয়াকফের দখল করা জমি বা সম্পত্তিতে কোনও ভাবেই পর্যালোচনা করার সুযোগ থাকে না। কারও আপত্তি সত্ত্বেও জমি বা সম্পত্তি দখল করতে পারে ওয়াকফ বোর্ড। তাতে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ থাকে না সরকারের। নতুন বিলে তার বন্দোবস্ত রয়েছে। যা নিয়ে আপত্তি উঠেছে। এ ছাড়া রয়েছে, একটি কেন্দ্রীয় পোর্টালের মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তির নথিভুক্তিকরণ নিয়ন্ত্রণ করার প্রস্তাব। প্রসঙ্গত, ১৯৫৪ সালে প্রথম ওয়াকফ আইন পাশ হয়েছিল। ১৯৯৫ সালে ওয়াকফ আইনে সংশোধনী এনে ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছিল। তার পর থেকেই বিজেপির তরফে বার বার প্রশ্ন তোলা হয়েছে ‘বোর্ডের একচ্ছত্র অধিকার’ নিয়ে।

Waqf Bill Waqf Board JPC Kalyan Banerjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy